ইলিশের প্রতি মানুষের যে দুর্বলতা তা থেকেই ভালোমতো বোঝা যায় কেন একে জাতীয় মাছ বলে রায় দেয়া হয়েছে। স্বাদে অনন্য এই মাছ পুষ্টিগুণেও অন্যান্য মাছকে হার মানাতে পারে সহজে। প্রোটিনের উৎস ইলিশ। অবশ্য সব মাছই প্রোটিনের জোগান দেয়। কিন্তু ইলিশ অনেক রোগেরই প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। আসুন জেনে নেই ইলিশ খেলে কি কি উপকার হতে পারে আপনার।
রক্ত সঞ্চালন ও হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
ইলিশ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডে সমৃদ্ধ। সচরাচর এই উপাদানটি সামুদ্রিক মাছে বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড নিউরোনাল, রেটিনা ও ইমিউনাল ফাংশন থেকে শুরু করর ভ্রূণের বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এমনকি কার্ডিওভাস্কুলার ফাংশনের উন্নতি ঘটাতেও ইলিশের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। এরফলে দেহের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি হয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। হৃদপিণ্ডের সুস্থতার ক্ষেত্রেও ইলিশের গুরুত্ব অপরিসীম।
জিংক
এই করোনায় জিংকের গুরুত্ব প্রায় সকলেই অনুধাবন করতে পেরেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জিংক সমৃদ্ধ খাবারের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। জিংক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ইলিশে জিংকের পাশাপাশি ক্রোমিয়াম ও সেলেনিয়ামের প্রাধান্য আছে। এই উপাদানগুলো ইমিউন সিস্টেমকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া কিংবা ভাইরাসের সাথে লড়াই করার ক্ষমতা প্রদান করে। এমনকি কোষের মূল উপাদান ডিএনএ এবং প্রোটিন উৎপাদনে জিংকের অবদান আছে।
গর্ভাবস্থায় জিংক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গর্ভাবস্থা, শৈশব, এবং সঠিক শারীরিক বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণে জিংক প্রয়োজন। সেলেনিয়াম দেহে বিশেষ ধরণের প্রোটিন অর্থাৎ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এনজাইম তৈরিতে সহায়তা করে। কোষের ক্ষয়রোধে এই এনজাইম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে
আর্থ্রাইটিস রোধে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের অবদান আছে। মূলত ইমিউন মডুলেটরি বৈশিষ্ট্যের কারণে তারা প্রদাহের লিপিড মধ্যস্থতাকারীর অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে। এভাবে এই উপাদান প্রদাহজনক রিয়েকশনকে নিয়ন্ত্রণ করে বাতের ব্যথা সারাতে পারে। বাতের রোগীরা ইলিশ খেলে নানাভাবে উপকৃত হতে পারেন।
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
ভিটামিন এ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে৷
ইলিশকে অনেকে ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের পাওয়ার হাউজ বলেও আখ্যা দেয়। ইলিশ মূলত জিংক, প্রোটিন, সেলেনিয়াম, আয়োডিন, পটাশিয়াম ইত্যাদি উপাদানে ভরপুর।
ফুসফুসের সুস্থতা
গবেষণায় দেখা যায়, সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের সুস্থতায় ব্যাপক অবদান রাখে। ইলিশেরও শিশুদের হাঁপানি সারানোর ক্ষমতা রয়েছে। বিশেষত যাদের ফুসফুসের রোগ রয়েছে তাদের সপ্তাহে অন্তত একবার ইলিশ খাওয়া উচিত।
ডিপ্রেশন রোধে
ইলিশে আর্জিনিন নামে একটি অ্যামিনো এসিড পাওয়া গেছে। এই উপাদানটি প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে। তবে একটি গবেষণায় জানা গেছে, আর্জিনিন মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজ-অর্ডার (এমডিডি) প্রতিরোধ কার্যকর। নিয়মিত ইলিশ খেলে ডিপ্রেশনও কমতে পারে।
সর্দি কাশি ও ক্যান্সারের চিকিৎসায়
আবার সেই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। এই উপাদানটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। সাধারণ সর্দি বা কাঁশি থেকে বাঁচাতেও ইলিশের অবদান আছে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক