২৩
সুনামগঞ্জের হাওরে মৎস্য আহরণে ইজারা নীতিমালা ও মৎস্য আইন মানছেন না জলাশয়ের ইজারাদাররা। প্রতিবছর জলাশয় সেচে বিনাশী কার্যক্রম চালালেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে নির্বিচারে মাছের বংশ নির্বংশ হচ্ছে হাওরে। তাই হাওরে কমছে দেশি প্রজাতির মাছ।
বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতি। চলতি মৎস্য আহরণ মৌসুমে বিল সেচে মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। তবে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগের পরও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি মৎস্য বিভাগ।সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে জলমহালে মৎস্য আহরণ করা হয়।
জলমহাল না শুকিয়ে জলাশয়ে চার ফুট পানি রেখে ভাসা ভাসা জাল দিয়ে মাছ আহরণ করার প্রধান শর্তে ইজারা দেয় সরকার। কিন্তু বাস্তবে প্রকাশ্যে সেচযন্ত্র লাগিয়ে জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা হলেও কখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে জানিয়েছে হাওরবাসী। এই প্রক্রিয়ায় মাছ ধরার ফলে শুধু মাছের প্রজাতিই ধ্বংস হচ্ছে না অনেক জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা। অনেক ইজারাদার জলাশয় শুকানোর পর বিষ দিয়ে মাটির গর্তের ভেতরের মাছও ধরছে।
এ কারণে সম্প্রতি হাওরের স্থানীয় প্রজাতির বাইম মাছ হারিয়ে যাচ্ছে।সরেজমিন দেখা গেছে, শাল্লা উপজেলার মাউতি গরালিয়া বিল সেচে মাছ ধরছে ইজারাদারের লোকজন। উন্নয়ন প্রকল্পের এই জলাশয়টি খনন, বৃক্ষরোপণ ও পরিকল্পিত মাছ আহরণের কথা থাকলেও সেটা মানেনি তারা। এ বিষয়ে কৃষকরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া এই উপজেলার রোয়াইল বিল, ভিতর চাপ্টা বিল, বৈশাখী বিলসহ বেশ কিছু বিলে সেচযন্ত্র লাগিয়ে মাছ ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলি ইউনিয়নের কসমা বিল, ছিছরাবনি বিল, দিরাই চাতল বিল, লম্বা বিল, বালুচরা বিল, চন্দ্রগোনা বিল, দিঘা বিলসহ গুরুত্বপূর্ণ জলাশয়গুলো সেচযন্ত্র লাগিয়ে শুকিয়ে মাছ ধরেছে ইজারাদারের লোকজন। দিরাই চাতল বিল, ধর্মপাশা উপজেলার জয়ধুনা বিল, শান্তিগঞ্জের লাউগাঙ বিলে সেচযন্ত্র দিয়ে শুকিয়ে মাছ ধরা হয়েছে। এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও দিলেও কোনো কাজ হয়নি।হাওর আন্দোলনের নেতা নির্মল ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘এই মৌসুমে প্রতিদিনই জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরায় মাছ নির্বংশ হওয়ার পাশাপাশি হাওরের মূল্যবান জলজ জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে এই বিনাশী কার্যক্রম চললেও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এই অপরাধের জন্য কখনো ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কোনো শাস্তির নজির নেই হাওরে। প্রচলিত মৎস্য আইনে এই অপরাধের জন্য এক থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু কখনো এই অপরাধের জন্য এই আইনটি প্রয়োগ করা হয়নি। তবে বর্ষাকালে গরিব মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে মাছ ধরার অপরাধে ইজারাদারের স্বার্থে মাঝেমধ্যে এই আইন প্রয়োগ করা হয়।’এদিকে গত ২২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জে হাওর নিয়ে বিশেষ এক মতবিনিময়সভার আয়োজন করেছিল পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। সেখানে জলাশয় শুকিয়ে ইজারাদাররা মাছ আহরণের ফলে হাওরের মিঠা পানির মাছ ও নানা জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে বলে মতামত দেন সুধীজন। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার আফতাবনগরের কৃষক শওকত মিয়া বলেন, ‘এখন মাছ ধরার মৌসুম চলছে। কিন্তু ইজারাদাররা জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরছে। এতে হাওরের অনেক প্রজাতির স্থানীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই হাওরের মাছ কমছে এবং হাওরের বাজারগুলোতে দাম বেড়েছে।’শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক পীযুশ দাস বলেন, ‘আমাদের পাশের মাউতি গরালিয়া জলাশয় সেচ
ে মাছ ধরা হয়েছে কয়েক দিন আগে। আমরা বাধা দিলেও ইজারাদাররা মানেনি।’ সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামসুল করিম বলেন, ‘মৎস্য আইনে জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা অপরাধ। তবে এই অপরাধের জন্য সুনামগঞ্জে কখনো কোনো ইজারাদারকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার কোনো তথ্য নেই। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এই আইনের প্রয়োগ করতে হয়। তবে এই প্রক্রিয়ায় মাছ আহরণ মাছ বিলুপ্তির কারণ বলে জানান তিনি।’সূত্র: কালের কন্ঠ।
ে মাছ ধরা হয়েছে কয়েক দিন আগে। আমরা বাধা দিলেও ইজারাদাররা মানেনি।’ সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামসুল করিম বলেন, ‘মৎস্য আইনে জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা অপরাধ। তবে এই অপরাধের জন্য সুনামগঞ্জে কখনো কোনো ইজারাদারকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার কোনো তথ্য নেই। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এই আইনের প্রয়োগ করতে হয়। তবে এই প্রক্রিয়ায় মাছ আহরণ মাছ বিলুপ্তির কারণ বলে জানান তিনি।’সূত্র: কালের কন্ঠ।