গাভীর দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ও গুণগতমান জাতের ওপর নির্ভর করে। গাভীর দুধ উত্পাদনের পরিমাণ দুধের উপাদান যেমন-মাখন, আমিষ, খনিজ পদার্থ সবই বিভিন্ন জাতের গাভীতে কম-বেশি হতে পারে। বংশগত ক্ষমতার কারণ দেশীয় জাতের গাভীতে দুধের মাখনের পরিমাণ বেশি থাকে কিন্তু এরা দুধ উত্পাদন করে কম। সিন্ধি, শাহিওয়াল, হরিয়ানা জাতের গাভীর দুধে মাখন বা ননীর পরিমাণ অন্য বিদেশীয় জাতের গাভী যেমন হলস্টেন, ফ্রিজিয়ান, জার্সি ইত্যাদি জাতের গাভী সিন্ধি, শাহিওয়াল, হরিয়ানা প্রভৃতি গাভী থেকে বেশি দুধ দেয়।
খাদ্য গাভীর দুধ উত্পাদন ও দুধের গুণগতমানের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। অধিক পরিমাণ খাদ্য খাওয়ালে বেশি দুধ পাওয়া যায়। তবে খাদ্য অবশ্যই সুষম হতে হবে। গাভীকে সুষম খাদ্য না খাওয়ালে দুধ উত্পাদনের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায় এবং দধের গুণগতমানও কমতে বাধ্য। কারণ খাদ্যে বিদ্যমান উপাদানগুলো ভিন্ন অবস্থায় দুধের মাধ্যমে নিঃসৃত হয়। খাদ্যে দুধের মাখনের উপস্থিতির পরিমাণ কম-বেশি করতে পারে। নিম্নোক্ত ধরনের খাদ্যের জন্য গাভীর দুধের মাখনের হার কম হতে পারে।
১. মাত্রাতিরিক্ত দানাদার খাদ্য খাওয়ালে।
২. পিলেট জাতীয় খাদ্য খাওয়ালে।
৩. অতিরিক্ত রসালো খাদ্য খাওয়ালে এবং
৪. মিহিভাবে গুঁড়ো করা খড় খাওয়ালে।
গাভীর দুধে মাখনের পরিমাণ কমে গেলে খাদ্য পরিবর্তন করে প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে। দুধে খনিজ পদার্থ ও খাদ্যপ্রাণের পরিমাণ গাভীর খাদ্যের মাধ্যমে বাড়ানো যায়। গাভীকে সুষম খাদ্য না দিলে দুধে সামান্য মাত্রায় আমিষ ও শর্করা জাতীয় উপাদান পাওয়া যায় এবং দুধ উত্পাদনের পরিমাণ কমে যায়। দুধ দোহন বিশেষ করে দোহন কাল, দোহনের সময়, দুধ দোহন প্রক্রিয়া, বিভিন্ন বাঁটের প্রভাব ইত্যাদি গাভীর দুধের পরিমাণ ও মানকে প্রভাবিত করে। গাভীর দুধ দেয়ার পরিমাণ আস্তে আস্তে ৫০ দিনে বেড়ে সর্বোচ্চ হয়। ওলানে দুধের চাপের ওপর দুধের পরিমাণ ও উপাদান নির্ভর করে। দুগ্ধদান কালের ৯০ দিন পর থেকে দুধে মাখন ও আমিষের হার আংশিক বাড়ে। একই গাভীকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দোহন করলে দুধে মাখনের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়। তাই সকালের দুধের চেয়ে বিকালের দুধে মাখনের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই গাভীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২-৩ বার দোহন করা উচিত। এতে দুধ উত্পাদনের পরিমাণ বাড়তে পারে।
প্রসবকালে গাভীর সুস্বাস্থ্য আশানুরূপ দুধ উত্পাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাভী থেকে বেশি দুধ পেতে হলে গর্ভকালে সুষ্ঠু পরিচর্যা ও সুষম খাদ্য দেয়া প্রয়োজন। প্রসবের দুই মাস আগে গাভীর দুধ দোহন অবশ্যই বন্ধ করে দিতে হবে। মোট দুধ উত্পাদনের ৪০% ওলানের সামনের অংশের বাঁট এবং ৩০% পেছনের অংশের বাঁট থেকে পাওয়া যায়। গাভীর ওলানের বাঁট অবশ্যই সুস্থ থাকতে হবে।
রক্ষণাবেক্ষণ, বাসস্থান, গাভীর দুধ উত্পাদনের পরিমাণ ও গুণগতমানের হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী। পারিপার্শ্বিক অবস্থা গাভীর জন্য আরামদায়ক হওয়া উচিত। দোহনের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন না করলে অর্থাত্ দুধ দোহন ত্রুটিপূর্ণ হলে দুধ উত্পাদনের পরিমাণ ও গুণগতমান কমতে পারে।
প্রতিকূল আবহাওয়া দুধ উত্পাদনের জন্য ক্ষতিকর। শীত মৌসুম দুধাল গাভীর জন্য আরামদায়ক। এ মৌসুমে দুধ উত্পাদনের এবং দুধে মাখনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, গরমকাল, বর্ষাকাল, আর্দ্র আবহাওয়ায় গাভীর দুধের উত্পাদন ও গুণগতমান হ্রাস পায়। গরমের দিকে গাভীকে ঠাণ্ডা অবস্থায় রাখলে উত্পাদনের কোনো ক্ষতি হয় না। গাভীর প্রজননের সময় দুধ উত্পাদন কমে যায়।
দীর্ঘ বিরতিতে বাচ্চা প্রসব করলে গাভীর দুধ উত্পাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। স্বল্প বিরতিতে বাচ্চা প্রসবের কারণে দুধ উত্পাদন কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। তাই গাভীকে বাচ্চা প্রসবের ৬০-৯০ দিনের মধ্যে পাল দিতে হবে। কোনোক্রমেই ৬০ দিনের আগে প্রজনন করানো উচিত নয়। গাভীর শরীরে ৫০% এবং দুধে প্রায় ৮৭% পানি থাকে। তাই গাভীকে ইচ্ছামত পানি পান করার ব্যবস্থা করলে দুধ উত্পাদন বেশি হয় এবং দুধে মাখনের পরিমাণ বেশি থাকে।
সুত্র: এগ্রোবাংলা ডটকম