দেখতে অনেকটা মুরগির মতো হলেও তিতির আসলে পাখি। অত্যধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন আফ্রিকার এ পাখি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ‘চায়না বা চিনা মুরগি’ নামে পরিচিত। পাখিটি ইংরেজদের হাত ধরে ইউরোপ থেকে ব্রিটিশ উপনিবেশ হয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আসে।
তিতির পাখি শোভাবর্ধনকারী হলেও এটা পালন বেশ লাভজনক। বাণিজ্যিকভাবে এমন লাভজনক তিতির খামার গড়ে তুলেছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদাহ ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের ইউনুসের স্ত্রী শুভারণ খাতুন।
তিতিরের খামার পরিদর্শন করে জানা যায়, ৭ মাস আগে প্রায় সাড়ে তিনশ পিস তিতির কিনে গড়ে তোলেন খামার। ৭ মাসে তিতিরের পেছনে খরচ করেছেন কয়েক লাখ টাকা। খামারের তিতির দেখতে ও কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে উদ্যোক্তা ও ক্রেতারা আসছেন। ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করে বাজারে বিক্রির জন্য এরই মধ্যে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার মেশিন কিনেছেন তিনি। ফলে ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনের পর প্রতিটি বাচ্চা ভালো দামে বিক্রি হবে বলে আশা করছেন এ নারী উদ্যোক্তা।
শুভারণ খাতুন বলেন, ‘তিতির চাষ খুব লাভজনক। অল্প পুঁজিতে অল্প সময়ে এ ব্যবসা লাভজনক। তিতির নিজ বাড়ির আঙিনায় খুব সহজে লালন-পালন করা যায়। এটি পালন করে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি স্বাবলম্বীও হওয়া যায়। সাড়ে তিনশ পিস তিতিরের বর্তমান বাজারদর প্রায় ৮ লাখ টাকা। সরকারি সহযোগিতা পেলে খামারটি আরও বড় করা যাবে। বাণিজ্যিকভাবে আরও লাভবান হওয়া সম্ভব। অনেক বেকার খামারে এসে পরামর্শ নিচ্ছেন। খামার করার বিষয়ে সবাইকে সহযোগিতা করা হবে।’
শুভারণ খাতুনের স্বামী ইউনুস বলেন, ‘আমার স্ত্রী সংসারের সব কাজের পাশাপাশি খামার করে সফলতা অর্জন করেছেন। তার অদম্য ইচ্ছা আর কাজের প্রতি আগ্রহ দেখে আমি মুগ্ধ। আমিও স্ত্রীকে খামারের কাজে সহযোগিতা করি। অনেকেই আমার স্ত্রীর খামার দেখতে ও পরামর্শ নিতে আসছেন। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাড়তি আয় হওয়ায় সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। আমি ও আমার স্ত্রী ইউটিউব দেখে মূলত এটি পালনে নেমে পড়ি।’
একই এলাকার লিজন শেখ বলেন, ‘প্রথমে ৫-৭ পিস তিতির এই নারী শখের বশে কিনেছিলেন। এখন তার খামারে প্রায় সাড়ে তিনশ তিতির আছে। আমরা চাই শুভারণ খাতুন এটি পালনে সফল নারী উদ্যোক্তা হোন। আমার এলাকাসহ বিশ্বের মানুষ তাকে চিনুক।’
পার্শ্ববর্তী কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে খামার দেখতে আসা যুবক মেহেদী হাসান মিলন বলেন, ‘শুভারণ খাতুন খামার গড়ে তুলেছেন। আমরা সেটি দেখতে এসেছি। তিতিরগুলো ডিম দেওয়া শুরু করেছে। প্রতিদিন আমার মতো অনেক মানুষ এ খামার দেখতে আসে। আমরা চাই, খামার দেখে আরও উদ্যোক্তা তৈরি হোক এবং মানুষ স্বাবলম্বী হোক।’
প্রতিবেশী সোফিয়া বেগম বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে শুভারণ এগুলো পালন করছেন। একটু শব্দ হয়। তাছাড়া কোনো অসুবিধা হয় না। অনেক মানুষ দেখতে আসে। আমরা সবাই শুভারণের মতো এগুলো পালন করে সফল হবো।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মিহির কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘তিতির একটি সৌখিন পাখি। পালন করতে হলে অনেক যত্ন করতে হয়। আমরা এ ধরনের খামারিদের জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে সব ধরনের সহযোগিতা করছি।’
সুত্রঃ জাগো নিউজ