৩২
জাতীয় মৎস্য পদক পুরস্কার প্রদানের লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের একটি টিম আইপিআরএস নামক একটি প্রযুক্তি পরিদর্শন করে। মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চিংড়ি) মহোদয়ের নেতৃত্বে গতকাল শনিবার চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় সকাল ১০.৩০ ঘটিকায় প্রযুক্তিটি পরিদর্শন করে। পরিদর্শন টিমে সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও রাজশাহী জেলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ( রিজার্ভ) জনাব মোঃ ইউসুফ ।
প্রযুক্তিটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে উদ্যোক্তা মোঃ আকবর হোসেন জানান, ইন পন্ড রেসওয়ে সিস্টেম( আইপিআরএস) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত মাছ চাষের সর্বাধুনিক একটি প্রযুক্তি। একে বলা যায় মাছ চাষের ক্ষেত্রে পুকুর, খাঁচা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অক্সিজেন খাদ্যের সুষম বন্টনের একটি প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা। এর মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও কৌশল ব্যবহার করে স্বল্প জায়গায় অনেক বেশি পরিমাণে মাছ চাষ করা যায় । তিনি আরো বলেন, এই প্রযুক্তিতে বড় আকারের পুকুরে কংক্রিটের ছোট ছোট চ্যানেল তৈরি করা হয়; যেখানে কৃত্রিমভাবে স্রোত সৃষ্টি করে অনেকটা নদী বা প্রাকৃতিক জলাশয়ের মত পরিবেশ তৈরি করা হয়। এইসব সেল আবার বাইরের বড় পুকুরের সাথে সংযুক্ত থাকে যদিও মাছ সেই পুকুরে বেরিয়ে যেতে পারে না। এইসব পুকুর থেকে পরিষ্কার পানি সেলের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে। সেলের মধ্যে থাকা মাছগুলো স্রোতে ক্রমাগত সাঁতার কাটতে থাকে। নদীর মত পরিবেশ পাওয়ার কারণে আইপিআরএস পদ্ধতিতে উৎপাদিত মাছের স্বাদ ও রং প্রায় নদীর মাছের মতই হয়। এভাবে স্বল্প জায়গায় অনেক বেশি পরিমাণে মাছ উৎপাদন করা যায়। বাংলাদেশে আইপিআরএস এর প্রথম উদ্যোক্তা আকবর হোসেন বলেন, যেখানে এক বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে ৩০০ থেকে ৪০০ টি মাছ চাষ করা হয় সেখানে এক বিঘা জায়গায় এই পদ্ধতিতে ১০,০০০ মাছ চাষ করা সম্ভব। অল্প জায়গায় এত বেশি স্বাস্থ্যসম্মত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায় দেখে আমি এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করি। ২০১৯ সালের শুরুতে চীনের কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল এই প্রকল্পের সিভিল কাজের নকশা দিয়ে যান। এরপর স্থানীয় প্রকৌশলী ও মৎস্য অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় নির্মাণ কাজ শেষে ২০২০ সালের জুন মাসে মাছ চাষ শুরু করি। যেহেতু দেশে ভুমির পরিমাণ খুব কম সেহেতু অল্প জায়গা হতে বেশি মাস উৎপাদন আমাদের লক্ষ্য। এখানে ২৫ মিটার লম্বা, ৫ মিটার প্রস্থ এবং ২ মিটার গভীর অর্থাৎ ২৫০ কিউবিক মিটারের প্রতিটি চ্যানেল থেকে প্রায় ৩২ টন মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। নবাব আইপিআরএসএ প্রতিটি চ্যানেলে ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম ওজনের ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজারটি রুই মাছের পোনা মজুত করা হয়। মজুদকৃত মাছের ওজন ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম হলে বাজারজাত করা হয়। মাছ চাষকাল প্রায় তিন মাস। বছরে প্রায় চারটি উৎপাদন চক্র সম্পন্ন হয়। এই খামারে উৎপাদিত মাছগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ রাজশাহী, নওগা, জয়পুরহা্ নাটোর সিরাজগঞ্জ ,রংপুর , দিনাজপুর , সিলেট , চট্টগ্রাম এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা হয়। ফলে ভোক্তা ক্রেতাগণ গুণসম্পন্ন মাছ এবং জীবন্ত টেবিল ফিস পাচ্ছেন। তারই উদ্যোগের ফলে স্থানীয় মাছ চাষিসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থান হতে আগত উদ্যোক্তা উদ্বুদ্ধ হয়ে মাছ চাষ করে বেকারত্ব দূর করে এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ আমিষের ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। দেশের মাছের চাহিদা পূরণে হাজার হাজার পুকুর খননের পরিবর্তে কিছু সংখ্যক আইপিআরএস প্রযুক্তিভিত্তিক মৎস্য খাওয়ার প্রতিষ্ঠা করলে বছরে বিপুল পরিমাণ মাছ উৎপাদিত হবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এই মাছ বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। দেশে মাছ উৎপাদনে ও নদীর মাছের মত স্বাদ পেতে আইপিআরএস পদ্ধতি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তথ্য প্রদানে সহায়তা ঃ মো ইউসুফ , উপজেলা মৎস্য অফিসার( রিজার্ভ), মৎস্য অধিদপ্তর।