আবু নাজিম বাড়ি কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার রঘুরামপুরে। তিনি ১৯৯৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেন। এরপর বিভিন্ন এনজিওতে দীর্ঘ ২৪ বছর চাকুরি করেন। পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষায় অনেকটাই শখের বসে প্রাথমিকভাবে ১৯ টা গরু দিয়ে ২০১৬ সালে খামার শুরু করেছিলেন। তার ঘামঝরা পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি এই সফলতা অর্জন করেছেন। নিজে সফলতার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ও ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও তিনি ২০২২ সালে “শ্রেষ্ঠ ডেইরী আইকন” হিসেবে সরকারিভাবে পুরস্কার পেয়েছেন।
আবু নাজিম বলেন, তিনি ২০১৬ সালে মাত্র ১৯ টি গরু নয়নপুর বাজার, মিরশান্নী বাজার থেকে গরু কিনে খামার শুরু করেন। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। তিনি তার খামারের গরুগুলোকে আলাদা আলাদা শেডে রাখেন। এখন তার খামারে প্রায় ৪০০ টি গরু রয়েছে।
আবু নাজিম আরও বলেন, তিনি দুগ্ধবতী গাভী, ছোট বাছুর, গর্ভবতী গাভী, মোটাতাজারণ গরু গুলোকে আলাদা আলাদা ঘরে রাখেন। এখন তার খামারে ফ্রিজিয়ান ও উন্নতমানের শাহীওয়াল জাতের গরু রয়েছে। তার গরুগুলোকে দেখাশোনার জন্য ৩৫ জন লোক নিয়োগ দেয়া আছে। তারা সবসময় গরুগুলোর দেখাশেনা করেন।
তিনি আরও বলেন, গরুকে খাওয়ানোর জন্য পঞ্চাশ (৫০) একর জমিতে নেপিয়ার, নেপিয়ার পাকচং ঘাস চাষ করেন। তাছাড়া শুকনো মৌসুমের জন্য ভুট্রা সাইলেজ করে সংরক্ষণ করেন। তিনি গো-খাদ্য হিসেবে চাউলের কুঁড়া, ভূসি, চিটাগুড় ব্যবহার করেন।
তিনি তার খামারে উৎপাদিত দুধ স্থানীয় বাজার, শহরের বড় বড় মিষ্টির দোকান ও প্যাকেটজাতকরণের মাধ্যমে বিক্রি করেন। তার খামারে দৈনিক ৯০০-১,০০০ কেজি দুধ উৎপাদন হয়। তিনি আরও বলেন, তার খামার থেকে বছরে প্রায় ১০০ টি গরু মোটাতাজাকরণ করে বিক্রি করেন।
আবু নাজিম বলেন, গরু অসুস্থ হলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা তাকে সহযোগিতা করেন। উল্লেখ্য, করোনাকালীন সময়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সহযোগিতায় তার খামারে উৎপাদিত দুধ ভ্রাম্যমাণ বাজারে বিক্রি করেছেন।
প্রশিক্ষণ বিষয়ে জানতে চাইলে আবু নাজিম বলেন, আমার প্রাণিসম্পদ বিষয়ে তেমন কোন জ্ঞান নেই। খামার করতে করতে তিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং প্রাণিসম্পদ বিষয়ে প্রশিক্ষণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
আবু নাজিম আরও বলেন, খামারে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটর এর ব্যবস্থা রয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পাকা ড্রেনের ব্যবস্থা আছে। তার খামারের উৎপাদিত গোবরের ৭৫% দিয়ে বায়োগ্যাস উৎপাদন করেন এবং উৎপাদিত গ্যাসে ৭টি চুলার ব্যবহার হয় ।
পরিশেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর, আঞ্চলিক অফিস, কুমিল্লার পক্ষ থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর, প্রধান কার্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত গাভী পালন, সবুজ ঘাস সংরক্ষণ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, উন্নত জাতের ঘাস চাষ, হাইব্রীড ভুট্রা চাষাবাদ পদ্ধতি বিষয়ক লিফলেট ও ফোল্ডার বিনামূলে প্রদান করা হয় এবং পরামর্শ প্রদান করা হয়।
প্রতিবেদনকারী:
সুরাইয়া আক্তার
কৃষি তথ্য কেন্দ্র সংগঠক
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর
আঞ্চলিক অফিস
কুমিল্লা