ড. এম আসাদুজ্জামান
কৃষির ভূমিকা
বিষয়টিকে গতানুগতিক মনে হতে পারে, তবুও পুনরোক্তি করা ভালো হবে। সব দেশেই কৃষির প্রধান কাজ খাদ্য উৎপাদন। দ্বিতীয় ধাপে আসে আয় ও কর্মসংস্থান, যেগুলো ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন দেশে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৃষিতে আয় ও কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে, বিষয়টি বাংলাদেশের জন্যও সত্য। মনে রাখতে হবে, এখানে আমি কেবল আপেক্ষিক অবদানের কথা বলছি, সামগ্রিক অবদানের পরিমাণ কমেনি, বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও কয়েক বছর আগে একজন অর্থ উপদেষ্টা প্রকাশ্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন একথা বলে যে কৃষি খাত নিয়ে সবাই কেন এত হইচই করছে, যেখানে মোট জিডিপিতে খাতটির খুব একটা অবদান নেই। ওই ভদ্রলোক হয়তো ভুলে গেছেন, যে খাবারের অভাবে আমরা সবাই অভুক্ত থাকব, তা কিন্তু কৃষি থেকেই আসে এবং এমন একটা সময় ছিল যখন কৃষি কর্মসংস্থান ছিল দেশের অর্ধেক বা তারও বেশি মানুষের জীবিকার উৎস। তাছাড়া কৃষি খাত এখনো কর্মসংস্থানের অন্যতম বৃহৎ ক্ষেত্র।
কৃষির আরো দুটি অবদান রয়েছে। প্রধান রফতানিযোগ্য পণ্য হিসেবে কৃষিদ্রব্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে পুঁজি-পণ্যের পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানিতে সক্ষমতা অর্জন অনেক দেশে প্রথম পর্যায়ের উন্নয়নের সূচনা করে। পাকিস্তান আমলে কাঁচামাল হিসেবে পাট রফতানি এবং পরবর্তী সময়ে চিংড়ি রফতানির মতো ইতিবাচক কিছু উদাহরণও এ দেশে রয়েছে। খাতটির অন্যতম অপ্রত্যক্ষ অবদানের মধ্যে রয়েছে শিল্পের প্রধান প্রধান কাঁচামাল সরবরাহ করা। পাটের কথা আমাদের মনে আসার কারণ হচ্ছে, এটি ছিল কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের প্রাথমিক উদাহরণ। এখনো কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ তৈরি পোশাক খাতের বাইরে শিল্পের একটা বড় অংশ।
এ নিবন্ধে আমি মূলত খাদ্য উৎপাদনের বিষয়গুলোয় মনোনিবেশ করব, পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক অন্য কিছু বিষয়ও তুলে ধরব। পাঠককে শুধু কৃষির পরিবর্তন বা ভবিষ্যতে কী ধরনের পরিবর্তন হতে পারে, এ ধরনের বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে কৃষকের অপরিবর্তিত অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়েও আলোচনা করতে চাই।
স্যার আজিজুল হকের ‘ম্যান বিহাইন্ড দ্য প্লাউ’ বা ‘লাঙ্গলের পিছনের মানুষ’ বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর ৮১ বছর পার হয়ে গেছে। এ বইয়ে বর্ণনা করা হয়েছে বাংলার কৃষকের দুর্দশার কথা, বিশেষ করে তাদের ঘাড়ে জমিদারি ব্যবস্থার জোয়াল, ব্রিটিশের শোষণের ধারাবাহিকতায় একবার নীল চাষ ও পরবর্তী সময়ে পাট চাষে বাধ্য করা যেন ব্রিটিশদের অধীনে থাকা পাটকলগুলো স্বল্প মূল্যে কাঁচামাল সরবরাহের মাধ্যমে অস্বাভাবিক মুনাফা করতে পারে, যা বাংলার কৃষকদের ক্রমে দরিদ্র করে দেয়। ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে জমিদারি ব্যবস্থার সমাপ্তি ঘটলেও বাজার কৌশল ও বিপণন ব্যবসায়ীদের এজেন্টদের কারসাজি কৃষকদের দরিদ্র করেই রেখেছে, প্রক্রিয়াটি এখনো সতত চলমান।
কৃষি খাত: পাঁচ দশক
ফসল
একই গতিতে না হলেও গত পাঁচ দশকে বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে আলোচনা করা যাক কৃষি জিডিপি ও প্রবৃদ্ধি হার নিয়ে। শস্যের ক্ষেত্রে, ১৯৭০-এর দশকে চাল উৎপাদন যেখানে মোটামুটি ১২ মিলিয়ন টন ছিল, পরবর্তী সময়ে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩৬ মিলিয়ন টন। এখানে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে কয়েকটি বিষয়। তার মধ্যে প্রথম দিকে অন্যতম ছিল গভীর নলকূপ ও ভূ-উপরস্থ সেচ ব্যবস্থার প্রবর্তনের মাধ্যমে শুকনো মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি। তবে বড় ধরনের বাঁকবদল ঘটে আশির দশকে, যখন নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যক্তি খাতে অগভীর নলকূপ স্থাপনকে উৎসাহিত করা হয়। একইভাবে ভর্তুকিযুুক্ত রাসায়নিক সারের যুগপৎ নীতি উচ্চফলনশীল জাত চাষে আরো গতি যোগ করেছিল। ফলে সত্তরের দশকে যেখানে দুই মিলিয়ন টনের বেশি বোরো উৎপাদন হতো না, ২০০০ সালের দিকে তা চার গুণ বেড়ে আট মিলিয়ন টনে দাঁড়ায় এবং আমনকে ছাড়িয়ে যায়। গত ২০ থেকে ২৫ বছর সময়কালে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। এখন বোরো উৎপাদনের পরিমাণ ২০ মিলিয়ন টনে এসে দাঁড়িয়েছে, যদিও আমন উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে ৭-৮ থেকে ১৩-১৪ মিলিয়ন টনে। আউশ উৎপাদনের পরিমাণ মাত্র ৩ মিলিয়ন টন হওয়ার কারণে এটি সম্পূর্ণ প্রান্তিক ফসলে পরিণত হয়েছে। বোরোর প্রাধান্যের কারণে বাংলাদেশের পক্ষে খাদ্যশস্যে কম-বেশি স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব হয়েছে, যদিও এটি দেশকে অন্যান্য ঝুঁকির মুখোমুখি করেছে, যা শেষ পর্যন্ত এর বৃদ্ধি হ্রাস করতে পারে।
শতাব্দীর শুরুর দিকে গম উৎপাদন ছিল সন্তোষজনক, প্রায় দুই মিলিয়ন টন। তবে ২০০৬-০৭ সালের দিকে তা হ্রাস পেয়ে হয় সাত লাখ টন। যদিও ধীরে ধীরে তা আবার বাড়ে, তবে সে পরিমাণটি খুব বেশি নয়, মাত্র এক মিলিয়ন টন। অন্যদিকে ২০০০ সালের দিকে ভুট্টা উৎপাদনের পরিমাণ যেখানে তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না, সেখানে ২০১৮-১৯ সাল নাগাদ এটির উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছে ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন টনে। এটি ঘটেছিল মূলত পোলট্রি ফার্মের খাবার হিসেবে ব্যবহারের কারণে। অন্যান্য ফসলের মধ্যে আলু উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আশির দশকের মাঝামাঝি আলু উৎপাদনের পরিমাণ যেখানে মাত্র এক মিলিয়ন টন ছিল, সেখানে প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ১০ মিলিয়ন টন হয়েছে।
অন্য শস্যের মধ্যে তুলনামূলকভাবে তেলবীজের উৎপাদন বৃদ্ধি ঘটেছিল, ১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে ৪ দশমিক ৫ লাখ টন পরিমাণ উৎপাদিত হলেও পরে তিন লাখ টনে নেমে গিয়েছিল, তবে ২০১৪-১৫ সালের দিকে উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে হয় পাঁচ লাখ টন।
তার পরে যা ঘটেছিল বলা হচ্ছে সরকারিভাবে, তা একটা জবরজং ব্যাপার। পরের বছর তেলবীজের উৎপাদন দেখানো হয় ৯ লাখ ৩৪ হাজার টন (৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে), তার পরের বছর ৫ লাখ ৬০ হাজার টন (৬০ শতাংশ কমে) এবং পরবর্তী সময়ে ১০ লাখ ২৬ হাজার টন বা পুনরায় ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। পরে আমরা এ ধরনের তথ্য-উপাত্তের উদ্ভট ওঠানামা এবং কৃষি পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোয় ফিরে আসব।
যেসব শস্যের উৎপাদন কমে গিয়েছিল বা অপরিবর্তিত ছিল, তার মধ্যে অন্যতম হলো ডাল, আখ এবং সম্ভবত পাট। আশির দশকের শুরুতে সরকারি হিসাবে ডাল (বিশেষ করে মসুর ও খেসারি) উৎপাদনের পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ টন, ২০০৯-১০ সালে যা অর্ধেকেরও বেশি কমে দাঁড়ায় দুই লাখ টনে এবং পরবর্তী সময়ে ২০১৭-১৮ সালে আবার উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়। তবে আখ উৎপাদন আশির দশকের সাত লাখ টন থেকে ধারাবাহিকভাবেই হ্রাস পেয়ে বর্তমানে অর্ধেকেরও কম হয়েছে।
অন্যান্য বাণিজ্যিক ফসলের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে পাট উৎপাদনের ক্ষেত্রে। কিছু বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে উৎপাদনের পরিমাণ গণনা পদ্ধতির কারণে। যেমন কখনো বেল হিসাবে, কখনো টনে কিংবা কখনো একই কলামে দুই অংকের হিসাব করার মাধ্যমে সব জট পাকিয়ে গেছে এবং কী ঘটছে তা বুঝে ওঠাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। খুব সম্ভবত উৎপাদন বেড়েছে কিন্তু তেলবীজের মতোই আমরা দেখতে পাই যে ২০০৯-১০ সাল থেকে ২০১০-১১ সাল নাগাদ উৎপাদনের ক্ষেত্রে উল্লম্ফন ঘটেছে, অর্থাৎ উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। এখন পর্যন্ত উৎপাদনের পরিমাণ সম্ভবত ১৬ লাখ টনের ধারেকাছে ঘোরাফেরা করছে।
পুষ্টি চাহিদা পূরণে শাকসবজি ও ফলের গুরুত্বের বিষয় অতি জরুরি, বিশেষ করে আমাদের দেশের মানুষের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি যেমন দস্তা, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-১২ ও লোহার চাহিদা পূরণে এদের অবদান অনেক।
দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই যে শাকসবজি ও ফল উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে, বাজারে গেলে যে কেউ বিষয়টি অনুমান করতে পারবেন, অতীতে কিন্তু বিষয়টি এমন ছিল না। তাহলে কীভাবে এর উৎপাদন বেড়েছে? অনুমান করতে পারি যে এক্ষেত্রে বাড়িতে চাষ ও ভোগ বৃদ্ধি দুটোই নেপথ্য কারণ হিসেবে কাজ করেছে। এ ধরনের খাদ্যপণ্যের উৎপাদন নির্ভুলভাবে হিসাবের জন্য দেশব্যাপী যে জরিপ প্রয়োজন, তা হয়নি বললেই চলে বা এ-সংক্রান্ত কোনো জরিপ চালানো হয়ে থাকলে সে-সম্পর্কিত প্রচার-প্রচারণাও কম।
সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি যে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে চাল উৎপাদন সমস্যার সমাধান করেছে। অন্য ফসলের ক্ষেত্রে আমরা মিশ্রিত ফলাফল দেখতে পাই, কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক, কিছু ক্ষেত্রে আবার হতাশাজনক।
পরিবর্তনগুলো বোঝার জন্য প্রাপ্ত তথ্যগুলো গুণগত মানসম্পন্ন নয়, অবশ্য তথ্য সংগ্রহের ধারাবাহিকতা ও নির্ভরযোগ্যতা এ দেশে শতাব্দীর পুরনো সমস্যা।
প্রাকৃতিক মৎস্য ও অ্যাকোয়াকালচার
সরকারি হিসাব মতে গত দুই দশকে মাছের বার্ষিক উৎপাদন বেড়েছিল ৫ শতাংশ হারে। উৎপাদন বৃদ্ধির হিসাবটি করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ জলাশয় ও সামুদ্রিক উৎস থেকে মৎস্য আহরণের ওপর নির্ভর করে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মাছ আহরণের ক্ষেত্রে নদী ও মোহনার পাশাপাশি প্লাবন ভূমির প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরিত মোট মাছের পরিমাণ ৭৫-৭৬ শতাংশ। তবে যে বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, সেগুলো কতটা নির্ভরযোগ্য, তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়। উদাহরণস্বরূপ, নদী ও মোহনা থেকে মাছ ধরার পরিসংখ্যানটি তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশে মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) ১৯৮৩ সালের ফ্রেইম সার্ভে অনুযায়ী। এরপর পার হয়েছে প্রায় চার দশক। পরিবর্তন এসেছে ভূমি ও জলাভূমির আয়তনের ব্যবহারের ক্ষেত্রে। তাই অনেকটা সুনিশ্চিতভাবেই বলা যায়, আগের অনেক জলাশয় বা পুকুরের অস্তিত্ব এখন আর নেই। একইভাবে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে (বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়, পরিবারের জন্য) এমন লাখ লাখ পরিবারের ওপর বছরের পর বছর ধরে কোনো ধরনের জরিপ না চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার বিষয়টিও অস্পষ্ট। তাছাড়া নিজেদের মাছ ধরার অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে জেলে বা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে যে নদী বা খাল-বিলে আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না, এসব উেস মাছের পরিমাণ আগের তুলনায় অনেকাংশে কমেছে। একই সঙ্গে তারা এটাও মনে করে যে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং বাজার থেকে তারা যেসব মাছ কেনে, তার অনেকটাই এ উৎস থেকে আসে।
বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ কতটা সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছে? মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ সাল নাগাদ পুকুরে মাছ চাষের পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ টন; যা মোট মাছ উৎপাদনের ৪৪ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক মাছ চাষের ৭৯ শতাংশ। এ অবস্থায় নীতিনির্ধারকদের আগের তুলনায় যথাসম্ভব আরো সুনির্দিষ্টভাবে পুকুরে বা অনুরূপ জলাশয়ে বাণিজ্যিক মাছ চাষের সংখ্যা এবং উৎপাদন সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। স্পারসোর ১৯৮৩ সালের তথ্যের ভিত্তিতে পুকুরের আয়তন হিসাব করা হলেও ২০১৪-১৫ সালের দিকে এর সঙ্গে কিছু বাড়তি তথ্য নেয়া হয়। তবুও সাধারণভাবে এটা সত্য যে মাছ উৎপাদনসংক্রান্ত এসব তথ্যের বাস্তব ভিত্তি পরিষ্কার নয়।
গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি উৎপাদন
আমরা যখন রোজকার সদাই করতে বাজারে যাই, তখন হাঁস-মুরগি এবং অন্যান্য মাংসের সরবরাহ দেখে অনুমান করতে পারি উৎপাদন বেড়েছে। বিশেষ করে মুরগির মাংস ও ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি তর্কাতীত। যদিও এ-সম্পর্কিত তথ্যগুলোয় বড় ধরনের ফাঁক ও অসংগতি রয়েছে। তথ্যের সমস্যাটি আরো তীব্র হয়ে ওঠে যখন আমরা বিবেচনা করি যে ঐতিহাসিকভাবেই অতীতের মতো এখনো গ্রামীণ প্রায় প্রতিটি বাড়িতে, খামার কিংবা খামারহীন, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন করা হয়। অন্যদিকে সাম্প্রতিককালে মাংস ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্যিক পোলট্রি ফার্মগুলো বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। তবুও আমরা এ-জাতীয় বাণিজ্যিকীকরণের মাত্রা নিশ্চিতভাবে জানি না। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন ধরনের উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বাণিজ্যিক পোলট্রি ফার্মের সংখ্যা ৬৫-৭০ হাজার থেকে ১৫০ হাজার হতে পারে। একটি উেসর ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, প্রতি বছর ডিম উৎপাদনের পরিমাণ ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন, যার মানে দিনে দুই কোটি (২০ মিলিয়ন) ডিম উৎপাদিত হয়। অন্য একটি উেসর তথ্যানুযায়ী, এটি ৩৩ মিলিয়ন—পার্থক্যের পরিমাণটি ৫০ শতাংশেরও বেশি। প্রাপ্ত তথ্যগুলোয় আরো দেখা যায় যে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় পরবর্তী সময়ে হঠাৎ করে কোনো কোনো বছর ৪৫-৪৬ শতাংশ বা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, অথচ গবাদিপশুর সংখ্যার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এ সবকিছুর অর্থ হচ্ছে, আনুষ্ঠানিকভাবে যারা এ ধরনের পরিবর্তনগুলোর হিসাব রাখার দায়িত্বে রয়েছেন, প্রাণিসম্পদ অর্থনীতির পরিবর্তনের সাম্প্রতিক তথ্যগুলো এখনো তাদের হিসাবের বাইরেই রয়েছে।
কৃষক
আগেই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে সময়ান্তরে শস্য, মৎস্য, গবাদিপশুসহ সার্বিক কৃষিতে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন সত্ত্বেও কৃষকদের অবস্থার খুব একটা উন্নতি ঘটেনি। এখানে প্রথম বিবেচ্য হলো, কারা আসলে কৃষক। ২০১৯ সালের সর্বশেষ কৃষিশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে কৃষক পরিবারের অনুপাত তুলে ধরা হয়েছে, যা মনে হচ্ছে আগের তুলনায় কমছে। এ অনুপাত ১৯৮৩-৮৪ সালের প্রায় ৭৩ শতাংশ থেকে ২০১৯ সালে প্রায় ৫৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যদিও সার্বিক সংখ্যা বেড়েছে। তবে এ থেকে অবশ্য কৃষকের বিভাজনের আকার বোঝা যায় না। ২০০৮ সালের তথ্যানুযায়ী, এক একর ও আড়াই একর পর্যন্ত চাষ করেন এমন কৃষকের অনুপাত যথাক্রমে ৫২ ও ৮৪ শতাংশ। অথচ তারা যথাক্রমে কেবল মোট আবাদি জমির ১৬ ও ৫০ শতাংশ চাষ করে। আবার বড় কৃষকরা যারা ৭ দশমিক ৫ একরের বেশি জমি চাষ করেন, তারা কৃষকের মোট সংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ, তাদের হাতে চাষকৃত জমি ১৩ শতাংশ। এসব বিষয় ইঙ্গিত দেয় যে অধিকাংশ কৃষক সত্যিই খুব ছোট। অন্যদিকে অনেকেই মনে করেন যে বৃহৎ বাণিজ্যিক কৃষি খামার এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভূমি মালিকানা বাড়ছে। আমরা জানি যে, জাতিসংঘ গত বছর ‘পারিবারিক খামার দশক’ পালনের ডাক দিয়েছে। সে প্রেক্ষিতে আদতইে বাংলাদেশে পারিবারিক বনাম প্রাতিষ্ঠানিক কৃষি কি অবস্থায় আছে এবং তা কৃষিতে কি ধরনের প্রভাব ফেলছে, তা বোঝা জরুরি। অবশ্য সরকারের পরিসংখ্যান খাতগত আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ভূমি মালিকানার এসব নতুন তথ্য সংগ্রহে এখনো ততটা চেষ্টা করেনি।
এসব কৃষকের পূর্বপুরুষরা জমিদারি ব্যবস্থার অধীনে যাতনার মধ্য দিয়ে দিনযাপন করেছে, ব্রিটিশ থেকে স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পরে যা তিরোহিত হয়। ওই জিঞ্জিরের অবসান ঘটলেও দুর্ভাগ্যক্রমে বাজারশক্তির অদৃশ্য বেড়ি তাদের আবার বন্দি করেছে, বিশেষ করে যখন থেকে তারা বোরো ধানের মতো ফসল, যার জন্য নগদে খরচ করতে হয়, চাষ শুরু করে তখন উৎপাদন খরচ মেটানোর জন্য গ্রামীণ মহাজনদের ওপর তাদের নির্ভরশীল হতে হয়েছিল। সময়ের আবর্তে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ধীরে ধীরে মহাজনদের কিছুটা প্রতিস্থাপিত করেছে। তবে মধ্যস্বত্বভোগী কিংবা চালকলের কাছে নিজেদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে বাজারের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এবং ফসলের উৎপাদন ব্যয় ও বাজারের দামের ফারাকের কারণে কৃষকদের আর্থিক ক্ষতির আরেক অধ্যায় সূচিত হয়। বেশ কয়েক বছর থেকে এই নাটকের বারবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। অতিসম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী একথা জোরেশোরেই বলেছেন, আপাতত নতুন বাণিজ্যিক মৎস্যচাষীরা ফসল উৎপাদকদের এই নিয়তি সম্ভবত কিছুটা এড়াতে সমর্থ হয়েছেন। এখানে অবশ্য বৃহৎ মাছচাষী বেশি এবং তারা মাছ চাষের ভূমির একটা বেশ বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। সাম্প্রতিক একটি সুচারু জরিপ মতে, ছোট পুকুরের মাছচাষী (আধা একর পর্যন্ত) মোট মাছচাষীদের ৩৬ শতাংশ, কিন্তু তারা মাত্র ১২ শতাংশ মাছ চাষ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। মাছচাষীদের মধ্যে মাঝারি (আধা একর থেকে দুই একর পর্যন্ত) এবং বড় (দুই একরের বেশি) উদ্যোক্তারা পুকুর এলাকার যথাক্রমে ৩৫ ও ৫৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করেন। কাজেই এসব চাষীর সাধারণভাবে বিপণন মধ্যবর্তীদের সঙ্গে বেশ ভালো দরকষাকষির ক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে।
কৃষিকাজের লৈঙ্গিক মাত্রায় আমরা এতক্ষণ খুব একটা দৃষ্টি দিইনি। বিবিএসের ২০১৬-১৭ শ্রমশক্তি জরিপে উঠে এসেছে কৃষিতে মোট নিয়োজিত ২২ দশমিক ৭ মিলিয়ন শ্রমশক্তির মধ্যে নারীদের অংশ ৪৫ শতাংশ, শ্রমবাজারের মোট নিয়োজিত নারীদের যা প্রায় ৭৩ শতাংশ। এখানে দুটি বিষয় পরিষ্কার। নারীদের শ্রম নিয়োজনের প্রধান খাত হলো কৃষি এবং এ খাতে তাদের মোট শ্রমশক্তির অর্ধেকের কাছাকাছি কর্মরত। এর অর্থ হলো, কৃষিতে যা-ই ঘটুক না কেন, তাতে নারীদের ওপর প্রভাব (কু বা সু) প্রায় পুরুষদের মতোই পড়ে।
আনুষ্ঠানিক সরকারিভাবে দেখা না হলেও প্রায় সর্বত্রই বসতভিটায় শাকসবজি চাষ এবং হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালনের মাধ্যমে গেরস্থালি খাদ্য উৎপাদনের বিষয়টি প্রায় এককভাবে নারীদের হাতে ছিল। সম্ভবত এ ধারাবাহিকতা এখনো বজায় রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সাম্প্রতিক বিশ্লেষণগুলোয় দেখা যায় যে পরিবারে, বিশেষত গ্রামীণ পরিবারে, গেরস্থালি খাদ্য উৎপাদন তাদের পুষ্টিগত ভারসাম্যের ওপর উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। দুর্ভাগ্যক্রমে, কৃষির সাধারণ পরিসংখ্যানে এসব কৃষি উৎপাদনের হিসাব যথাযথ বিবেচনা করা হয় না, যা আবারো ধান ও ক্ষেত কৃষির বাইরের পরিবর্তনের বিষয়টিকে অস্পষ্ট করে তোলে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে বর্তমানে চলমান মহামারীর প্রথম দিকে যখন সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল, তখন বসতবাড়ির আঙিনায় চাষাবাদ এবং গেরস্থালি খাদ্য উৎপাদনের গুরুত্বটি নতুন করে সামনে এসেছে।
শ্রমিকের প্রকৃত ব্যবহার এবং যান্ত্রিকীকরণ ইস্যু নিয়ে শেষে বলতে চাই। এবারের বোরো ধান কাটার মৌসুমে কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার আমাদের বড় স্বস্তি দিয়েছে। কৃষি শ্রমের একটি অংশ আসে সাধারণত পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। আর বড় অংশ আসে মজুরি ভিত্তিতে। বেশকিছু ক্ষেত্রে মজুরিভিত্তিক শ্রমিকরা অন্য জায়গা থেকে আসে, এটা প্রতি বছরই ঘটে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তারা যান। এবারের বোরো ধান কাটার সময়ে সুনামগঞ্জের ঘটনাটি ছিল ব্যতিক্রম, কারণ মহামারীতে অন্য এলাকা থেকে শ্রমিক যাওয়া ছিল সাংঘাতিকভাবে কঠিন। তদুপরি ধান পেকে প্রায় পড়ে যাওয়ারই উপক্রম হয়েছিল, সৌভাগ্যক্রমে তা অবশ্য ঘটেনি। যেহেতু কৃষির বিশেষত ধান চাষের বিভিন্ন পর্যায়ে যান্ত্রিকীকরণ সম্ভব এবং তা ঘটেছেও, ধান কাটার যান্ত্রিকীকরণ বর্তমান ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে দেখার অবকাশ রাখে। বিশেষত এর ফলে অভিগমনকারী কৃষি শ্রমিকের আয় ও বিনিয়োগ কীভাবে হ্রাস পাবে না, সে সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধি প্রয়োজন।
বর্তমান কৃষি এবং খাদ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা ও ঝুঁকি
কৃষির ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নসংক্রান্ত বিষয়ে যাওয়ার আগে বিদ্যমান উৎপাদন প্রণালির কিছু ঝুঁকি নিরীক্ষা করা প্রয়োজন ও জরুরি। কেননা এসব বিষয় সমাধানে পদক্ষেপ নেয়া না হলে ব্যবস্থাটি দুর্বল থাকবে এবং এটি খাদ্যনিরাপত্তাহীনতাও সৃষ্টি করতে পারে। ধান নিয়েই প্রথমে আলোকপাত করা যাক।
আগেই যেমনটা আলোচনা করা হয়েছে, বাংলাদেশে বোরো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধানে পরিণত হয়েছে। এটি পুরোপুরিভাবে সেচনির্ভর, যেটি আবারো কমবেশি ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করে। ধান উৎপাদনকারী অন্য দেশগুলোর তুলনায় এটি বিস্ময়কর। কারণ এসব দেশে ধান চাষে বৃষ্টির পানির সঙ্গে পরিপূরক সেচই রীতি এবং সেটিও প্রধানত উপরস্থ পানি থেকে আহরণ করা হয়। বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং এখানে অনেক উপরস্থ জলাধারও আছে। কাজেই অন্য দেশগুলোর মতো কিছুটা একই ধরনের এখানে সেচকাজ পরিচালিত হবে, এটিই অনেকে মনে করেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এটি ঘটেনি। এই প্যাটার্নের কারণে দুই রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
এর মধ্যে একটি সমস্যা হলো, ধানক্ষেত প্লাবিত করার চাষাবাদ-সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের রীতি, এ কারণে প্রচুর পানি প্রয়োজন হয়। এক কেজি ধান উৎপাদনে আমাদের দেশের কৃষকরা মোটামুটি তিন হাজার লিটার পানি ব্যবহার করেন। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় এটি অর্ধেকের কাছাকাছি বা তার কিছু বেশি মাত্র, যার অর্থ হলো জমিতে সেচ দেয়ার জন্য ভূগর্ভ থেকে তাদের অনেক কম পানি তুলতে হয়। আমাদের এখানে শুকনো মৌসুমে চাষের কারণে বোরোর ক্ষেত্রে সব পানিই আসে সেচকৃত পানি হিসেবে—বেশির ভাগটাই ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে, বাকিটা উপরস্থ জলাধার থেকে। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অত্যধিক নির্ভরতার ফল হলো অনেক এলাকায়, বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এরই মধ্যে পানির স্তর নেমে গিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে। এই চর্চা অব্যাহত থাকলে বোরো চাষ ব্যাপকভাবে কমতে পারে এবং খাদ্যনিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে। আমরা জানি, এ সমস্যার প্রতিকার হিসেবে যথাযথ প্রযুক্তি ব্যবহার, সামাজিক উদ্যোগ এবং প্রণোদনা দেয়া সম্ভব। দুর্ভাগ্যক্রমে, এসব বিষয় অতটা গুরুত্বের সঙ্গে এখনো চেষ্টা করা হয়নি। যদিও এখানে বলা উচিত এ সম্পর্কে কৃষি মন্ত্রণালয় অতিসম্প্রতি একটি পাইলটভিত্তিক উদ্যোগ নিয়েছে।
কৃষির অন্য প্রধান সমস্যা হলো তথ্যগত অসংগতি এবং অসম্পূর্ণতা, যেটি খাদ্য ব্যবস্থার কাঠামো সম্পর্কে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও বিনিয়োগে জটিলতা সৃষ্টি করে। কারণ ভিত্তি অবস্থা যথাযথভাবে পরিষ্কার নয়। ফলে ভবিষ্যতে অতি উৎপাদন বা কম উৎপাদন এবং এক বা অন্য ফসলের সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে কিংবা এরই মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণে পুষ্টিগত ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। এটি বিপণন ও সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থার সমস্যা বাড়িয়ে অপচয় বাড়াতে এবং কৃষকের আয়ও কমাতে পারে। উপরন্তু, এটি মাঝেমধ্যে ফসলবিন্যাসে বড় রকমের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। যেমন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জায়গায় ধানি জমি আম বাগানে পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে এটি পানির সমস্যার কিছুটা সমাধানও করেছে। কারণ আম বাগানের জন্য অনেক কম পানি লাগে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ইস্যুটি অবশ্যই বড় করে মাথায় রাখতে হবে, কারণ তা উৎপাদনে ধারাবাহিকতার সমস্যা সৃষ্টি করে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস নিয়মিতভাবে দেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে। এ বছরও ফেলেছে ফসলবিন্যাসে পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষকরা এ সবকিছু মানিয়ে নিয়েছে বটে, কিন্তু এখনো তা পুরোপুরি হয়নি। বড় ধরনের উপর্যুপরি বন্যাগুলো সাধারণত আমনের সময়ে ঘটে। এ ধরনের বন্যা ধান ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি করে এবং পরিবহন সমস্যার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থার বিঘ্ন ঘটায়। এমনিতেই সরবরাহ ব্যবস্থাগত দুর্বলতা রয়েছে। তার মধ্যে বন্যা হলে এর আরো অবনতি ঘটে। এর পরিণাম আবারো কৃষকদের আয় হারানো এবং জীবিকার সংকট সৃষ্টি। চলমান বন্যাগুলো একটি দুর্ভাগ্যজনক উদাহরণ। বিবিএস নিয়মিতভাবে বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে ফলনের ক্ষতি হিসাব করে বটে, কিন্তু তা পরিপূর্ণ চিত্র নয়। কারণ এক্ষেত্রে কৃষি উৎপাদনের ক্ষতিই দেখা হয়। কৃষক উপকরণে যে ব্যয় করল, তার কমই হিসাব করা হয়। ফলে এভাবে নিরূপিত ক্ষতি আসলের তুলনায় কমই হয়। [বাকি অংশ আগামীকাল]
(ইংরেজী থেকে ভাষান্তর: রুহিনা ফেরদৌস ও হুমায়ুন কবির)
ড. এম আসাদুজ্জামান: সাবেক গবেষণা পরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)
Daily Banik Barta.