সুরাইয়া আক্তার
নদী মাতৃক আমাদের এই বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষ মাছে ভাতে বাঙ্গালি। মাছ চাষ এদেশের মানুষের একটি জনপ্রিয় পেশা। এ পেশার মাধ্যমে অনেক চাষী পাচ্ছেন সফলতা। তেমনি একজন সফল মৎস্যচাষী কুমিল্লা জেলার আর্দশ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের গিলাতুলী গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম। তিনি ২০১৬ সালে সৌদি আরব থেকে ফিরে আসেন দেশে। এরপর তিনি আত্মকর্মসংস্থানের পথ খুঁজেন এবং মাছ চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। শুরুতে তিনি ৫০ শতক ও ৮০ শতকের দুটি পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। এই ২ পুকুরের লাভের অংশ দিয়ে বর্তমানে তিনি ১১টি পুকুরে মাছ চাষ করছেন।
আবুল কালাম শুরুতে তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন এবং এলাকার চাহিদা অনুযায়ী ধীরে ধীরে কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রচাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার ১১টি পুকুরেই কার্প মিশ্রচাষ হচ্ছে। তিনি সরকারি মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার, জাঙ্গালিয়া, কুমিল্লা থেকে রেণুসংগ্রহ করেন ও সেগুলো নার্সিং করে পোনা উৎপাদন করেন এবং সে পোনা নিজ পুকুরে ছাড়েন।
তার পুকুর পরিচর্যা ও মাছের খাদ্য প্রদান থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত সকল কাজ আবুল কালামসহ আরো ২ জন কর্মী করে থাকেন।
পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি নিয়ে আবুল কালাম বলেন, মূলত চাষ ব্যবস্থাপনার উপর মাছ চাষের সফলতা বহুলাংশে নির্ভরশীল । তিনি বলেন, সারাবছর পানি থাকে অথবা মৌসুমী পুকুর মাছচাষের জন্য উপযুক্ত। এছাড়া পুকুরে মাছ চাষব্যবস্থাপনার জন্য পুকুরটি আয়তাকার হওয়ার পাশাপাশি পুকুরের গভীরতা ৩ থেকে ৫ ফুট এবং ৫ থেকে ৬ মাস পানি থাকে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে। পুকুর প্রস্তুতি থেকে শুরু করে মাছ চাষের প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তার পুকুর শতাংশ প্রতি ১টা কাতল, সিলভারকার্প, মৃগেল ,কালিবাউস,কার্পিও এবং রুই মিলে মোট ১২টা মাছ যাদের ওজন ৪ থেকে ৫ কেজি হয় এমন আকারের পোনা ছাড়েন । প্রতি ১শ কেজি মাছের জন্য ৫ কেজি খাবার সকাল ও বিকাল (দৈনিক) ২ বার করে প্রদান করেন। প্রতি ১ মাস অন্তর তিনি মাছের স্বাস্থ্য ও দৈহিক বৃদ্ধি পরীক্ষা করেন। তিনি বলেন সকালে বা দিনের অন্য সময়ে যদি অত্যাধিক পরিমাণে মাছ পানির উপরে ভেসে উঠে খাবি খেতে দেখা যায় তাহলে ধরে নিতে হবে যে পানিতে অক্্িরজেনের অভাব রয়েছে। এ অবস্থায় পুকুরে বাঁশ পিটিয়ে বা সাঁতার কেটে পানিতে ঢেউ সৃষ্টিকরে অক্্িরজেন বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি আরো বলেন সময় মতো মাছ ধরা ও বিক্রয় করা মাছ চাষের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। অপেক্ষাকৃত বড় আকারের মাছ বিক্রয়যোগ্য মাছ ধরে বাজারজাতকরা উচিত। আংশিক আহরণকৃত মাছের সংখ্যা পূরণকরার জন্য বড় আকারের সমপরিমাণ পোনা পুকুরে ছাড়তে হবে।
সম্প্রতি তিনি ১৬০ শতকের ১টি পুকুর থেকে প্রজাতি ভেদে মোট ৩ হাজার ১শ কেজি মাছ মোট ৫ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ টাকা বিক্রি করেন।
চাষী আবুল কালাম আরো বলেন, তার পুকুরে রাসায়নিক পদার্থ হিসেবে ইউরিয়া, টিএসপি ব্যবহার করেন এবং কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেননি। শীতের শুরুতে তিনি পুকুরে শতাংশ প্রতি ২০০ গ্রাম করে চুন ও লবণ প্রয়োগ করেন। মাছের খাদ্য হিসেবে ভাসমান (নারিশ) খাদ্য ব্যবহার করে কার্প মিশ্রচাষের খামার গড়ে তুলেন।
বাংলাদেশের মাটি, পানি ও প্রকৃতি মাছচাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। পতিত জলাশয় গুলো ফেলে না রেখে মাছ চাষের আওতায় নিয়ে আসলে দেশে আমিষের চাহিদাপুরণের পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। বেকার যুবকদের হতাশ না হয়ে মাছচাষের উদ্যোগ নিতে বলেন । স্ত্রীসহ ১ মেয়ে ও ২ ছেলে নিয়ে আবুল কালামের সুখী পরিবার গড়ে ওঠেছে।
তার এ মাছ চাষে সরকারি সহযোগিতা সম্পর্কে বলেন , জেলা মৎস্য অফিস ও উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে বেশ সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি এবং মাছ চাষের উপর উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আবুল কালাম ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ সমপ্রপারণ (২য়) এর স্থানীয় মৎস্য সমপ্রসারণ কর্মী হিসেবে কাজ করার সুবাধেও মাছ চাষ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেন। সবশেষে তিনি বলেন, এ ধরনের কাজে অন্যদেরও এগিয়ে আসা দরকার। এতে করে দেশে বেকার সমস্যার সমাধান হবে। দেশ সামনের দিকে আরো এগিয়ে যাবে।
প্রতিবেদনকারী : সুরাইয়া আক্তার, কৃষি তথ্য কেন্দ্র সংগঠক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর, কুমিল্লা।
দুই পুকুরের লাভের অংশ দিয়ে বর্তমানে ১১টি পুকুরে মাছ চাষ করছেন আবুল কালাম
১০