বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে মাছ চাষের মাধ্যমে সফলতা পেয়েছে রাজবাড়ীর শেখ মো: নিজাম। অল্প জমিতে বেশি উৎপাদনের লক্ষ্যে রাজবাড়ীতে বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা প্রায় ৩০০ বিঘা জমিরে উপর ‘গোয়ালন্দ ফিসারিজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। আধুনিক এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখতে আশেপাশের স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার দর্শনাথীরা। এ পদ্ধতিতে স্বাভাবিকের চেয়ে চার গুণ বেশি মাছ উৎপাদন সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, শেখ মোঃ নিজাম জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের রিয়াজউদ্দিন পাড়ায় বাসিন্দা। তিনি ৩০০ বিঘা জমিতে ‘গোয়ালন্দ ফিসারিজ’ নামে মাছ চাষ করছেন। তার এই প্রজেক্টে চারটি বটম ক্লিন রেসওয়ে পুকুর রয়েছে। পাশাপাশি পদ্মা- যমুনা নামে বিশাল আকৃতির বড় দুটি লেক রয়েছে। যেখানে কৃত্রিম স্রোত সৃষ্টি করে অনেক ধরনের মাছ চাষ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার মাছ চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে তার ফিসারিজের মাছ চাষ ও মাছ কিনতে আসছেন।
গোয়ালন্দ ফিসারিজের স্বত্ত্বাধিকারী শেখ মো: নিজাম বলেন, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এক বন্ধুর পরামর্শ নিয়ে এখানে সংযোজন করে মাছ চাষের আধুনিক ও নতুন এক পদ্ধতি, যার নাম বটম ক্লিন রেসওয়ে। এ পদ্ধতিতে পুকুরের তলদেশে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার হবে। আবার রেসওয়ে মাধ্যমে তৈরি হবে অক্সিজেন, যা মাছকে দ্রুত বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। পরীক্ষামূলকভাবে একটি পুকুরে চাষ করে লাভবান হওয়ায় আরো তিনটি পুকুরে এ পদ্ধতিতে শুরু মাছ চাষ করেছি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে কার্পজাতীয় মাছের পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির, টেংরা, শিং, বাইন ও পাবদা মাছের চাষ করা হচ্ছে এখানে। আর মাছের রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সার্বক্ষণিক নজরদারি। এখানে প্রতিটি পুকুরের জন্য আলাদাভাবে শ্রমিক নিয়োগ করা আছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০০ শ্রমিক কাজ করেন এখানে।
নিজাম আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রজেক্টে চারটি বটম ক্লিন রেসওয়ে পুকুর রয়েছে। এখানের উৎপাদিত মাছ ভোক্তাদের কাছে পৌছাতে ৫-৬ ঘন্টা সময় লেগে যায়। এতে মাছের স্বাদ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই মানুষ যেন সুলভ মুল্যে তরতাজা মাছ কিনতে পারে সেজন্য গোধূলী বাজার নামে বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেছি। উৎপাদিত মাছ বিভিন্ন মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে পৌছালে বেশি দামে কিনতে হয়। তাই আমাদের এই উদ্যোগ ক্রেতাদের মাছে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। আশা করছি আগামীতে আরো বড় আকারে মাছ চাষ করে ক্রেতাদের মাঝে পৌছে দিতে পারবো।
ফরিদপুর জেলার আলীপুর থেকে মাছ কিনতে আসা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এখানকার মাছ নদীর মাছের মতো স্বাদ। তাই এইখানে মাছ কিনতে আসি। পাশাপাশি এখানে মাছের দাম বাজারের মাছের থেকেও কম। তাই সুলভ মূল্যে মাছ কিনতে পারি।
মাছ কিনতে আসা রতন সরকার বলেন, এই ফিসারিজের মাছ নদীর মাছের মতো খুব স্বাদের। দামও কম। এই কেন্দ্রে ১০-১২ ওজনের বড় সাইজের মাছও পাওয়া যায়।
বিক্রয় কেন্দ্রের ম্যানেজার মো. জহুরুল ইসলাম ও কর্মচারী মো. সবুজ শেখ জানান, এখানে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়ে থাকে। এই প্রজেক্টে শতাধিক মানুষের কর্মস্থান হয়েছে। এখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন।