খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার জেলেপাড়ার নারীরা মাছ চাষে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন। স্বামী নির্ভর না হয়ে নিজেদের কিছু একটার করার ইচ্ছাতে তারা মাছ চাষকে বেছে নিয়েছেন। তাদের মাছ চাষে সফল হতে দেখে আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামেও নারীদের মধ্যেও মাছ চাষের আগ্রহ দেখা যায়।
জানা যায়, নিজেদের উপার্জন করার ইচ্ছা থেকে ডুমুরিয়া উপজেলার নারীরা মাছ চাষের উদ্যোগ গ্রহন করেন। প্রশিক্ষন নিয়ে মাছ চাষ করে এখন অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের মাছ চাষ করা দেখে আশেপাশের গ্রামের নারীরাও মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
নারী উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলেপাড়া এখন শুধু নামেই ব্যবহার হয়। এখানকার কোনো পুরুষ আর সাগরে মাছ ধরতে যায় না। মাছ ধরার উপকরণ ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে তাদের সংসার চালানোই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তাই তারা এখন দিনমুজুরী করে সংসার চালান।
নারী উদ্যোক্তা কল্পনা বিশ্বাস বলেন, স্বামীর টাকা খরচ করলে তার হিসেব দিতে হয়। এখন আমরা নিজেরা উপার্জন করি। এখন আর হিসেব দিতে হয় না। নিজেদের আয়ের টাকা ইচ্ছা মতো খরচ করতে পারি। পাশাপাশি সঞ্চয়ও করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, আমার মতো আরো ১১ জন নারী মাছ চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন স্ববলম্বী হয়েছে। কয়েক বছর আগেও আমরা কোনো উপার্জন করতে পারতাম না। বর্তমানে আমরা দলবদ্ধ হয়ে ঘেরে মাছ চাষ করি। কিন্তু এখন সবাই নারী উদ্যোক্তা।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ডুমুরিয়া উপজেলায় মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যেগে কয়েকটি এলাকার নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আর তাদের অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় যুক্ত হয়েছেন জেলেপাড়ার নারীরা।
জেলেপাড়ার মাছ চাষি স্বপ্না রানী বলেন, আমরা মৎস্য অধিদপ্তরের অধিনে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘেরে চিংড়ি চাষ করছি। এই এলাকায় প্রায় হাজারেরও বেশি চিংড়ির ঘের রয়েছে।
মাছ চাষি সুমতি বিশ্বাস বলেন, অনেক আশা নিয়ে মাছ চাষ শিখেছি। আগে ঘর থেকে বের হতে পারতাম না। মাছ চাষের জন্য এখন ঘর থেকে বের হতে পেরেছি। মাছ চাষে সফল হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এখন আমি স্বাবলম্বী হতে পেরেছি।
খোজ নিয়ে জানা যায়, মৎস্য অধিদপ্তরের ‘কমিউনিটি-বেইজড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকোয়াকালচার ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় নারীদের মাছ চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে জেলেপাড়ার ১২ জন নারী অংশ নেন। মৎস্য অধিদপ্তরের তত্বাবধানে জেলেপাড়ার ১২ নারী ও এলাকার আরো ১৩ জন পুরুষকে নিয়ে ‘রুদাঘরা বাগদা চাষি সিবিও’ সমিতি গড়ে তোলা হয়। সমিতির সবাই চাঁদা তুলে সেই টাকা দিয়ে নদীর পাড়ে জমি লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন।
মৎস্য অফিস থেকে ওই সমিতিকে ২ লাখ টাকা অনুদান দিয়ে তাদের লিজ নেওয়া জমিতে সাড়ে ১৫ হাজার বাগদা ও ২০ হাজার ৮০০ গলদা চিংড়ির রেণুসহ বিভিন্ন মাছ ছাড়ার ব্যবস্থা করেন। ইতোমধ্যে সেই মাছের ঘের থেকে ৩০ হাজার টাকার বাগদা চিংড়ি বিক্রি করেছেন। তাদের এমন উদ্যোগে এলাকায় বেশ সাড়া পড়ে যায়। এখান থেকে মাছ বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকার আয়ের আশা করছেন তারা।
সিবিও’র সভাপতি মুক্তা বিশ্বাস বলেন, এই উপজেলায় প্রথম মাছ চাষে নারীরা অংশগ্রহন করেন। মৎস্য বিভাগের সহযোগীতায় আমরা স্বাবলম্বী হতে পেরেছি। আশা করছি এই ভাবেই আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো।
ডুমুরিয়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, রুদাঘরায় বাগদা চাষ প্রকল্পে দুই লাখ সাত হাজার টাকা অনুদান দিয়েছে উপজেলা মৎস্য অধিদফতর। ওই প্রকল্পে তিন লাখ ২৪ হাজার টাকা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তারা মাছ চাষের ফল পাচ্ছেন। আশা করছি তারা অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারবেন। মৎস্য বিভাগ তাদের সব ধরনের সহযোগীতায় সদা প্রস্তুত।