কর্মসংস্থানের অভাবে হাওরপারের যুবকরা ঢাকামুখী বা বিদেশে পাড়ি জমায়। তবুও হাওর এলাকার অর্থনৈতিক দূরাবস্থা কাটতো না। তাই এখন হাওর অঞ্চলের যুবকরা মাছ উৎপাদনে ঝুঁকছেন। এখন ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে হাওরপারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। মাছ চাষ শুরু করায় এলাকার বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রত্যন্ত হাওরপারের এলাকার যুবকরা বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এখন যুবকরা ঢাকামুখী ও বিদেশে পাড়ি না জমিয়ে মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বর্তমানে মাছ উৎপাদন, আহরণ, পরিবহন এবং বাজারজাতকরণ কাজে শত শত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি নিজেদের আমিষের অভাবও পূরণ করছেন তারা।
উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের যুবক সোহেল আহমদ বলেন, আমি অর্থ উপার্জনের জন্য মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলাম। সেখানে প্রায় ১ দশক থাকার পর ২০১৬ সালে বাড়ি ফিরে আসি। বাড়ি ফিরে অন্যান্য কাজ করলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। তারপর ৩০০ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ শুরু করি। ১টি বিশাল পুকুরসহ ছোট্ট বড় আরও ৪-৫টি পুকুর রয়েছে। মাছ চাষ করে বছরে প্রায় কয়েক লাখ টাকা আয় করতে পারছি।
সোহেল আহমদ বলেন, বিদেশ থেকে ফেরত এসে মাছ চাষ করছি। মাছ চাষে ভালো আয় হচ্ছে। মাছ চাষে আমি স্বাবলম্বী হয়েছি। পরিবার নিয়ে সুখে আছি। সরকারি চাকরি আর বিদেশগামী না হয়ে দেশের প্রতিটি এলাকার যুবকদের প্রত্যেকের নিজ এলাকায় আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করা উচিত।’
শুধু বিদেশফেরত যুবক সোহেল আহমদ একাই নয়, তার মতো আলীপুর গ্রামের সিরাজ মিয়া, হাবীবুর রহমান, আব্দুস শহীদ, সজীব মিয়াসহ আশপাশের গ্রামের বেকার যুবকরা এখন মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। মাছ চাষ ও ব্যবসায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই গ্রাম থেকে কয়েকজন মৎস্যখামারি ইতোমধ্যে একাধিকবার জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষির স্বীকৃতি ও সম্মাননা পেয়েছেন। সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর ছাড়াও নূরপুর, টেংরাটিলা, বৈঠাখাই, সোনাপুর ও নন্দীগ্রামে কনছখাই এবং কানলার হাওরপাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে শত শত বাণিজ্যিক মাছ চাষের পুকুর। এসব পুকুরে চাষ হচ্ছে পাঙাশ, তেলাপিয়া, কাতলাসহ সকল প্রকার বিদেশি জাতের কার্প জাতীয় মাছ। গ্রামের প্রধান সড়ক ও হাওরের পাশে একের পর এক পুকুর দেখে মনে হয় প্রতিটি গ্রাম যেন পুকুরে ঘেরা।
দোয়ারাবাজার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি বর্মন বলেন, এই উপজেলায় ৪ হাজার ৬৬৬টি মাছ চাষে পুকুর রয়েছে। আমরা মাছ চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগীতা করছি। আশা করছি এই জেলার বেকারত্ব মাছ চাষের মাধ্যমে দূর হবে।