বিভিন্ন ধরণের মাছের সম্পূরক খাদ্যের তালিকা মাছ চাষিদের জেনে রাখা দরকার। মাছ চাষে লাভবান হওয়ার জন্য মাছের খাদ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মাছের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য প্রদান করলে মাছের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হওয়ার পাশাপাশি মাছের শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুত হয়ে থাকে। আজকে আমরা জেনে নিব বিভিন্ন ধরণের মাছের সম্পূরক খাদ্যের তালিকা সম্পর্কে-
বিভিন্ন ধরণের মাছের সম্পূরক খাদ্যের তালিকাঃ
বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করলে অবশ্যই চাষকৃত মাছকে নিয়মিত প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি পরিমান মত সম্পূরক খাবার খাওয়াতে হবে।
সাধারণত ফিসমিল, সয়ামিল, রেপসিড, এ্যাংকর ডাল,অটোব্রান, ডিওআরবি, সরিষার খৈল,বাদাম খৈল,আটা ইত্যাদির সংমিশ্রণে যে খাবার তৈরী করে মাছকে খাওয়ানো হয় সেটাকে সম্পূরক খাবার বলে।
সম্পূরক খাবার দুই প্রকারঃ
১। হাতে তৈরী
২। মেশিনে তৈরী
হাতে তৈরী খাবারঃ
যে ধরনের মাছ চাষ করবেন তার দেহে কতটুকু পরিমানে প্রোটিন, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন, মিনারেল ও খনিজ পদার্থের প্রয়োজন রয়েছে প্রথমে তার হিসাব নির্নয় করতে হবে।
তারপরে সহজলভ্য কোন্ কোন্ উপাদানে সে পরিমানে ভিটামিন গুলো পাওয়া যাবে তা বাজার থেকে সংগ্রহ করে নিবেন।
এবার পোনা মাছ হলে উপাদান গুলো মিশিয়ে পাউডার হিসাবে পানির উপর ছিটিয়ে দিবেন।
আর মজুদ কৃত মাছ হলে মিশ্রন গুলোর সাথে পরিমান মত পানি মিশিয়ে ঝুরঝুরা করে পুকুরে ছিটিয়ে দিবেন।
মেশিনের তৈরী খাবারঃ
দুই ধরনের-
১। পিলেট (ডুবন্ত খাবার)
২। ভাসমান খাবার
ডুবন্ত এবং ভাসমান খাবারের মধ্যেও কিন্ত আরো প্রকার রয়েছে। মেশিনের তৈরী কৃত খাবার দামে বেশি বলেই চাষীরা কিনতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু চাষ কৃত মাছ রয়েছে যা মেশিনের তৈরী খাবার ছাড়া চাষ করে তেমন ভাল ফল পাওয়া যায়না। এর মধ্যে কৈ, শিং,পাবদা, গুলসা উল্লেখ যোগ্য। তবে উল্লেখিত মাছগুলো যদি কার্পমাছের সাথে অল্প পরিমানে দিয়ে মিশ্রচাষ করা যায়, তাহলে হাতে তৈরী খাবারে চাষ করা সম্ভব।
কার্পজাতীয় মাছের খাবারঃ
খাবারের মডেল – ১ (পোনার খাবার খাবার) :-
১। রেপসিড ২০%
২। এ্যাংকর ৩০%
৩। আটা ১০%
৪। অটোব্রান ৩০% ৫। ফিসমিল ১০% প্রোটিন পাবেন কমপক্ষে ২৪ থেকে ২৫%
খাবারের মডেল – ২ ( মজুদ কৃত মাছের খাবার)
১। রেপসিড ২০%
২। এ্যাংকর ৩০%
৩। আটা ১০%
৪। অটোব্রান ৪০%
প্রোটিন পাবেন ২২ থেকে ২৩%
কৈ,শিং,মাগুর,পাবদা,গুলসাঃ
এই মাছগুলোর জন্য ৩০ থেকে ৩৫% হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন। একক চাষ করলে অবশ্যই মেশিনের তৈরী ভাসমান খাবার লাগবে। কার্পমাছের সাথে মিশ্রচাষ করলে হাতে তৈরী খাবারে চাষ করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে শতকে ২০ থেকে ৫০ পিচের বেশি দেওয়া যাবেনা।
তেলাপিয়া ও পাঙাশ :-
তেলাপিয়া যেহেতু সব ধরনের খাবার গ্রহনে অভ্যস্ত তাই স্বল্প খরচে ৩৫ টাকার মধ্যে হাতে তৈরী খাবার খাওয়াতে পারেন।
১। ফিসমিল ২০%
২। সয়ামিল বা রেপসিড ২০%
৩। এ্যাংকর ২০%
৪। আটা ১০%
৫। অটোব্রান ৩০%
যেহেতু এখন সয়ামিলের অনেক দাম, তাই সয়ামিলের বদলে রেপসিড বা বাদাম খৈল ব্যবহার করব। পাঙাশ মাছের আবার একটা খারাপ অভ্যাস রয়েছে, এরা মাটিতে খাবার পড়লে সেটা খেতে চাইনা। তাই হাতে তৈরী খাবার দিলে উচ্ছিষ্ট খাবার পঁচে পানি খারাপ হয়ে যায়।
তবে ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা ঠিক থাকলে পাঙাশ মাছও উল্লেখিত উপাদান দিয়ে হাতে তৈরী খাবার দিতে পারেন। অথবা উল্লেখিত উপাদান গুলো দিয়ে মেশিনের সাহায্যে পিলেট খাবার তৈরী করে দিতে পারেন। হাতে খাবার তৈরীর উপাদান গুলো কিনে উচু মাঁচা তৈরী করে, মাটি থেকে উপরে শুকনো পরিবেশে রাখতে পারলে ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত রেখে খাওয়ানো যায়। খেয়াল রাখবেন উক্ত ঘরের আদ্রতা যেন ঠিক থাকে, অন্যথায় খাবার গুলো ধলা পাঁকানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র: আধুনিক কৃষি খামার।