এক দশকে মাছ চাষে বিল্পব ঘটেছে। ফলে কার্প জাতীয় মাছ চাষে শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী। জেলায় বছরে প্রায় ১৭শ কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হয়। এসব মাছ উৎপাদন ও বিপণন-বিক্রির সঙ্গে জড়িত হয়ে কমছে বেকার সংখ্যা। কর্মসংস্থান ও আর্থিক লাভের আশায় বাড়ছে মাছ চাষ, হাসি ফুটছে চাষিদের মুখে।
গতবছরের সেপ্টেম্বরে মাত্র দুইদিনের ব্যবধানে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার কয়েক’শ পুকুরে ১৪ কোটি টাকার বেশি মাছ মারা যায়। মারা যাওয়া মাছের বেশিরভাগই ৩ থেকে ৪ কেজি ওজনের রুই, কাতল, সিলভারকার্পসহ কার্প জাতীয় মাছ। এতে বড় ধরণের ক্ষতিতে পড়েন এ জেলার মাছ চাষিরা।
তাই, গরমে মাছ চাষে বিশেষ কিছু সতর্কতা বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা। এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে দেওয়া তথ্য মাছ চাষিদের জন্য তুলে ধরা হলো:
দেশে প্রাকৃতিক উৎসে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে দিন দিন পুকুরে মাছ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। গরমের সময়ে মাছ চাষে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। গরম পড়তে শুরু করেছে। কয়েক দিন পর তীব্র গরম পড়বে। এ গরমে মাছ চাষিদের করণীয় কি সে বিষয়ে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মাছ চাষিরাই জানেন না। জেনে নিন প্রচণ্ড গরমে মাছ চাষিরা যেভাবে মাছের যত্ন নেবেন।
প্রচণ্ড গরমে মাছ চাষ সাধারণত যেসব সমস্যা দেখা দেয়:
১. মাছ চাষের আদর্শ তাপমাত্রা ২৪-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এবার রাজশাহীতে ৩৮-৩৯ এমনকি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে। শুধু রাজশাহী নয়, সারাদেশেই তাপমাত্রা বেশি। পরিবেশে তাপমাত্রা অত্যাধিক বেশি থাকলে পুকুরের পানিতে অক্সিজেন দ্রবীভূত থাকার পরিমাণ অনেক কমে আসে।
২. গরমের কারণে পুকুরের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৩. তীব্র গরমের ফলে মাছ চাষের পুকুরে অক্সিজের সংকট দেখা দিতে পারে।
৪. মাছ ভেসে ওঠা। এছাড়াও পরিবেশগত চাপ সহ্য করতে না পেরে মাছ মারাও যেতে পারে।
গরমে মাছ চাষে বিশেষ কিছু সতর্কতার মধ্যে যা যা করতে হবে:
১. মাছ ভেসে উঠলে কিছু টেকনিক প্রয়োগ করতে হবে। সকালে মাছ ভাসলে প্রতি শতকে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে। আবার দুপুরের পর ভাসলে একই হারে লবন প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে রাসায়নিক সমস্যা থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যাবে।
২. এ সময় বিশেষ পরিচর্যার মধ্যে অন্যতম হলো মাছের খাবার কমিয়ে আনতে হবে। পরিমিত খাবার দিতে হবে।
৩. হররা টেনে পুকুরের তলার গ্যাস বের করে দিতে হবে। এটি মাছ চাষের অত্যাবশ্যকীয় একটি করণীয়।
৪. অক্সিজেনের ঘাটতির জন্য শতকে অক্সিজেন ট্যাবলেট/ গুড়া প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে, এটি খুবই ব্যায়বহুল । বাণিজ্যিকভাবে যারা মাছ চাষ করেন তারা এ বিষয়টি খেয়াল করেন না।
৫. সম্ভব হলে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা। ১৫ দিন অথবা ১ মাসের মধ্যে পানি প্রবেশ করানো খুব ভালো। কিন্তু এখন অপরিকল্পিত পুকুর খননেন কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে না। তাই, পুকুরে মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। যেন দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলা যায়।
৬. স্থায়ী সমাধান হিসেবে এরেটর সেট করতে হবে। এছাড়াও পুকুরে সেচের মাধ্যমে পানি প্রবেশ করানো যেতে পারে।
গরমে মাছ চাষে বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলেই অনেকাংশে দুর্ঘটনা কমানো যায়। মাছ চাষে বছরব্যাপী পরিকল্পনার রাখতে হবে। তাহলে এসব সমস্যা হবে না।
সূত্র: এগ্রিকেয়ার২৪.কম