ভেড়া একটি গৃহপালিত পশু। ভেড়া পালনের মাধ্যমে অর্থিক লাভবান হওয়া সম্ভব। ভেড়া ও ছাগল পালন মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। ভেড়ার রোগবালাই কম হয়। তাছাড়া ভেড়া পালন ছাগলের থেকে সহজ। আমাদের দেশে ভেড়া পালনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। নিন্মে ভেড়ার খামার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ভেড়া পালনের প্রথম এবং প্রধান শর্ত হলো স্বাস্থ্যকর বাসস্থান। আমাদের দেশে যেসব কারণে ভেড়া মৃত্যু হয় তার অন্যতম কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর বাসস্থান। ভেড়ার বসবাসের জন্য এমন জায়গা নির্ধারণ করতে হবে যেখানে আলো বাতাসের পরিমাণ ভালো। তাছাড়া ভেড়ার বাসস্থান তৈরির সময় আমাদের আরও একটি বিষয় খেয়াল রাখা খুব জরুরি আর তাহলো মেঝে কাঁচা বা পাকা যেমনই হোক না কেন সেখানে ভেড়া না রেখে মাচা বা স্লাট এর উপর ভেড়া পালন করা ভালো।
ভেড়ার খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ
ভেড়া অন্য সকল গৃহপালিত পশুর মত খাদ্যর উচ্ছুষ্টাংশ খেয়ে থাকে। শুকনো খড়, গাছের পাতা লতা, সবুজ ঘাস ইত্যাদি খেয়ে থাকে। তাছাড়া ভেড়া খোলা মাঠে সবুজ ঘাস খেতে ভালোবাসে। ভেড়া একটি তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণি। ভেড়া আঁশ জাতীয় খাদ্য, লতা-পাতা প্রভৃতিকে সহজেই সাধারণ শর্করা তে পরিনত করতে পারে। তাই ভেড়া পালনে খাদ্য খরচ কম।
রোগবালাইঃ
অন্য সব গৃহপালিত পশুর মত ভেড়া রোগবালাই কম হয়। ভেড়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিয়মিত কৃমিনাশক ব্যবহার করা। প্রতি ২/৩ মাস পরপর ভেড়াকে কৃমিনাশক প্রয়োগ করতে হবে। ভেড়ার চর্ম রোগ রক্ষাতে বছরে অন্ততঃ দু’বার ভেড়ার পশম কাটতে হবে এবং গোসল করাতে হবে। তাছাড়াও এন্টরোটক্সিমিয়া, আমাশায়, ধনুষ্টংকার, ক্ষুরা, একথাইমা, পিপিআর, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগ হতে পারে।
ভেড়ার প্রজননঃ
ভেড়া অন্য সকল প্রাণীর মত প্রজননশীল। ভেড়ি সাধারণত ৬-৮ মাসে প্রজননে উপযোগী হয়। পুরুষ ভেড়া ৪-৬ সপ্তাহ বয়সে যৌন পরিপক্কতা লাভ করে। জাত ভেদে ভেড়ি যৌন পরিপক্কতা লাভ করে। ফিনশিপ জাতের ভেড়ি ৩-৪ মাস বয়সে এবং মেরিনো ভেড়ি কোন কোন সময় ১৮-২০ মাস বয়সে পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। ভেড়ার ঋতুচক্র ১৭ দিন পর পর আর্বতিত হয়। গর্ভকাল ৫ মাস। ১০-১২টি ভেড়ির জন্য একটি প্রজননক্ষম পাঠাই যতেষ্ঠ। একটি পাঠাকে ১০০-২০০ বারের বেশি প্রজনন করানো ঠিক নয়। এছাড়া অন্তঃপ্রজনন এড়াতে সময়ে সময়ে নিজের পালের পাঠা বাদ দিয়ে অন্য পাল থেকে পাঠা আনতে হবে।
ভেড়ার বাচ্চার যত্ন ও খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ
আমাদের দেশে ভেড়ার পরিকল্পিত বাণিজ্যিক খামার নেই। পারিবারিক পর্যায়ে ভেড়া পালন করা হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ভেড়ার বাচ্চার অধিক মৃত্যুহার। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে প্রসবকালীন অব্যবস্থাপনা ও পুষ্টিহীনতা প্রধান। বাচ্চাকে শাল দুধ খাওয়াতে হবে। ভেড়া বাচ্চার আলাদা যত্ন নিতে হবে। প্রসবকালে মা ভেড়িকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।
ভেড়া পালনের উপযোগিতাঃ
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভেড়া পালন করা হয় প্রধানত মাংস এবং উলের জন্য। কিন্তু আমাদের দেশে ভেড়া পালন করা হয় কোন কিছু চিন্ত্ ন্ করে। তবে বিক্রি করা হয় মাংসের জন্য।
ভেড়া পালনের সুবিধাঃ
১) ভেড়া পালনের প্রধান সুবিধা হচ্ছে এদের খাদ্য খরচ কম।গাছের লতা পাতা খেয়ে থাকে বলে ভেড়া পালনের ব্যয় কম লাগে।
২) ভেড়া স্বল্প জায়গায় লালন-পালন করা যায়।
৩) ভেড়ার অভিযোজন ক্ষমতা ছাগলের চেয়ে বেশি তাই যেকোন প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাওয়ায়ে চলতে পারে।
৪) ভেড়ার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।
৫) ভেড়া গরুর পালের সাথে পালন করা যায়।
৬) ভেড়া বছরে ২ বার বাচ্চা দেয়।
৭) ভেড়ার মাংস তুলনামূলকভাবে নরম, রসালো ও গন্ধহীন।
৮) ভেড়া পালন করে থেকে শুধু মাংসই পাওয়া যায় না, ভেড়া থেকে পাওয়া যায় উন্নতমানের গরম কাপড় তৈরির জন্য পশম এবং চামড়া।
সূত্র:আধুনিক কৃষি খামার।