পোলট্রি পণ্য বিশেষ করে কক-সোনালী এবং ব্রয়লার নিয়ে ভোক্তারা মাঝেমধ্যেই বিভ্রান্তিতে পড়েন। অনেক ভোক্তারাই জানেন না যে কক, সোনালী ও ব্রয়লার মুরগির মাঝে আসল পার্থক্যটা কোথায়। কক-সোনালী এবং ব্রয়লার মুরগি নিয়ে ভোক্তারা নেতিবাচক ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করেন। সেজন্য কক, সোনালী ও ব্রয়লার মুরগি সম্পর্কে প্রতিটি ভোক্তার একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক। তাই আসুন আজ জেনে নেয়া যাক কক, সোনালী ও ব্রয়লার মুরগি কি এবং এর পার্থক্য-
কক/ককরেলঃ
আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ কক এর মাংস খেতে পছন্দ করেন। কারণ কক এর মাংস ব্রয়লার এর মাংসের তুলনায় একটু বেশি শক্ত। কক/ককরেল পোল্ট্রি সায়েন্সের টার্ম অনুযায়ী এর গায়ের রঙ সাদা, লাল বা মিশ্র কালারের হয়। এছাড়াও পুরুষ চিকেনের বয়স যখন ১ বছর অতিক্রম করে তখনই মূলত তাকে কক বলা হয়। এছারাও যেসব পুরুষ চিকেনের বয়স ১ দিন থেকে এক বছরের নীচে সেসব চিকেনকে ককরেল বলে। যদিও এই তথ্যটি অনেক ভোক্তাদেরই অজানা রয়েছে। আশাকরি কক/ককরেল সম্পর্কে ভোক্তাদের যে বিভ্রান্তি আছে তা দূর হবে।
সোনালীঃ
আমাদের দেশে সোনালী মুরগি উদ্ভাবন হওয়ার পর থেকেই এটি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। সোনালী মুরগির মাংসের কালার এবং স্বাদ দেশীয় মুরগির মত হওয়ায় এটি ভোক্তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা আসলে সোনালী মুরগিটা কি। সোনালী মুরগি একটি দেশীয় হাইব্রিড চিকেন যা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক ফাহমি/ফাউমি ( মিশরীয় একটি জাত, যাকে আমাদের দেশে পাকিস্তানি মুরগীও বলে) জাতের মুরগী। এই জাতের মুরগিটি আর আই আর ( আমেরিকান জাত, রোড আইল্যান্ড রেড) পুরুষ /মোরগের( মেল) মধ্যে ক্রস ব্রিডিং করার মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে। যা দেখতে অবিকল দেশীয় মুরগির মত। পাশাপাশি খেতে অনেকটা দেশীয় মুরগির স্বাদের।
ব্রয়লারঃ
যুগ যুগ ধরে পোল্ট্রির নানান ক্লাশ, ব্রিড ভ্যারাইটির মধ্যে ধারাবাহিক মিলনের মাধ্যমে যে সকল মোরগ এবং মুরগির উদ্ভাবন করা সেগুলোকেই মূলত ব্রয়লার বলা হয়ে থাকে।
এসব জাতের মোরগ ও মুরগি মধ্যে দ্রুত বর্ধনশীল। দ্রুত বর্ধনশীল পরিবার গুলো বাছাই করে তাদের মধ্যে বারে বারে মিলন ঘটিয়ে এসব মুরগি উদ্ভাবন হয় বলে এরা রোগ প্রতিরোধী। এরা যে পরিমাণ খাবার খায় সে অনুপাতে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি ( এফ সি আর) পায়। এদের মৃত্যু হার, পা কত শক্তিশালী, বুকের মাংস কত বেশি, চামড়া কত হলুদ বা সাদা, গায়ে কি পরিমান পালক, ডিমের সাইজ কত বড়, বছরে কত টা ডিম পাড়ে, সেই ডিম থেকে কত % বাচ্চা ফুটে, বাচ্চা ঠান্ডা বা গরমে কত টা টিকে থাকে ইত্যাদি গুনাগুন বিবেচনায় বাছাই করা হয়। বাছাই করা চিকেন কে বলে স্ট্রেইন পৃথিবীতে বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন স্টেইন আছে।
ব্রয়লার সাধারণত সাদা রঙের হয়, তবে ভোক্তার চাহিদার কারনে কালার ব্রয়লার ও বাজারে পাওয়া যায়। উল্লেখিত কক/ককরেল, সোনালী এবং ব্রয়লার ( সাদা বা কালার) খামারে বানিজ্যিক ভাবে পালন করা হয়। সকল ধরনের মুরগী কে ফিড মিলে বানানো খাবার খাওয়ানো হয়। শুধু মাত্র ফিডের পুষ্টি উপাদান কম বেশি থাকে। সোনালী এবং ককে/ ককরেলের খাদ্যে প্রোটিন এবং এনার্জি সহ সকল পুষ্টি উপাদান কম থাকে। ব্রয়লারের খাদ্যে প্রোটিন এনার্জি সহ সকল পুষ্টি উপাদান উচ্চ হারে থাকে। যার কারণে ব্রয়লার ফিডের দাম কক বা সোনালী মুরগির ফিডের থেকে বেশি থাকে। যেহেতু ফিড মাংসে রুপান্তর হয়। সে কারণে কক বা সোনালী মুরগির মাংস থেকে ব্রয়লার মাংসে মানুষের জন্য দরকারী পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি পরিমাণে থাকে।
ব্রয়লারের বেশি বয়স ( ৩৫ থেকে ৫৬ দিন) এবং ওজন ২.৫ কেজির উপরে হলে মাংস শক্ত হয় এবং মাংসের প্রকৃত স্বাদ এবং সুগন্ধ পাওয়া যায়। বাজারে পাওয়া সবচেয়ে সস্তা এবং উন্নত গুনের মাংস হল ব্রয়লার মাংস।
সূত্র: আধুনিক কৃষি খামার।