তিনি বলেন, পচনশীল পণ্য পরিবহন, বিপণনে কোনো ক্ষতি হবে না।
এবারও সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখব।
রোববার (০৪ এপ্রিল) সকালে সচিবালয়ে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২১ উদ্বোধন উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের সচিব সাহেব জরুরি ভিত্তিতে কন্ট্রোল রুম করেছিলেন। গতবার প্রশাসনিকভাবে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে এমন করে দিয়েছিলাম যে এ জাতীয় পচনশীল পণ্য পরিবহন, বিপণনে কোনো ক্ষতি হবে হয়নি। এবারও সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখব। আমরা বিভিন্নভাবে মোবাইল ব্যবস্থাপনা করব। আমাদের যেসব গাড়ি আছে, সেগুলোতে মাছের সঙ্গে মাংস, ডিম সহজলভ্যভাবে যাতে মানুষের কাছে পৌঁছায়, সে ব্যবস্থা আমরা করব।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, করোনা থেকে বাঁচতে হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে শরীরে আমিষের চাহিদা মেটাতে হবে। পুষ্টি-আমিষের চাহিদা মেটাতে হলে সবচেয়ে বড় যোগানটা মাছ, মাংস, দুধ, ডিম থেকে আসে। বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্র্যান্ডেড, পৃথিবীর মধ্যে সেরা মাছ হলো ইলিশ মাছ। ইলিশের উৎপাদনে যতো রাষ্ট্র রয়েছে, তার মধ্যে আমরা প্রথম স্থানে। অন্যান্য বছরের চেয়ে আমাদের উৎপাদন ছিল নজিরবিহীন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে চমৎকার ও কঠোর ব্যবস্থাপনা করেছিলাম।
জলে, স্থলে, আকাশে বিভিন্নভাবে মনিটর করে, যাতে জাটকা নিধন না হয়, মা ইলিশ কেউ আহরণ করতে না পারে, ইলিশের অভয়ারণ্যে কোনোভাবে ক্ষতিকর কাজ কেউ না করতে পারে এবং যারা জাটকা ধরে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া, যারা কারেন্ট জাল, বেহুন্দি জাল ব্যবহার করে জাটকা নিধন করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের সাজা ও জরিমানার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার ইলিশসম্পদ রক্ষা ও উন্নয়নে সময়োপযোগী এবং বাস্তবমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাই ইলিশের টেকসই ও স্থায়িত্বশীল উৎপাদন নিশ্চিত করতে প্রতিবছর জাতীয়ভাবে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এ ধারাবাহিকতায় মৎস্যজীবী, ইলিশ ব্যবসায়ী, আড়তদার, ভোক্তাসহ সব শ্রেণির জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২১ উদযাপন করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের মোট মৎন্য উৎপাদনের ১২.১৫ শতাংশ আসে ইলিস থেকে, যা একক প্রজাতি হিসেবে সর্বোচ্চ। জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশের বেশি। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশ এদেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে আহরিত হয়। ইলিশ উৎপাদনকারী ১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে রয়েছে।
এদিকে, জাটকা সংরক্ষণের জন্য ০১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস দেশের ছয়টি জেলার পাঁচটি ইলিশ অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালী জেলার ইলিশ অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে।
এ বছর নিষিদ্ধ সময়ে অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট ছয়টি জেলার জাটকা আহরণে বিরত থাকা দুই লাখ ৪৩ হাজার ৭৭৮ জন জেলের জন্য মাসে ৪০ কেজি করে দুই মাসে ৮০ কেজি হারে মোট ১৯ হাজার ৫০২ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এ বছর ৪ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২১ উদযাপন করা হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীতে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মুজিববর্ষে শপথ নেব, জাটকা নয়, ইলিশ খাব’। এ বছর দেশের ইলিশ সম্পৃক্ত ২০টি জেলার জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২১ এর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ বছর করোনা মহামারির কারণে ঢাকায় মৎস্য অধিদপ্তরের জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠান হবে সোমবার (৫ এপ্রিল)।
এদিকে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সপ্তাহ সামনে রেখে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমিত পরিসরে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সপ্তাহের উদ্বোধনী দিন জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন ৫ এপ্রিল সীমিত পরিসরে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২১ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, মাছের আড়ত, বাজারসহ জনাকীর্ণ স্থানে জাটকা সংরক্ষণের গুরুত্ব ও এ সংক্রান্ত আইন বিষয়ে প্রচার কার্যক্রম, টেলিভিশনে জাটকা সংরক্ষণের গুরত্ব নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান প্রচার, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের সহায়তায় ঢাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভিডিওচিত্র প্রদর্শন, জাটকা সংরক্ষণে হাট-বাজার ও আড়তে মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা এবং ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত প্রকৃত মৎস্যজীবীদের মধ্যে বিকল্প কর্মসংস্থানের উপকরণ বিতরণ কর্মসূচি।
এছাড়া জেলা-উপজেলা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জেলেদের মধ্যে নৌকা বাইচ, হাডুডু, সাঁতার ইত্যাদি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন, জাটকা সমৃদ্ধ এলাকায় ভিডিও চিত্র প্রদর্শন ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, মৎস্যজীবী ও জেলে পল্লীতে সচেতনতামূলক ও উদ্বুদ্ধকরণমূলক পথ নাটক, আঞ্চলিক সংগীত ও লোক সংগীত পরিবেশন এবং জাটকা রক্ষায় জেলা-উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা। তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বছর সব কর্মসূচি সীমিত পরিসরে পালন করা হবে।
Source : Bangla news