মোঃআল আমিন,(কুমিল্লা)
বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন,পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও দারিদ্র্য দূরীকরণে মৎস্য চাষের অপরিসীম। এ গুরত্বকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি মাছ চাষকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিন উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের সাহিদুল ইসলাম (তৌহিদ)। সাহিদুল ইসলাম ছোট বেলা থেকেই বড়শী দিয়ে মাছ ধরতে পছন্দ করতেন। বড়শী দিয়ে মাছ ধরা থেকে তিনি মাছ চাষ কারার স্বপ্ন দেখেন।
তিনি ২০১৯ সালে সর্ব প্রথম ৮০ শতাংশের একটি পুকুর লিজ নিয়ে প্রাথমিকভাবে মাছ চাষ শুরু করেন। শুরুতে তিনি পুকুরে পাঙ্গাস মাছের সাথে কার্প জাতীয় মাছের চাষ করেন এবং চাষের মৌসুম শেষে তিনি স্থানীয় বাজারে সর্ব প্রথম ৬০ মন অর্থাৎ ২,৪০০ কেজি মাছ ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বিক্রি করেন। তার আনুষঙ্গিক সকল খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয় ৫৬ হাজার টাকা।
পরিবারিক চাহিদা পূরনের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয়ের লক্ষে তিনি ৫০ শাতাংশ ও ৩০ শতাংশের আরো দুটি পুকুড় ০৪ বছরের জন্য লিজ নেন। ৫০ শতাংশের একটি পুকুরে তিনি মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ করেন এবং ৩০ শতাংশের অন্য পুকুরটিতে রেণু চাষ করেন। তার পুকুরে উৎপাদিত রেণু নার্সিং করে পোনা উৎপাদন করেন এবং নিজ পুকুরে ছাড়েন পাশাপাশি স্থানীয় মৎস্য চাষীদের নিকট তার পুকুরে উৎপাদিত পোনা বিক্রি করে থাকেন।
বর্তমানে তার তিনটি পুকুরে কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ,মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ ও রেণু চাষ করেন। তার পুকুরগলো সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করার জন্য একজন শ্রমিক নিয়োজিত আছেন । তার পুকুরগুলো বসতবাড়ির পাশাপাশি হওয়ায় তার বাবা এবং দুই ভাগ্নে দেখাশোনা করেন।
সাহিদুল ইসলাম বলেন উপজেলা মৎস্য অফিস সদর দক্ষিণ কুমিল্লা থেকে বিভিন্ন প্যাকেজে অর্থাৎ কার্প জাতীয় মিশ্র চাষ,কার্প-গলদা মিশ্র চাষ, মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ,কার্প নার্সারী ব্যবস্থাপনা বিষয়ের উপর তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
তিনি আরো বলেন, কার্প জাতীয় মাছ চাষের ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ৩০-৩৫টি মাছের পোনা ছাড়েন এবংমনোসেক্স তেলাপিয়া চাষের ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ২০০-২৫০ টি পোনা পুকুরে ছাড়েন। পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য শতাংশ প্রতি ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি ব্যবহার করেন। শীতের শুরুতে তিনি শতাংশ প্রতি ১ কেজি চুন ও ১ কেজি লবণ ব্যবহার করেন।
মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি টংওয়ে ফিশ ফিড ব্যবহার করেন। ৮০ শতাংশের মিশ্র চাষের পুকুরটিতে প্রতিদিন ১৫ কেজি টংওয়ে ভাসমান ফিস ফিড ব্যবহার করেন। তার নার্সারী পুকুর থেকে প্রতিদিন ৪-৫ কেজি টংওয়ের ভাসমান নার্সারী ফিড ব্যবহার করেন। তিনি ১৫ দিন অন্তর অন্তর জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।
সাহিদুল ইসলাম সদর দক্ষিণ উপজেলা মৎস্য দপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর আওতায় মনোসেক্স তেলাপিয়ার চাষ ব্যবস্থাপনার উপর দুই ধাপে ০৪ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং মনোসেক্স তেলাপিয়ার প্রদর্শনী চাষী হিসেবে নির্বাচিত হন।
তিনি বলেন,তার পুকুরে মাছ চাষের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোন রোগ দেখা দেয়নি। তিনি সার্বক্ষনিকভাবে উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ রাখেন।
সাইদুল ইসলাম বর্তমানে চাঁদপুর জনতা হাইস্কুলের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।তিনি বলেন বেকার সমস্যা দূরীকরণ ও বাড়তি আয়ের জন্য মৎস্য চাষের বিকল্প নেই।তিনি আরও বলেন গ্রামীন যুবক যারা আছে তারা উপজেলা মৎস্য দপ্তর থেকে মাছ চাষের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজ উদ্যোগে মাছ চাষ করলে মাছের উৎপাদন বৃদ্বির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
প্রতিবেদনকারী
মোঃআল আমিন
কৃষি তথ্য কেন্দ্র সংগঠক
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর
কুমিল্লা