চাকরির পাশাপাশি মাছ চাষ করে লাভবান রাকিব আহমেদ
প্রতিবেদনকারীঃ জাকিয়া সুলতানা
মাছ আমাদের প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস। কর্মসংস্থান,বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন এবং পুষ্টি সরবরাহে মাছের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। কোনো নির্দিষ্ট জলাশয়ে পরিকল্পিত উপায়ে স্বল্প পুঁজি, অল্প সময় ও লাগসই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন নিয়ম মেনে প্রাকৃতিক উৎপাদনের চেয়ে অধিক মাছ উৎপাদনই মাছ চাষ।
চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার অনন্তপুর গ্রামে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন রাকিব আহমেদ। তিনি নিজ উপজেলায় উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা পদে নিয়োজিত রয়েছেন। চাকুরির পাশাপাশি অবসর সময়ে কিছু করবেন বলে মনস্থির করেন তিনি। সেই ভাবনা থেকেই কয়েক বছর আগে শুরু করেন মাছ চাষ।
মাছ চাষে আগ্রহী কেন হলেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বাড়ির পাশেই তাদের নিজস্ব পুকুর পতিত অবস্থায় পরে ছিলো। তিনি যেহেতু সাপ্তাহিক ছুটিসহ কিছু সময় অবসর পান সেই সময়টা তিনি কাজে লাগাতে চাইছিলেন।সেই থেকেই শুরু এবং এখন তিনি সফল একজন খামারী।
রাকিব আহমেদের পুকুরের আয়তন ৭৮ শতাংশ। পুকুরে তিনি মিশ্র মাছ চাষ করে থাকেন। পুকুরে সিলভার কার্প,রুই,কাতল,মৃগেল,গ্রাসকার্প,তেলাপিয়া মাছ চাষ করেন। তার পুকুরে সারা বছর পানি থাকে। মাছের খাবার হিসেবে সরিষা খৈল এবং তিল ব্যবহার করে থাকেন। দৈনিক এক বার খাবার দেয়া হয়। পুকুর থেকে তার বাৎসরিক লাভের পরিমাণ প্রায় ২ লক্ষ টাকা। তার পুকুরে রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ৫ জন লোক নিয়োজিত রয়েছেন।
মাছ চাষের ঝুঁকি বা সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন বড় কোন সমস্যার মুখোমুখি তিনি হননি। ছোট ছোট সমস্যার মধ্যে রয়েছে পুকুরে মাঝে মাঝে গ্যাস জমা এবং শীতকালীন ক্ষতরোগ। পুকুরে গ্যাস জমলে তিনি জাল টেনে আলোড়ন তৈরির মাধ্যমে গ্যাস দূর করেন । শীতকালীন ক্ষতরোগের সম্মুক্ষীন হলে তিনি স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে পুকুরে ঔষধ প্রয়োগ করে থাকেন।
পুকুর নির্বাচন সর্ম্পকে তিনি বলেন সারাবছর পানি থাকে অথবা মোসুমী পুকুর মাছচাষের জন্য উপযুক্ত। মাছচাষ ব্যবস্থাপনার জন্য আয়াতাকারে হওয়ার পাশাপাশি পুকুরের গভীরতা ৪ থেকে ৬ ফুট এবং ৬ থেকে ৭ মাস পানি থাকে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে। শীতের শুরুতে তিনি পুকুরে শতাংশ প্রতি ২০০ গ্রাম চুন ও লবন প্রয়োগ করেন। মাছের খাদ্য হিসেবে ফিড ব্যবহার করেন। তিনি আরো বলেন ৭ দিন পর পর পানিতে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে থাকেন এবং তাতে পানি দূষন কমে যায়। বাংলাদেশের মাটি পানি ও প্রকৃতি মাছ চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। পতিত জলাশয় গুলো ফেলে না রেখে মাছ চাষের আওতায় নিয়ে আসলে দেশে আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়।
মাছ চাষ ছাড়াও রাকিব আহমেদের বাড়িতে রয়েছে প্রায় ৫০ জোড়া কবুতর। যা দেখতে খুবই দৃষ্টিনন্দন। কবুতরের খাদ্য হিসেবে দেয়া হয় ভূট্টা,গম এবং ধান। অবসর সময়ে কবুতরের দেখাশোনা করেন তার স্ত্রী। উল্লেখযোগ্য তার স্ত্রীর একজন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা।
মাছ চাষে লাভবান হতে হলে মাছ চাষ পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি পর্বে মাছ চাষিকে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। মাছের অনেক চাহিদা থাকার কারণে মাছ চাষ করে ভালো আয় করা সম্ভব। যার কারণে শুধু বেকাররাই নয় অনেক চাকুরিজীবীরা চাকুরীর পাশাপাশি মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
প্রতিবেদনকারীঃ জাকিয়া সুলতানা, কৃষি তথ্য কেন্দ্র সংগঠক,মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর, আঞ্চলিক অফিস,ঢাকা।
চাকরির পাশাপাশি মাছ চাষ করে লাভবান রাকিব আহমেদ
৩৯