ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে তালমিলিয়ে দেশে পোলট্রি এবং মৎস্য উৎপাদন দ্রুত বাড়লেও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবে প্রাণিসম্পদ বিশেষ করে ছাগলের উৎপাদন তেমনটা আশানুরূপ বাড়েনি। এদেশে প্রাপ্ত প্রায় ২০ মিলিয়ন ছাগলের প্রায় ৯৩ শতাংশ পালন করে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ধরণের খামারিরা। অথচ গবাদি প্রাণিকুলের মধ্যে ছাগল পালন যতটা লাভজনক ও সহজ অন্যগুলো তেমন নয়। ছাগলের যেসব জাত আছে যেমন অ্যাংগোরা, বারবারি, বিটাল, যমুনাপারি, সুরতি, মারওয়ারি, মালবারি, গাড্ডি, কাশ্মিরী, পশমিনা, সানেন, টুগেনবার্গ, অরপাইন, মোহসানা, ফিজি, অ্যাংলোলু। এসবের মধ্যে বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল বিশ্বমানের বিশ্ব সেরা। এসব ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস যেমন সুস্বাদু, চামড়া তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে উন্নতমানের বলে স্বীকৃত। তাছাড়া ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা অধিক এবং তারা দেশীয় জলবায়ুতে বিশেষভাবে উৎপাদন উপযোগী। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল প্রধানত গোশত ও চামড়া উৎপাদনকারী জাত হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃত। এজন্য আমরা খুব গর্ব করে বলতে পারি ব্ল্যাক বেঙ্গল আমাদের ছাগলের জাত। এদের গড় ওজন ১৫-২০ কেজি। কখনও কখনও ৩০-৩২ কেজি পর্যন্ত হয়। দৈনিক ওজন বৃদ্ধির হার দৈনিক ২০-৪০ গ্রাম। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ছাগল পালনের মাধ্যমে একজন ভূমিহীন বা প্রান্তিক খামারি বাড়তি আয় করতে পারেন। এমনও প্রমাণ আছে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন করে অনেক আশাতীত সফলতা পেয়েছেন। সুতরাং ক্ষুদে মাঝারি কিংবা বড় খামারিদের জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন একটি নিশ্চিত লাভজনক কার্যক্রম।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের পশ্চিম বাংলা, আসাম ও অন্যান্য রাজ্যে পাওয়া যায়। আকারে ছোট ও বড় দুই রকমের হয়। এজন্য বয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রী ছাগলের ওজনের তারতম্য দেখা যায়। এদের ঘাড় এবং পেছনের অংশ উচ্চতায় প্রায় সমান থাকে। বুক প্রশস্ত। পাগুলো ছোট ছোট। ছাগ এবং ছাগীর শিং আছে। শিং ছোট বা মাঝারি আকারের হতে পারে। লম্বায় ৫-১০ সেন্টিমিটার হয়। শিং ওপরের দিক থেকে পেছনে বাঁকানো থাকে। কানের আকার ছোট ও মাঝারি কিছুটা ওপরের দিকে থাকে। দেহের গড়ন আঁটসাঁট। গায়ের রঙ সাধারণত কালো। তবে ধূসর সাদা বা বাদামি রঙেরও হতে পারে। গায়ের লোম ছোট ও মসৃণ। বছরে দুইবার এবং এক সাথে একাধিক বাচ্চা উৎপাদন করে। তবে দুধ উৎপাদন ক্ষমতা তুলনামূলক কম। স্ত্রী ছাগল ৯-১০ মাস বয়স হলেই প্রজননের যোগ্য হয় এবং ১৪-১৫ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা প্রসব করে। বলা যায়, গোশতের জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল সর্বোৎকৃষ্ট। তবে দুধের জন্য যমুনাপারি, বারবারি ভালো। আর পশমের জন্য গাড্ডি ও অ্যাংগোরা ভালো।
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনে সুবিধাদি-
০ পারিবারিক আয় বাড়ে;
০ আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়, পরিবারের গোশত ও দুধের চাহিদা মেটে;
০ পারিবারিক আমিষের চাহিদা পূরণ হয়;
০ চামড়া রফতানির মাধ্যমে অধিকতর আয় বাড়ে;
০ ছাগলের দুধ খুবই পুষ্টিকর এবং এলার্জি উপসর্গ উপশমকারী;
০ ব্ল্যাক বেঙ্গলের গোশত সুস্বাদু ও চামড়া আন্তর্জাতিকভাবে উন্নতমানের বলে স্বীকৃত;
০ অধিক বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এবং দেশীয় জলবায়ুতে বিশেষভাবে উৎপাদন উপযোগী;
০ ছাগল পালনে অল্প জায়গার প্রয়োজন হয়, পারিবারিক যে কোনো সদস্য দেখাশোনা করতে পারেন;
০ শয়ন ঘরে বা রান্না ঘরে কিংবা শয়ন ঘরের পাশে সাধারণ মানের কম খরচি ঘরে রাখা যায়;
০ দ্রুত বংশ বৃদ্ধি ঘটে বলে অল্প সময়ে সুফল পাওয়া যায়;
০ সব ধর্মালম্বী লোকদের জন্য ছাগলের গোশত সমাদৃত;
০ ছাগল পালনে অন্যান্য পশুর মতো আলাদ বিশেষ গোচারণভূমির প্রয়োজন হয় না;
০ ক্ষেতের আইলের, রাস্তার ধারে, বাড়ির আশপাশের অনাবাদি জায়গার ঘাস লতাপাতা খেয়ে জীবনধারণ করতে পারে;
০ বাড়ির আঙিনার আশপাশের গাছগাছড়ার লতাপাতা ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়;
০ অল্প পুঁজিতে লালন পালন করা যায়;
০ গবাদিপশুর মতো উন্নতমানের খাদ্য আবাসন বা অন্যান্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় না।
প্রযুক্তির বিশেষ বৈশিষ্ট্য : সাধারণ পদ্ধতি প্রযুক্তির বাইরে আরও কিছু বিশেষ প্রযুক্তি পদ্ধতি আছে, যা অনুসরণ করলে ছাগল পালন আরও বেশি লাভজনক হয়। নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুযায়ী ছাগল পালন করলে ছাগলের দৈনিক গড় ওজন বাড়ে, গর্ভধারণের জন্য কমসংখ্যক পালের প্রয়োজন হয় ও অল্প সময়ে অধিক বাচ্চা উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়া বয়স্ক ছাগী ও বাচ্চার মৃত্যুর হারও কমে যায়। মোটকথা আসল লাভ বেশি হয়।
খাদ্য ও খাওয়ানো পদ্ধতি : ফলপ্রসূ উৎপাদনের জন্য সঠিক পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি। কাক্সিক্ষত লাভ পাওয়ার জন্য ছাগলকে দুই ধরনের খাদ্য সরবরাহ করা উচিত; যেমন- আঁশযুক্ত বা আঁশজাতীয় খাদ্য ও দানাদার খাদ্য।
ক. আঁশযুক্ত খাদ্য :
গ্রামাঞ্চলে সাধারণত মুক্ত চারণ পদ্ধতির মাধ্যমে ছাগল পালন করা হয়। কাজেই আঁশজাতীয় খাবার সরবরাহের প্রয়োজন হয় না। কারণ, চড়ে খাওয়ার সময় ছাগল দিনভর তার নিজের পছন্দ ও প্রয়োজন অনুযায়ী আঁশজাতীয় রকমারি খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। তবে মুক্তচারণ পদ্ধতি সব সময় কাজে লাগানো যায় না। এজন্য বিশেষ সময় পরিকল্পিতভাবে খামারিদের আঁশযুক্ত খাবার অবশ্যই সরবরাহ করতে হবে।
শস্য মৌসুমে যখন ক্ষেতে ফসল থাকে তখন মুক্ত চারণের ফলে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ থেকে ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়। কাজেই, এ সময় ছাগলকে মাঠে বা রাস্তার ধারে বেঁধে চড়ানো উচিত। তবে বেঁধে চরালে ছাগল প্রয়োজন অনুযায়ী আঁশযুক্ত খাবার পায় না। তাই এ সময় ছাগলকে পরিকল্পিত মাত্রা অনুযায়ী আঁশযুক্ত খাবার সরবরাহ করতে হবে।
বর্ষা মৌসুমে ছাগলকে পুরোপুরি আবদ্ধ অবস্থায় পালন করতে হয়। এ সময়ে অবশ্যই আঁশযুক্ত খাবার হিসেবে বিভিন্ন গাছের পাতা ও সবুজ ঘাস দেয়া যেতে পারে। শুকনো মৌসুমে অর্থাৎ যে সময়ে ক্ষেতে ফসল থাকে সে সময়ে ৫০ ভাগ গাছের পাতার সাথে ৫০ ভাগ সবুজ ঘাস সরবরাহ করলে ভালো উৎপাদন পাওয়া যাবে। ক্ষুদ্র খামারিরা বাড়ির আঙিনা, জমির আইল ও রাস্তার পাশে নেপিয়ার, আলফালফা, শিম, ইপিল ইপিল, কাঁঠালপাতা এসবের চারা রোপণ করতে পারেন। এ থেকে সারা বছর আঁশযুক্ত খাবার সংগ্রহ করা সহজ হবে।
খ. দানাদার খাদ্য :
শুধু আঁশযুক্ত খাবার ছাগলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের চাহিদা মেটাতে পারে না। আশানুরূপ উৎপাদন পেতে হলে আঁশযুক্ত খাবারের সাথে দানাদার খাবার অবশ্যই সরবরাহ করা প্রয়োজন। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট হারে দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ ব্যবহার করলে ছাগল থেকে ভালো উৎপাদন-ফলাফল পাওয়া সম্ভব। খাবার যাই-ই প্রয়োজন হোক না কেন যে কোনো দানাদার খাদ্যের মিশ্রণে শতকরা হারে হবে চাল-ভুট্টা-গমের ভুষি ৪৫ ভাগ, চালের কুঁড়া ২০ ভাগ, খেসারি ভাঙা ১৮ ভাগ, তিলের খৈল ১৬ ভাগ, লবণ ০.৯ ভাগ, এমবাভিট ০.১ ভাগসহ যেন মোট ১০০ ভাগ হয়। লক্ষ রাখতে হবে যাতে এ খাবারের মিশ্রণে শতকরা ১৬ ভাগ অপরিশোধিত আমিষ থাকে। তা না হলে সেটাকে সুষম খাবার বলা যাবে না। দানাদার খাদ্যের মধ্যে চালের ক্ষুদ-কুঁড়া, গম ও ভুট্টা চূর্ণ, গমের ভুষি, ছোলা-খেসারি ভাঙা, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, ভিটামিন, শুঁটকির গুঁড়া ও খনিজ লবণ, আয়োডিনযুক্ত লবণ এগুলো মাত্রা ও অনুপাত অনুযায়ী খাওয়ালে লাভ বেশি হবে।
খাওয়ানো পদ্ধতি : পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার সুবিধামতো সময়ে দিনে দুই বা ততোধিক বারে সরবরাহ করলেই চলবে। আর দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতি ছাগীকে প্রতিদিন ১৬০ গ্রাম অর্ধেক করে সকালে ৮০ গ্রাম এবং বিকালে ৮০ গ্রাম খাওয়াতে হবে এবং তিন মাস বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ছাগলের বাচ্চাকে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম (৫০ গ্রাম সকালে ও ৫০ গ্রাম বিকালে) সরবরাহ করতে হবে।
ছাগল থেকে কাক্সিক্ষত উৎপাদন পেতে হলে খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। সব সময় বয়স অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ দিতে হবে। ছাগলের খাদ্য তালিকায় স্টাটার খাদ্য, বাড়ন্ত খাদ্য এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগলের খাদ্য এ তিন ধরনের খাদ্য মাত্রা নিশ্চিত করতে হবে বয়স অনুযায়ী। ১ দিন থেকে ৩ মাস, ৩ মাস থেকে ১ বছর এবং ১ বছরের বেশি বয়স্কদের জন্য তিন ধরনের খাদ্য সরবরাহ দিতে হবে।
পানি :
পানির অপর নাম জীবন। আরও ভালোভাবে বলা দরকার বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। পানি সব প্রাণীর মতো ছাগলের জন্যও পরিমিত পরিমাণে সরবরাহ থাকা দরকার। খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন বিশুদ্ধ হয়। সে জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ছাগল পালন ঘরের খুব কাছেই যেন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বাসস্থান : পারিবারিক পর্যায়ে ছাগল পালন ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে পারলে কম সময়ে যেমন ছাগল পালন সহজ হয় তেমনি উৎপাদনও বেশি পাওয়া যায়। একসাথে অনেক ছাগল পালন করলে বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনায় বাসস্থান তৈরি খুব জরুরি। গ্রামাঞ্চলে মুক্তচারণ পদ্ধতিতে ছাগল পালন করা হয়। এজন্য দিনে বাসস্থানের তেমন কোনো চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। শুধু রাতে নিরাপদে বাসস্থানে রাখার প্রয়োজন হয়। এজন্য সম্পূর্ণ আলাদা স্থানে অথবা শোয়ার ঘরের একপাশে বা বারান্দায়ও রাখার ব্যবস্থা করা যায়। ছাগলের ঘরের চাল হিসেবে টিন, টাইল, ছন, গোলপাতা, খড় বা গাছের পাতা ব্যবহার করা যায়। আলাদা ঘর নির্মাণের সময় অবশ্যই উঁচু স্থান যেখানে বৃষ্টির পানি জমে না এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাস পাওয়া যায় এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। স্যাঁতসেঁতে ভিজা জায়গায় ছাগল থাকতে চায় না। তাছাড়া এসব জায়গায় পরজীবী ও জীবাণু আক্রমণ করে। সেজন্য শুকনা জায়গার প্রয়োজন হয়। ছাগলের বাসস্থান দুই রকমের হয়। ভূমি সমতল ঘর এবং খুঁটির ওপর ঘর। তবে ছাগলের ঘরে মাচা আবশ্যকীয়। মাচার উচ্চতা ৪-৫ ফুট এবং মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা ৬-৮ ফুট হওয়া দরকার। মাচার বাঁশ বা কাঠের মধ্যে ফাঁকা রাখতে হবে। এতে ছাগলের পায়খানা প্রস্রাব সহজেই নিচে পড়ে যাবে মাচা জীবাণুমুক্ত থাকবে। প্রতিদিন সকাল বেলা ছাগলের বাসস্থান পরিষ্কার করতে হবে। বাসস্থানটি যাতে ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছাগলের প্রধান শত্রু ঠাণ্ডা । এজন্য শীতকালে বেশি ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করার জন্য ছাগলের ঘরে প্রয়োজন অনুযায়ী চট পলিথিন দিয়ে পর্দার ব্যবস্থা করতে হবে। শীতকালে বাচ্চাকে রাতে মায়ের সাথে ব্রুডিং প্যানে রাখতে হবে।
ছাগলের বাচ্চার যত্ন :
শুকনা জায়গায় ছাগলের বাচ্চা প্রসবের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চা প্রসবের পর বাচ্চার পুরো শরীর ভালোভাবে পরিষ্কার করে নাভির নিচের নাড়ি কেটে দিতে হবে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাচ্চাকে শাল দুধ অর্থাৎ মায়ের ওলান থেকে নিঃসৃত প্রথম দুধ খাওয়াতে হবে। কারণ এতে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। জন্মের পর বাচ্চার নাভি টিংচার আয়োডিন দিয়ে মুছে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মায়ের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ না হলে কৃত্রিমভাবে দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথম সপ্তাহ বাচ্চাকে ৫ ঘণ্টা পরপর খাওয়াতে হবে। পরবর্তী সপ্তাহে দিনে ৪ বার খাওয়ালেই চলবে। উল্লেখ্য যে, কৃত্রিমভাবে দুধ খাওয়াতে হলে বোতল ও নিপল অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে। জন্মের ২-৩ সপ্তাহ পর হতেই দানাদার ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। মোটকথা বয়স্ক ছাগলের চেয়ে বাচ্চা ছাগলের প্রতি একটু বেশি নজর দিতে হবে একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
ছাগলের রোগ :
ছাগল নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যেসব রোগ দেখা যায় তার মধ্যে আছে সংক্রামক রোগ, পরজীবীজনিত রোগ, অসংক্রামক রোগ, অপুষ্টিজনিত রোগ, বিপাকীয় রোগ। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকারক রোগ হলো পিপিআর, গোট পক্স, একথাইমা, নিউমোনিয়া, ক্রিমি এসব। তাছাড়া আছে তাড়কা ওলান প্রদাহ, ধনুস্টংকার, গর্ভপাত, ক্ষুরা রোগ, জলাতংক, মাইকোপ্লাজমোডিসিস, পায়ের ক্ষত রোগ, পেটের পীড়া, সালমোনেলাসিস এসব। ছাগলকে রোগমুক্ত রাখতে না পারলে ছাগল পালন করে লাভবান হওয়া সম্ভব নয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাই রোগবালাই থেকেমুক্ত রাখার প্রধান উপায়। ছাগলকে রোগমুক্ত রাখতে হলে যেসব বিষয়গুলোর প্রতি অবশ্যই যতœবান হতে হবে সেগুলো হলো-
ছাগলের ঘর নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। ঘর যাতে ভেজা স্যাঁতসেঁতে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে;
ছাগলের খাবার ও পানিতে যাতে রোগজীবাণু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে;
নতুন ছাগল কেনার পর অন্তত ৭ দিন আলাদা করে রাখতে হবে। যেসব রোগের টিকা পাওয়া যায় সেসব টিকা দিতে হবে;
কোনো রোগের লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্র রোগাক্রান্ত ছাগলকে আলাদা করে রাখতে হবে। রোগাক্রান্ত ছাগলকে দ্রুত কাছের পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসা প্রদান করতে হবে;
রোগের কারণে মৃত ছাগলগুলোকে মাটিতে পুঁতে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে;
নিয়মিত ও পরিমিত ছাগলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে;
মনে রাখতে হবে চিকিৎসার চেয়ে নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অধিক গ্রহণযোগ্য। তাই নিয়মিত টিকা দিতে হবে।
কৃমি দমন : কৃমি ছাগলের মারাত্মক সমস্যা। বয়স্ক ছাগল ও বাচ্চার কৃমি দমনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, শুধু পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ ও উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই আশানুরূপ উৎপাদন পাওয়া যায় না। কৃমির জন্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। কাজেই কাছের প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল থেকে ছাগলের মল পরীক্ষা করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ছাগলকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গবেষণা করে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ২, ৩ বা ৪টি ছাগল পালন করলে বছরে গড়ে যথাক্রমে ৩১৫০, ৪১৫০ বা ৫৩৭৩ টাকা আয় করা যায়। আমাদের দেশের দরিদ্র খামারি ও দুস্থ মহিলারা এ নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে ছাগল পালন করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার যেমন সুযোগ রয়েছে, তেমনি রয়েছে নিজের অবস্থার উন্নয়নের উজ্জ্বল সম্ভাবনা। কম সময়ে দ্রুত আয়ের জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন পারিবারিকভাবে নতুন পথের সন্ধান দিতে পারে। অল্প কিংবা বেশি ছাগলের খামার প্রতিষ্ঠা করে বহুমুখী আয়ের পথ সুগম করা যায়। এখানে পুঁজিও তুলনামূলকভাবে কম লাগে। আর পারিবারিকভাবে সবাই অংশগ্রহণ করে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন করতে পারে। প্রান্তিক, ক্ষুদ্র, মাঝারি কৃষকের জন্য এটি একটি দারুণ লাভজনক আয়ের পথ-কৌশল হতে পারে। এ ব্যাপারে যে কোনো সুপরামর্শের জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত ও পরিমিত যোগাযোগ নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে।
কৃষি তথ্য সার্ভিস
Sent by Md.Arafath Hossain (Barisal)