মাছে ভাতে বাঙালি। এরপরও বাংলার একেক অঞ্চলে রয়েছে নিজস্ব কিছু খাবার। রসনাবিলাসি বাঙালির পাতে তাই নানান রকম ঐতিহ্যবাহী খাবার আজো শোভা পায়। তেমনি একটি উল্লেখযোগ্য খাবার হল সিদল।
সিদল ভর্তা তৈরির অন্যতম উপাদান। সিদলের ভর্তা কিংবা লতি তরকারি খায়নি এমন বাঙালি খুব কমই পাওয়া যাবে।
সলফা গ্রামের পাঁচটি পরিবার তাদের বাপ-দাদার আদি এ পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন। এক সময় ওই গ্রামের ৪০টি পরিবার সিদল তৈরির কাজ করতো। তবে বর্তমানে তাদের সবাই পেশা বদলে চলে গেছেন অন্য পেশায়।
রবীন্দ বিষ্ণু বলেন, দুই জাতের সিদল তৈরি হয়। একটি হচ্ছে পোয়া অন্যটি পুঁটি মাছের। পোয়া মাছ চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করা হয়। পুঁটি মাছ মেঘনা ও সিলেট এলাকা থেকে আসে। পুঁটি মাছ আনার পর এগুলোর পেট কাটতে হয়। আমাদের এলাকার প্রায় ১০০ নারী প্রতিদিন এ কাজ করেন। মাছের পেট কেটে নিয়ে জাল দিয়ে তেল ওঠানো হয়। ওই তেল নারীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে কিনে রাখেন রবীন্দ্র চন্দ্র ও বিষ্ণু চন্দ্র সরকার। এরপর মাছগুলো মাচায় শুকানোর কাজ চলে। মাছ শুকানোর এক মাস পর মটকার ভেতর ঢুকানো হয়। তখন ওই তেল ব্যবহার করা হয়।
বছরের পৌষ-মাঘ মাসে মটকাগুলো মাটির নিচে গর্ত করে তিন মাস পুঁতে রাখার পর তৈরি হয় সিদল। এ বছর ৪০০ থেকে ৫০০ মটকা সিদল তৈরি হবে ।
প্রতি বছর আশ্বিন, কার্তিক মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত চলে এ কাজ।
রবীন্দ্র চন্দ্র সরকার আরো বলেন, বংশ পরম্পরায় আমরা এ কাজ করে আসছি। এক সময় নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয় উন্মুক্ত থাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এখন আর এলাকায় মাছ পাওয়া যায় না। মাছ সব কিনে আনতে হয়। বাজারে সিদলের চাহিদা থাকলেও পুঁজির অভাবে বেশি তৈরি করতে পারি না।
এই মৌসুমে ১০০ মণ পুঁটি সিদল করছি। আমাদের সিদল ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়।
এছাড়া ভারতের আগরতলা এবং তেল্লামুড়ায় আমাদের কিছু পাইকার আছে। তারা এসে সিদল নিয়ে যান। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সিদল উৎপাদন করে এ শিল্প টিকিয়ে রাখা যাবে।
মুরাদনগর থানার নির্বাহী অফিসার মো. আলাউদ্দীন ভূঞা জনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সলফা গ্রামের পাঁচটি পরিবার সিদল প্রস্তুত করছে। আমরা চেষ্টা করছি এদের পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য।
সূত্র:ডেইলি কুমিল্লা নিউজ