বাংলাদেশ মাছ চাষে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে। বায়োফ্লক এর পর মাছ চাষে নতুন দিগন্ত হচ্ছে বটম ক্লিন রেসওয়ে (Bottom Clean Raceway System) পদ্ধতিতে মাছ চাষ। গবেষনা এবং বিজ্ঞানের প্রভাবে মাছ চাষের আধুনিক এই নতুন দিগন্ত নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা।বাংলাদেশে মাছ চাষের প্রথম আধানিবিড় পদ্ধতির মাছ চাষ দিগন্ত উন্মোচন করছেন রিয়াজ উদ্দিন পাড়ায় যা মুলতঃ রাজবাড়ির জেলা গোয়ালন্দ থানায়। মাছ চাষে বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতি বাংলাদেশে প্রথম সফলতার খবর এটি। গোয়ালন্দ ফিসারিজ বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতির মাছ চাষে বাংলাদেশে প্রথম।
বটম ক্লিন রেসওয়ের উদ্দোক্তা গোয়ালন্দ উপজেলা মেয়র। মেয়র শেখ মোহাম্মদ নিজাম এই বটম ক্লিন রেসঅয়ে মাছ চাষ শুরু করছেন। বায়োফ্লক মাছ চাষ পদ্ধতির পর বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতি হতে পারে নতুন মাছ চাষের বিপ্লব।
কিভাবে বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে মাছ চাষ করবেন?
বায়োফ্লক হল বিজ্ঞান সম্মত মাছ চাষ পদ্ধতি আর বটম ক্লিন রেসওয়ে হচ্ছে অত্যধুনিক আধুনিক মাছ চাষ। এখানে আপনাকে পুরো পুকুর উন্নত ভাবে ট্যাংকে পরিনত করতে হয়। বটম ক্লিনের একটি ট্যাংক ১০০ শতাংশ বা তার বেশি হতে পারে।
বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে পানিতে রেস বা স্রোত তৈরি করে এবং জলাশয়ের তলানি পরিস্কারের মাধ্যমে পানির পরিবেশ মাছের জন্য উপযোগী করা হয়।
বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে ট্যাংক কেমন হবে?
এই পদ্ধতিতে ট্যাংক গোলাকার হলে সব থেকে ভাল উপযোগী। গোলাকার ট্যাংকে এরেশন করলে সহজে স্রোত তৈরি হয়। এই স্রোতের মাধ্যমে মাছ থেকে তৈরি বর্জ বা তলানি খুব সহজে বটম ট্যাংকে জমা হয়।
মাছ চাষের বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে পুকুরে মাঝ বরাবর একটি ঢালু গোলাকার ট্যাংক আকৃতির ট্যাংক করার প্রয়োজন যার গভিরতা ৭ ফিট এবং ব্যাস ১৩-১৪ ফিট হলে ভাল। এই ট্যাংক থেকে পাম্পের মাধ্যমে মাছের বর্জ বা তলানি প্রতি তিন ঘন্টা পর পর তুলে ফেলতে হবে।
বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে খাদ্য প্রয়োগঃ
খাবার মান ভাল হওয়া খুব জরুরি। সাধারন জলাশয়ে খাবার দেয়ার অনুপাত অনুসারে বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে মাছের খাবার দিতে হবে। মাছের খাবার বিষয়ে জানতে স্বাদু পানিতে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা লেখাটি পড়ে আসুন উপকার হবে।
চাষের বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে (Bottom Clean Raceway System) মাছের খাদ্য পরিবর্তন (FCR= Feed Conversion Ratio) হার সাধারন জলাশয়ের খাদ্য পরিবর্তন হার থেকে অনেক বেশি হয়।
বায়োফ্লকে (Biofloc) মাছের খাদ্য পরিবর্তন (FCR= Feed Conversion Ratio) যেখানে উল্ল্যখযোগ্য সেখানে বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে মাছের খাদ্য পরিবর্তন (FCR= Feed Conversion Ratio) হার বিবেচনা অনেক ভাল। বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে মাছের খাদ্য পরিবর্তন (FCR= Feed Conversion Ratio) হার ১.২ঃ ১ হয়ে থাকে।
বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে মাছের উৎপাদন পুকুরে বা জলাশয়ের মাছের উৎপাদনের চেয়ে ১০ গুন থেকে ২০ গুন বেশি। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ একশ শতাংশের একটি জলাশয় থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টন মাছ উৎপাদন সম্ভব।
বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে বিনিয়োগের হার কেমন?
এই বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে মাছ চাষের একটি এক একর ট্যাংক তৈরি করতে ৬০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। কিন্তু এ বিনিয়োগ আপনার প্রথম বছরই ফেরত নিয়ে আসা সম্ভব।
বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে মাছের ঘনত্ব
এই পদ্ধতিতে মাছের ঘনত্ব সাধারন জলাশয়ে মাছ চাষের থেকে ১০ গুন বেশিতে দেয়া যায়। ১০০ শতাংশ একটি পুকুরে এক লক্ষ শিং এবং গুলসা সাথে কার্প মাছ আছে দশ হাজার। পানির গভিরতা ৬ ফিট হলে মাছ চাষে তিন স্তরে মাছ দিয়ে হয়। এ ক্ষেত্রে উপরের স্তরে কার্প এবং মধ্য স্তরে পাবদা ও নিচের স্তরে শিং ও গুলশা দেয়ায় উত্তম।
বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে আয় কেমন হবে?
বটম ক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে মাছ চাষের আয় ও ব্যয়। এ পদ্ধতি অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ করা যায়। সে জন্য আপনি এক বছরে ১০০ শতাংশ একটি ট্যাংক পুকুর থেকে ২-৩ কোটি টাকা ব্যায় করে ৫- ৬ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।