ভেটকি মাছের বিকল্প হিসেবে এবার রাজ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ‘জেড পার্চ’ নামে এক নতুন ধরনের মাছ চাষ শুরু হয়েছে। অষ্ট্রেলিয়াতে মূলত এই মাছের দেখা মেলে। থাইল্যান্ডে প্রচুর চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশেও অনেকে এই মাছের চাষ করছেন। মাছটি ৩৫ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হয়। আটমাসে ওজন হয় আটশো থেকে ন’শো গ্রাম। মিষ্টি জলের পাশাপাশি সামান্য নোনা জলেও এই মাছ চাষ করা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। তবে, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে হাতেগোনা কয়েকজন এই মাছটির পরীক্ষামূলক চাষ করছেন। চাষ শুরু হলেও নয়া এই মাছের ব্রিডিং এখনও শুরু হয়নি।
নৈহাটির মৎস্যচাষি বাবলু ঘোষ জানিয়েছেন, থাইল্যান্ড থেকে তিনি ‘জেড পার্চ’-এর সাড়ে চার হাজার চারাপোনা নিয়ে এসে তাঁর পুকুরে ছেড়েছেন। ন’মাসে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হয়েছে ওই মাছ। জলাশয়ে প্রতি বর্গমিটারে এই মাছ সংখ্যায় তিনটি ছাড়া যেতে পারে। এই মাছের সঙ্গে বিঘা প্রতি জলাশয়ে ৯০টি কাতলা মাছ চাষ করা যেতে পারে।
ভেটকির বদলে এই মাছ চাষের সুবিধা হল, ভেটকি বিভিন্ন ছোট মাছ খেয়ে বেড়ে ওঠে। কিন্তু, জেড পার্চ নামে এই মাছকে সাধারণ খাবার দিলেই হয়। ভেটকির তুলনায় অনেকটাই কম দামে এই মাছ বাজারে মিলবে বলে দাবি মৎস্যচাষিদের। রাজ্য মৎস্য দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল) ডঃ মধুমিতা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জেড পার্চ মাছটি কই প্রজাতির। কিন্তু, এর ওজন দেড় কেজির মতো হয়। খেতে ভেটকির মতোই। বিশেষ পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই মাছের অতিরিক্ত শোষণযন্ত্র রয়েছে। ফলে জল দূষিত হলেও সহজে মারা যায় না।
অন্যদিকে, মিঠা জলে মাছের ডিমপোনা উৎপাদনে নজির সৃষ্টি করতে চলেছে বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের রামসাগর। এখানে শতাধিক মৎস্যচাষির প্রায় আটশোরও বেশি হ্যাচারি রয়েছে। যেখানে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, জাপানি পুঁটি, বাটা সহ বিভিন্ন মাছের ডিমপোনা উৎপাদন হচ্ছে। যা রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি চলে যাচ্ছে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, তামিলনাড়ু, হরিয়ানা, রাজস্থানে। খরাপ্রবণ বাঁকুড়ার রামসাগরে মাছের ডিমপোনা উৎপাদন বর্তমানে কার্যত কুটিরশিল্পে পরিণত হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় মৎস্য চাষি দিবসে রাজ্যের আরও চারজন প্রগতিশীল মৎস্যচাষির সঙ্গে ডিমপোনা উৎপাদনে সাফল্যের নজির সৃষ্টি করায় রামসাগরের কৌশিক নায়েককে সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ফিশারিজ এডুকেশনের তরফে সংবর্ধিত করা হয়। সেখানে হ্যাচারির মাধ্যমে কীভাবে তাঁরা ডিমপোনা উৎপাদনে সাড়া ফেলেছেন তা তুলে ধরেন তিনি। উদ্যোগের প্রশংসা করেন মৎস্য বিজ্ঞানীরা।
রামসাগরের মৎস্যচাষি কৌশিক নায়েক জানিয়েছেন, রাজ্য মৎস্য দপ্তরের কাছ থেকে তাঁরা আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছেন। মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ডিমপোনা উৎপাদন করছেন তাঁরা। এক-একজন মৎস্যচাষি বছরে প্রায় দশ কোটি ডিমপোনা উৎপাদন করছেন।
রামসাগর মাছ ডিমপোনা প্রাইমারি কো-অপারেটিভ সমিতির সম্পাদক গৌতমকুমার খাঁ জানিয়েছেন, ব্রিডিংয়ের জন্য তাঁদের আলাদা পুকুর রয়েছে। মাছকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ওই পুকুরে ছাড়া হয়। সেখানে ডিম পাড়ার পর ব্রুডার মাছ তুলে নিয়ে তার পর মশারি দিয়ে ডিম তুলে হ্যাচারিতে ছাড়া হয়। ব্রিডিংয়ের জন্য তাঁরা ১:১ অনুপাতে স্ত্রী ও পুরুষ-মাছ ছাড়েন। হ্যাচারিতে ডিম ছাড়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডিমপোনা তৈরি হতে শুরু করে। তার পর সেই ডিমপোনা তুলে হাপায় ছাড়া হয়। সেখান থেকে বিক্রি করা হয়। রাজ্যের আর্থিক সহযোগিতায় ওভারহেডেড ট্যাঙ্ক সহ দু’টি হ্যাচারি করা হয়েছে।
সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ফিশারিজ এডুকেশনের বিজ্ঞানী বি. কে মহাপাত্র বলেছেন, রাজ্যে যেসব মৎস্যচাষি নতুন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করে মাছ চাষে দিশা দেখাচ্ছেন, এমন পাঁচজনকে মৎস্যচাষি দিবসে সংবর্ধিত করা হয়েছে। পাশাপাশি কীভাবে উন্নত প্রথায় মাছ চাষকে বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে জানানো হয়েছে।