মাছ চাষের উন্নত কলাকৌশল ও সঠিক পরিকল্পনা
মাছ চাষ শুরু করার আগে দরকার সঠিক পরিকল্পনার। পরিকল্পনার ভিতর কিছু বিষয় আছে যেগুলো আপনাকে খুব সহজে সাফল্যের দিকে টেনে নিবে। উল্লেখিত বিষয়গুলো আগে নিজের সামথের্র সাথে মিলিয়ে নিবেন:
- কোন জাতের মাছ চাষ করবেন
- কতদিন মেয়াদে মাছ চাষকরবেন
- বাজার জাত করার সময়
- মোট কত টাকা ব্যায় হতে পারে
- টাকা ব্যায়ের সংস্থান কি ভাবে করবেন
এসকল বিষয়ে আগে থেকে পূর্ব পরিকল্পনা করতে হবে। পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলে মাছ চাষ শুরু করলে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়। বাধ্য হয়ে চাষী মাছ চাষের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। এর ফলে প্রত্যাশিত উৎপাদন ব্যহত হয় এবং বাজেট ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে চাষী লাভের পরিবর্তে ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে থাকে।
পুকুর খননে সঠিক ধারনা থাকতে হবে
পুকুর খননের পূবের্ যে বিষয়গুলো আপনার খেয়াল রাখতে হবে-
- পুকুর যে জায়গায় হবে তার পরিবেশ
- অবকাঠামো
- বর্ষায় বন্যার হুমকি
- শুষ্ক মৌসুমে পানি কতটা থাকে
- পানি কমে গেলে বাহির থেকে পানি দেওয়ার ব্যাবস্থা আছে কিনা
- পুকুর পাড়ের ঢাল ও বকচর
- পানির গভিরতা কেমন থাকে
বিষয়গুলোর উপর সঠিক ধারনা না থাকলে পুকুর খনন করাই ভুল হয়ে যাবে। এজন্য দরকার একজন অভিজ্ঞ মৎস্য চাষী ও মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ নেয়া।
যথাযথভাবে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে
যখন চাষ শুরু করবেন তার আগে অবশ্যই সঠিক নিয়মে পুকুর প্রস্তুত করে নিবেন। প্রথমেই বিজ্ঞান ও পরিবেশ সম্মত ভাবে পুকুর তৈরি করা হলে মাছ চাষের প্রস্তুতির এক তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন করা হয়ে যাবে সেগুলো হলো-
- ভালোভাবে পুকুর শুকিয়ে নেওয়া
- রাক্ষুসে মাছ নিধন করা
- নিরাপদ পানি সরবরাহ করা
- পুকুরে চুন/জিওলাইট প্রয়োগ করা
- পানিতে প্রকৃতিক খাবার জম্মানোর ব্যবস্থা নেওয়া
- পুকুরে পানির জোগান ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা
এ বিষয়ে অনেক চাষী অদক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে অবহেলা করা হলে পরবর্তীতে নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হতে হয়।
সঠিকভাবে পোনা নির্বাচন করা
পোনার জাত ও মান সঠিকভাবে নিশ্চিত করা না গেলে উৎপাদন ব্যহত হয়ে থাকে। মানসম্মত ব্রুড থেকে উৎপাদিত এবং একই সাইজের/বয়সের রোগমুক্ত পোনা সংগ্রহ করতে হবে। অনভিজ্ঞ এবং অদক্ষ হ্যাচারি টেকনিশিয়ানরা মাছ চাষীদের প্রতারিত করে থাকে, তা থেকে চাষীদের নিরাপদে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে বীজ ভাল হলে তাথেকে ভাল ফল পাওয়া যাবে । অন্যথায় খাবারের উপর দোষ দিলে হবে না।
পোনা পরিবহন ও অবমুক্তকরণে সজাগ থাকতে হবে
মানসম্পন্ন পোনা সংগ্রহ ও সঠিক নিয়মে পরিবহন করার পর যথাযথভাবে পুকুরে পোনা ছাড়তে হবে। কেননা অনেক সময়ই পরিবহন জনিত ত্রুটির কারণে ও পরিবহনের আগে অনভিজ্ঞ এবং অদক্ষ হ্যাচারি টেকনিশিয়ানরা সঠিক নিয়মে টেকসই করে না বলে পোনা ব্যপক হারে মারা যায়। তাৎক্ষনিক ভাবে অনেক সময় মারা নাগেলেও পোনা এতই দুর্বল থাকে যে দু-এক দিনের মধ্যে অনেক পোনা মারা যায়।
এবিষয়টি অনেক সময় চাষী বুঝতে পারেনা আর সেজন্য অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। আর এ কারনেই পোনা পরিবহন ও পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। এ ব্যাপারে একজন অভিজ্ঞ মৎস্য চাষী/কর্মকর্তার পরামর্শ নিতে হবে। তাছাড়া অভিজ্ঞ মাছ চাষীদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
পোনা সঠিক ভাবে নার্সিং
হ্যাচারী থেকে পোনা সংগ্রহ করে অধিকাংশ সময়ই সরাসরি চাষ পুকুরে ছাড়া হয়। হ্যাচারী থেকে পোনা সংগ্রহ করার পর পোনা ছাড়ার উপযোগী থাকে না । ছোট পোনা সরাসরি চাষ পুকুরে ছেড়ে অনেক সময় চাষী ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন। এতে ব্যপক হারে পোনা মারা যায় যার কারণে চাষী ভুল পথে পরিচালিত হয়। আর এ কারনেই পোনা ভাল ভাবে নার্সিং করতে হবে।
নার্সিং করার পরে পোনা বড় ও টেকসই হলে গণনার মাধ্যমে মজুত পুকুরে পোনা দিলে ভাল হয়। মজুতকৃত পুকুরে পোনা দেওয়ার পর পরবর্তীতে খাবার ব্যবস্থাপনা ও অনান্য ব্যবস্থাপনার দিকে ভালভাবে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে একক চাষের ক্ষেত্রে শিং, মাগুর, কৈ, তেলাপিয়া সহ প্রভৃতি মাছের পোনা হ্যাচারি থেকে সরাসরি চাষ কৃত পুকুরে দিয়ে ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছেন অনেক চাষীরা। তাই এক্ষেত্রে পোনা নার্সিং করা বিশেষ জরুরি।
পোনা মজুতে সংখ্যা ঠিক রাখা
অনেক চাষীই এই ভুলটি করে থাকেন। তাহারা নিজের ইচ্ছামতে পুকুরের জায়গার তুলনায় অধিক পরিমানে পোনা ছাড়েন। তাদের ধারনা পুকুরে যতবেশি পোনা ছাড়া হবে ততবেশি উৎপাদন হবে। অনেক সময় তাদেরকে সঠিক পরামর্শ দিলেও তা তারা অনুসরণ করতে চাননা অনিহা প্রকাশ করেন। তাই নিন্মোক্ত কাজগুলো একটু খেয়াল রাখতে হবে:
- কি পরিমান জায়গা আছে
- চাষের ধরন কি
- অবকাঠামে কেমন
- পানি দেওয়া ও পানি বাহির করার সুবিধা কেমন
- খাবারের ধরন
- মাছ চাষের মেয়াদ
- কি জাতের মাছ
উক্ত বিষয়গুলো পর্যালোনা করে পোনা মজুতের পরিমান নির্ধারন করতে পারলে চাষী লাভবান হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে। বেশি পোনা না ছেড়ে পরিমিত পরিমানে পোনা ছেড়ে অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করাটাই হচ্ছে গুরুত্বপুর্ণ।
মিশ্রচাষে জাত নির্বাচনে দক্ষ হতে হবে
মিশ্রচাষ বলতে একই সাথে অনেক জাতের মাছ চাষ করাকে বুঝানো হয়ে থাকে। মিশ্রচাষের ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। পুকুরে পানির স্তরকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে । সব স্তরে একই রকমের মাছ থাকে না। আর এ কারনেই মিশ্রচাষে প্রজাতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে উপরের স্তর, মধ্যস্তর ও নিম্নস্তরের বিষয়টি বিবেচনা করেই প্রতেকটি স্তর সঠিক ভাবে ব্যবহারের জন্য মাছের প্রজাতি নির্বাচন করতে হবে।
অনেক সময় দেখা যায় চাষীরা কোন একটি স্তরের মাছ অধিক ছাড়ে অথচ অন্য স্তরের উপযোগী মাছ ছাড়েন না, যার ফলে চাষী ভাল ফলাফল পান না । তাছাড়া একই স্তরের অধিক বসবাস কারি মাছ নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আরাম্ভ করে । তাই প্রতিটি স্তরের ব্যবহার করার জন্য আনুপাতিক হারে মাছ ছাড়তে হবে।
পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয় এমন প্রজাতির মাছ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। যেমন নিচের স্তরের বিশেষ করে মৃগেল, মিররকার্প, কার্পিও এই ধরনের মাছ। পোনা ছাড়ার সময় পুকুরে আনুপাতিক হারেই পোনা ছাড়তে হবে। একই সাথে মৃগেল ও গলদা চিংড়ি ছাড়া যাবেনা মৃগেল ও গলদা চিংড়ি ছাড়া হলে গলদা চিংড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আবার মিশ্রচাষে রাক্ষুসে সভাবের মাছ ছাড়া যাবেনা, রাক্ষুসে মাছ ছাড়া হলে অন্য মাছ খেয়ে সাবাড় করে ফেলবে। তাই রাক্ষুসে মাছ না ছাড়াই ভালো।
পানির গুনাগুন রক্ষার উপায় জানা দরকার
পানি ছাড়া মাছ বেচে থাকতে পারেনা তাই পানির গুনাগুন রক্ষা করাটা জরুরি। অথচ দেখা যায় অনেক মৎস চাষী পানির গুনাগুন রক্ষায় সচেষ্ট নন। মাছ চাষ করতে গেলে পানির যে স্থিতিমাপ রয়েছে তা জানতে হবে। পানির স্থিতিমাপ দক্ষতার সাথে রক্ষা করতে পারলে মাছ চাষকালীন সময়ে নানান সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
পানির পিএইচ, ক্ষারত্ব, দ্রবীভুত অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া প্রভৃতির আদর্শ মাত্রা রয়েছে। পানির এ মাত্রা অতিক্রম করলে বা অস্বাভাবিক ভাবে কমবেমি হলেই বিপত্তি। মৎস চাষিরা পানি মাপা মেশিনের ( Test Kit ) মাধমে উপরোক্ত মাত্রা পরিমাপ করে পানির গুনাগুন জানতে পারেন এবং অভিজ্ঞ মৎস চাষিরা করনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। আর এ কারনেই প্রতেক চাষীদের একটি করে টেস্ট কিট রাখা অতি জরুরী।
মানসম্মত খাবার দেয়া আবশ্যক
মানসম্মত খাবার প্রদান করা লাভজনক মাছ চাষের জন্য অন্যতম প্রধান শর্ত। খাদ্য সরবরাহে ৭০% এর বেশি খরচ হয়ে থাকে মাছ চাষে। অভিজ্ঞ মাছ চাষীরা নিজেরা খাবার তৈরি করে মাছকে দিয়ে থাকেন অন্য দিকে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির খাবার পাওয়া যায়।
মাছকে খাবার যে উৎস থেকে সরবরাহ করেন না কেন তা অবশ্যই গুনগত মানসম্পন্ন হতে হবে। খাবার সঠিক পুষ্টিমান সম্পন্ন এবং মাছের বয়স ও আকার অনুযায়ী সরবরাহ করতে হবে তা নাহলে একজন মৎস চাষী ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন। এ ব্যপারে প্রতেক মৎস চাষীর সচেতন হওয়া দরকার। পরীক্ষাগারে খাদ্য পরীক্ষার মাধ্যমে খাদ্যের সঠিক পুষ্টিমান সমন্ধে জানা যায়।
পরিমিত হারে খাবার দিতে হবে
মাছকে কম খাবার খেতে দিলে যেমন প্রত্যাশিত উৎপাদন পাওয়া যায় না । তেমনি বেশি করে খাবার খেতে দিলে একজন চাষী অধিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েন। এতে করে খাবার ও অর্থ দুইটাই অপচয় হয়ে থাকে এবং পানি দূষিত হয়ে মাছ মারা যেতে পারে।
অধিকাংশ মৎস চাষীগণ এই ভুলটি করে থাকেন। সাধারণত তারা জানেন না কি পরিমানে মাছের পোনা আছে তাই খাদ্য সরবরাহের হিসাবে গরমিল থেকে যায় । মাছ চাষী সঠিক মাত্রায় খাবার সরবরাহ করতে পারে না । আর এ জন্যই মাছের গড় ওজন, সংখ্যা ও পানির গুনাগুন জেনে সঠিক পরিমানে খাবার সরবরাহ করা দরকার।
নিয়মিত খাবার দেয়ার বিকল্প নেই
মাছ চাষে কাঙ্ক্ষীত সাফল্য না পাবার কারণ অনেক চাষী নিয়মিত খাবার সরবরাহ না করে মাঝে মাঝে ও অনিয়মিতভাবে খাবার দিয়ে থাকেন। আর এভাবে খাবার দিলে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা সম্ভব নয়।
আবার অনেক চাষী তাদের ইচ্ছামত অসময়ে খাবার দিয়ে থাকেন যার কারণে মাছের সুষম বৃদ্ধি হয়না এবং অনেক ক্ষেত্রে খাবারের অপচয় হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময় অর্থাভাবে চাষী চাষের মাঝামাঝি সময়ে খাবার দিতে ব্যর্থ হয় যার করণে চাষী লাভবান হতে পারেনা । অনেক চাষী মাছ খাদ্য খাচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য করেন না ।
নিয়মিত ওজন পরীক্ষা করতে হবে
মৎস চাষীকে খাবারের পরিমাণ নির্ধারনের জন্য ১০/১৫ দিন পর পর মাছের গড় ওজন নেয়া আবশ্যক। তা না হলে একজন চাষী কোন সময়ই খাবারের পরিমান নির্ধারণ করতে পারবে না ।
নিয়মিত মাছের ওজন না নিলে একজন চাষী বুঝতে পারেন না যে কি পরিমানে মাছের বৃদ্ধি হচ্ছে, সেটা সন্তোষজনক নাকি হতাশাব্যঞ্জক। তাই একজন চাষীকে ১০/১৫ দিন পরপর মাছের গড় ওজন নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য পরিচর্যায় উদাসীন হওয়া যাবেনা
একজন মৎস চাষী পুকুরে পোনা ছেড়ে এবং খাবার সরবরাহ করার পর তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না । চাষীর বড় কাজ হল মাছের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষন করা। মাছের দেহে অস্বাভাবিক লক্ষণ বা ক্ষত হলে সাথে সাথে একজন মৎস বিশেষজ্ঞ বা মৎস কর্মকর্তার শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ করা জরুরী এতে মাছ চাষী ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে থাকে। বাজারে নানা ধরনের ঔষধপত্র এবং পুষ্টি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, চাষীগণ এ গুলো ব্যবহার করে স্বাস্থসম্মত চাষ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সুবিধা পেতে পারেন।
অতিরিক্ত সার প্রদান থেকে দূরে থাকতে হবে
পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনে জৈব ও অজৈব সারের মাছ চাষে ভুমিকা অনেক । কিন্তু দেখা যায় কেবল মাত্র সার প্রয়োগের মাধ্যমে অনেক চাষী মাছ চাষ করতে চান। তাদের ধারণা সার প্রয়োগ করলে আর কোন প্রকার সম্পূরক খাবার দিতে হবেনা। আর এ ধারনা থেকেই তারা পুকুরে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করে বিপদ ডেকে আনে।
পানিতে প্লাংকটন বুম বেশি হয়ে যায় ও সমস্যার সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে পুকুরের পানি নষ্ট হয় এবং পুকুরে গ্যাস তৈরি হয় ও মাছ মারা যায়। কেবল মাত্র প্রয়োজন হলেই সার প্রয়োগ করা উচিত অন্যথায় সার দেওয়া ঠিক নয়।
পোলট্টি লিটার বা বিষ্ঠা ব্যবহার অনুচিৎ
অনেক চাষী মনে করেন পোল্ট্রির বিষ্ঠাতে খাদ্য মান রয়েছে, আর এ চিন্তা থেকেই তারা পোল্ট্রি লিটারকেই কেবল মাত্র মাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু পোল্ট্রি লিটার ব্যবহারের কারণে মৎস চাষীগণ নানান ধরনের সমস্যার স্মুখিন হয়ে থাকেন। পোল্ট্রি লিটারে অনেক সময় কাঠের গুড়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা মাছ খেয়ে পুষ্ঠ হয় না এবং তা থেকে বদহজম হয়ে মাছের পেট ফুলে মারা যায়।
একইভাবে লিটারে শুধু তুষ থাকার কারনে একই সমস্যা হয়ে থাকে। অধিক পরিমানে পোল্ট্রি লিটার পানির গুনাগুন নষ্ট করে। পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের কারণে অনেক মাছ মারা যায় এবং পানির গুনাগুন রক্ষা করতে গিয়ে ঔষধপত্র কিনতে হয় এতে করে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে।
পোল্ট্রি লিটারের মাধ্যমে মাছে এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া যায় যেটা স্বাস্থসম্মত নয়। অনেক উন্নত দেশে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে আমাদের দেশেও এন্টিবায়োটিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর একারণে চাষীদেরকে সস্তায় লাভের মানসিকতা পরিহার করে পোল্ট্রি লিটার মাছ চাষে ব্যবহার থেকে ফিরে আসতে হবে।
সঠিক নির্দেশনায় ঔষধপত্র ব্যবহার
র্তমানে আধুনিক মাছ চাষে নানান সমস্যা সমাধানের জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি পণ্য এবং ঔষধপত্র পাওয়া যায়। নানা কোম্পানী নানা পণ্য বাজার জাত করছেন আমাদের দেশেও । অনেক সময় চাষী সস্তায় এসব পণ্য ক্রয় করে প্রতারিত হয়ে থাকেন।
আবার অনেক সময় সঠিক ব্যবহার বিধি না জানার ফলে সঠিক মাত্রায় ব্যাবহার না করার কারণে চাষী সুফল পাচ্ছে না । এ কারনেই চাষীর উচিত সঠিক মাত্রা এবং প্রয়োগ বিধি অবশ্যই মেনে চলা ও মাছ চাষের উন্নত কলাকৌশল জানা। তাহলে চাষী সুফল পাবেন।
একাধারে একই পুকুরে মাছ ধরা
অনেক চাষীই এই ভুলটি করে থাকেন একই পুকুর থেকে কয়েকদিন একাধারে মাছ ধরেন। এতে করে একজন চাষী ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন। কারণ পরপর কয়েকদিন জাল টানার কারনে মাছ আঘাত পাপ্ত হয় এবং খাদ্য গ্রহন বন্ধ করে দেয়। এতে মাছের ওজন কমে যায় এবং আঘাত জনিত কারনে কিছু সংখ্যক মাছ মারা যেতে পারে। এ কারণে একটানা কয়েক দিন মাছ না ধরে বিরতি দিয়ে মাঝে মাঝে মাছ ধরা উচিত।
আহরিত মাছ পরিবহনে সমস্যা
একজন মাছ চাষী সঠিক ভাবে বাজার জাত করতে না পারলে শেষ দিকে এসে ক্ষতি গ্রস্থ হতে পারে। যেসব মাছ জীবিত অবস্থায় পরিবহন করা হয় সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে অধিক সময় ধরে পরিবহন বা অন্য কেনো ত্রুটির কারণে মারা যায়। মাছ পরিবহণের আগে কিছু সময় হাপায় রাখা উচিত।
মাছ ধরার ৮/১০ ঘন্টা আগে থেকে খাবার দেওয়া বন্ধ করতে হবে তাহলে ধৃত মাছ অধিক সময় জীবিত থাকে। মাছ চাষীরা মাছ চাষের সময় একটু সতর্ক হলে এবং চাষ করার সময় প্রতিটি ধাপে দক্ষতার পরিচয় দিলে ক্ষতির হাত থেকে বা লোকসান থেকে রক্ষা পেয়ে নিশ্চিত লাভবান হবেন।
একজন মাছ চাষী যদি উপরের বিষয় গুলো ভালভাবে মেনে চলে তাহলে সে কখনও ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। তাই এজন মৎস চাষীকে মাছ চাষের উন্নত কলাকৌশল সম্পর্কে জানতে হবে।