ফাহমিদার বাবার ছিল অসংখ্য কবুতর। নানা রঙের। নানা জাতের। কবুতরের ওড়াউড়ি, ডানা ঝাপটানো তার ভালোই লাগতো। বড় হয়ে কবুতরের পাশপাশি খাঁচায় বিদেশি পাখি পুষছেন। নানা প্রজাতির বিদেশি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত তার ঘর। শিক্ষকতার পাশাপাশি খাঁচার পাখি পালনে সফলতা পেয়েছেন ফাহমিদা আহমেদ। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন তিনি। স্বামী আর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে তার বসবাস।
বাবার কবুতর পালন দেখে তার শিশুমনে পাখির প্রতি আগ্রহ জন্মে। যার রেশটা পড়ে বড় হওয়ার পর। ২০১১ সালে মাত্র এক জোড়া বাজরিগার পাখি পালনের মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু। ফাহমিদার সংগ্রহে আছে ১টি কনুর, ২ জোড়া রিংনেক, ১৬ জোড়া বাজরিগার, ২ জোড়া কোকাটেল, ৬ জোড়া ফিঞ্চ, ২০ জোড়া অস্ট্রেলিয়ান ঘুঘু, ১০ জোড়া কবুতর।
তিনি জানান, এসব পাখি খাঁচায় ডিম-বাচ্চা দেয়। পাখির সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে তখন বিক্রি করেন। পাখি কেনার জন্য মানুষ অনলাইনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। ঘর-সংসার, বাচ্চা, মেহমান সব সামলে পাখিতে তার সফলতা যেন অন্যদের পথ দেখায়। সবকিছু করেও শখের কাজ করা যায়।
ফাহমিদা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শখের কাজ করলে মন ভালো থাকে। অবসর যখন অন্যদের জন্য সাদামাটা। কখনো বা একদম একঘেয়েমি। আমার জন্য তখন তা রঙিন। খাঁচার পাখির জীবনযাত্রা দেখার মতো।’
বাবার কবুতর পালনের রেওয়াজও ধরে রেখেছেন তিনি। সংগ্রহ করেছেন লক্ষ্যা কবুতর, সিরাজি, লাহরী, সাটিন, ভালো জাতের কাগজি, গিয়া চুল্লি ও রেসার জাতের কবুতর। ফাহমিদার কবুতর পালার অভিজ্ঞতা পাখির থেকেও বেশি। বিয়ের আগে বাবাকে কবুতর পালন করতে দেখেছেন। শ্বশুরবাড়িতে এসে নিজ উদ্যোগে লক্ষ্যা জাতের কবুতর দিয়ে শুরু করেন।
খাঁচায় বিদেশি পাখি অনেকে মানতেই পারেন না। নানা ছুতোয় এসব পাখি ছেড়ে দেন। এই নিয়ে ফাহমিদার আফসোসের শেষ নেই। তিনি বলেন, ‘এসব পাখি খাঁচায় পালনের উপযোগী করে ডেভেলপ করা হয়েছে। এদের ছেড়ে দেওয়া মানে হত্যার নামান্তর। মুক্ত প্রকৃতিতে বেঁচে থাকার মতো সক্ষমতা এদের নেই। খাঁচার সবচেয়ে জনপ্রিয় পাখি বাজরিগার। এ পাখি ১৮০৫ সাল থেকে খাঁচায় পালন করা হয়।’
ফাহমিদা চেয়েছেন খাঁচায় পাখি পালকের সংখ্যা বাড়ুক। সৌখিন পাখিপ্রেমীরা ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে উঠুক। সে কারণে গড়ে তুলেছেন বাজরিগার ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড কেয়ার জোন। প্রায় ৩০ হাজার সদস্য সংগঠনটির। ফাহমিদা জানান, বাজরিগার ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড কেয়ার জোন মূলত কাজ করে পাখাল সমাজের পাখিদের সঠিক ট্রিটমেন্ট, তথ্য-উপাত্ত প্রদান ও কেইজ বার্ড নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা। প্রতি বছর সেরা পাখালদের নির্বাচন, ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে সম্মাননা প্রদান করা অন্যতম কাজ।
ফাহমিদা বিভিন্ন সময় অ্যাডমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি পাখির অনলাইন চিকিৎসা, বিভিন্ন পাখালদের খামারে গিয়ে পাখি পর্যবেক্ষণ এবং নতুনরা যাতে পাখি পালনে আগ্রহী হয়; সে বিষয়ে কাজ করছেন। মনে আনন্দের পাশাপাশি খাঁচার পাখি থেকে যা আয় হয়, তাতে ফাহমিদা সন্তুষ্ট। তার মুখেই শোনা গেল, ‘একটু গুছিয়ে পাখির খামার করে গৃহবধূরা লাভবান হতে পারেন। অন্তত নিজের একটি ভিন্ন পরিচয় গড়ে উঠতে পারে।’
খাঁচার বিদেশি এসব পাখি বনের পাখির মতো যা খুশি খেতে পারে না। এদের যত্ন কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পাখিকে উন্নতমানের সীডমিক্স (শস্যদানা), সবজি এবং সেদ্ধ ডিম খেতে দিতে হবে। প্রতিদিন খাবার এবং পানি নতুন করে দেওয়া ভালো। অবশ্যই সীডমিক্স পরিষ্কার করে দিতে হবে। বাজার থেকে এনেই ধুলা-বালি মিশ্রিতগুলো দেওয়া যাবে না।
কিছুদিন পালন করে একটু অভিজ্ঞতা হোক। জানা-বোঝার পাল্লা যখন পোক্ত হবে; তখন বাণিজ্যিকভাবে খামার করা উত্তম। এমনটাই ফাহমিদার মত। ফেসবুকে তার পাখি পালন নিয়ে প্রচুর লেখা, ইউটিউবে ভিডিও আছে। আগ্রহীরা সেগুলো দেখে নিতে পারেন। ইনবক্সে কেউ কিছু জানতে চাইলে তিনি না করেন না। পোষা পাখিপ্রেমীদের জন্য তার সাহায্যের দুয়ার সব সময়ই খোলা।
শুধু যে ময়না পাখি কথা বলে, তা নয়। খাঁচার পোষা পাখি রিংনেকও কথা বলতে পারে। রিংনেককে কথা শিখিয়েছেন ফাহমিদা। তিনি বলেন, ‘আমার রিংনেক পাখিকে কথা বলা শেখানো আমার জন্য অনেক মজার একটি অভিজ্ঞতা ছিল। এটাকে একদম বাচ্চা অবস্থায় আমি বড় করেছি। এখন অনেক সুন্দর কথা বলতে পারে।
ফাহমিদার স্বামী পাখি পালনে সব সময় উৎসাহ দেন। ছাদে সুন্দর পাখির ঘর করে দিয়েছেন। সেখানে সাজানো খাঁচায় পাখিগুলো মনের আনন্দে সময় কাটায়। খুনসুটি করে। বন দিয়ে বাসা বানিয়ে সেখানে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটায়। বাচ্চাকে খাইয়ে বড় করে তোলে। ফাহমিদা জানান, তার স্বামীও একজন পাখিপ্রেমী। তার অনেক কবুতর আছে।
খাঁচার পোষা পাখি পালন ছাড়া একজন আর্টিস্ট হিসেবে ফাহমিদা বেশ পরিচিতি। দুটি এক্সিবিশনে সফলভাবে অংশ নিয়েছেন। বাচ্চাদের জন্য একটি আর্ট একাডেমি খোলার ইচ্ছা তার।
copy from: Jago news.24.com