মাছের মধ্যে পুঁটি মাছ খুবই জনপ্রিয়। নামটা সামনে এলেই খাল, বিল, জলাশয়ে সাদা রঙের রুপালি রঙয়ের ছোট মাছের ছবি ভেসে ওঠে। এ মাছটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার ও চীনে পাওয়া যায়। এক সময় মাছটি বাংলাদেশের মিঠা পানিতে বিশেষ করে বিল, হাওড়-বাওড়, নদী-নালা, খাল-বিল, জলাভূমি ও ধানক্ষেতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। খাদ্য তালিকার মধ্যে মাছটি অনেকের খুবই পছন্দের ।
আমাদের দেশে ছোট বড় প্রায় সকলেরই প্রিয় এই মাছ । আপনি ইচ্ছা করলে বাড়ির পুকুর অথবা ছোটখাট জলাশয়ে এই মাছ চাষ করতে পারেন । প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণের দক্ষতা, সম্পূরক খাবারের প্রতি আগ্রহ, বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশে টিকে থাকা ও অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে চাষিদের কাছে এর জনপ্রিয়তাও দিন দিন বাড়ছে । আবার, খুব সহজেই যেহেতু এই মাছ চাষ করা যায় তাই পুঁটি মাছ চাষে কৃষকদের লাভও হচ্ছে ভালোই | কারণ, সুস্বাদু এই মাছের বাজার চাহিদা প্রায় সারা বছর |
পুঁটি মাছের বৈশিষ্ট্য
জাত পুঁটি মাছের দেহ মাঝারি চাপা ও পেছনের অংশ সরু ও রুপালি বর্ণের হয়ে থাকে। আকারে প্রায় ১৫-২০ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। কানকো পাখনার ঠিক পেছনেই পৃষ্ঠ পাখনার উপস্থিতি ও পৃষ্ঠ পাখনার নিচেই বক্ষ পাখনার অবস্থান।
দেহের উপরিভাগ উজ্জ্বল ছাই থেকে সবুজাভ ছাই বর্ণের, নিচের ভাগ সাদা। দেহে দুটি কালো ফোঁটা। একটি বড় অপরটি ছোট। ছোট ফোঁটা কানকোর পেছনে ও বড় ফোঁটা পায়ু পাখনার ওপরে থাকে। শিরদাঁড়া রেখা অসম্পূর্ণ। এ মাছ বছরে দুই বার ও বর্ষাকালে প্রজনন করে।
প্রজনন ঋতুতে পুরুষ মাছের দেহের উভয় পাশে গাড় লাল রংয়ের দাগ দেখা যায়। পুঁটি মাছ জলাশয়ের মধ্যস্তরে খাবার খেয়ে থাকে। ছোট কিংবা বড় সব ধরনের জলাশয়ে সহজেই চাষ করা যায়। অন্যান্য ছোট প্রজাতির মাছের সঙ্গে কিংবা কার্পজাতীয় মাছের সঙ্গেও মিশ্রচাষ করলে ভাল উৎপাদন পাওয়া যায়।
পুঁটি মাছ চাষে পুকুর বাছাই
পুঁটি মূলত মিষ্টি পানির মাছ। এটি সাধারণত খাল এবং বিল এ পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে আমাদের দেশে এই মাছকে পুকুর কিংবা ছোটখাট জলাশয়ে চাষ করা হচ্ছে। পুঁটি মাছ চাষ করার জন্য আপনাকে প্রথমে উপযুক্ত পুকুর নির্বাচন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পুকুরের পাড় যেন সর্বদা মজবুত ও বন্যামুক্ত থাকে। এছাড়াও পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে ও পুকুরটি যেন জলজ আগাছামুক্ত থাকে।
চাষের সময়
সাধারণত, বছরের যেকোন সময়েই আপনি পুঁটি মাছের চাষ করতে পারেন। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, যে পুকুরে কিংবা যেকোন ধরণের ছোটখাট জলাশয়ে পুঁটির পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে সকাল অথবা সন্ধ্যা এই দুই সময়ের যেকোন একটি নির্বাচন করতে হবে। কারণ এ সময় তাপমাত্রা সহনীয় অবস্থায় থাকে। তা না হলে মাছ মরে যেতে পারে। এপ্রিল-মে মাসে পুঁটি মাছ ডিম ছাড়ে। তাই এ সময় পুঁটি মাছ চাষ করা উপযোগী |
হবে |
পুঁটি মাছ চাষাবাদ পদ্ধতি/কৌশল
পুঁটিমাছ সাধারণত পুকুর-নদীতে বছরে ২ বার ডিম দেয় বলে এদের পোনা মজুদের প্রয়োজন হয়না। পুকুরে পুঁটি চাষ করার জন্য আপনাকে সঠিক নিয়ম মানতে হবে |পুকুরে পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে প্রথমে অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহন কৃত পোনা ব্যাগ সহ জলে ভাসিয়ে রাখতে হবে। এরপর পরিবহনকৃত ব্যাগের পানি এবং পুকুরের পানির তাপমাত্রা একই মাত্রায় আনতে হবে। তারপর ব্যাগের মুখ খুলে পুকুরের পানি অল্প অল্প করে ব্যাগে দিতে হবে এবং ব্যাগের পানি অল্প অল্প করে পুকুরে ফেলতে হবে। ৪০-৫০ মিনিট সময় ধরে এরূপভাবে পোনাকে পুকুরের পানির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে।
খাবারের পরিমাণ ও সঠিক নিয়মে খাবার প্রয়োগ
পুঁটি মাছ চাষে আপনাকে নিয়মিত উপযুক্ত খাবার প্রয়োগ করতে হবে। পুঁটি মাছ স্বাভাবিকভাবে প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে শেওলা খেয়ে থাকে। এছাড়াও পুঁটি মাছ সাধারণত সবধরনের খাবার খেয়ে থাকে। তাই এদের চাষ করার ক্ষেত্রে আলাদা কোন খাবার এর প্রয়োজন হয় না।
জলাশয়ে সার প্রয়োগ
- পুঁটি মাছ চাষ করার জন্য আপনাকে পুকুরে বা জলাশয়ে সঠিক নিয়মে সার প্রয়োগ করতে হবে। মাঝেমধ্যে ইউরিয়া এবং অন্যান্য সার প্রয়োগ করতে হবে। এতে পানির গুণাগুণ বজায় থাকে এবং মাছের কোন ক্ষতি হয় না। বরং এতে মাছের বৃদ্ধি অনেক ভাল হয়।সূত্রঃ এগ্রো ডট কম