মৎস্যসম্পদের সম্প্রসারণ, গবেষণা ও উন্নয়নে প্রয়োজন মাৎস্যবিজ্ঞানে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনবল। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে মাছের উৎপাদন বাড়িয়ে ৪৬ লাখ থেকে ৬৫ লাখ টনে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৮৫ লাখ টনে উন্নীতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। পরিবেশবান্ধব উপায়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারেন একজন মাৎস্যবিজ্ঞানী।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে চীন, ভারতের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে পঞ্চম এবং সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাশিয়ান্স ও ফিনফিশ উৎপাদনে যথাক্রমে অষ্টম ও ১১তম। বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম।
দেশের প্রাণিজ প্রোটিনের প্রায় ৬০ শতাংশ পূরণ করছে মাছ। জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতে সম্পৃক্ত বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ। এছাড়া গ্রামীণ জনপদের প্রতি পাঁচজনের চারজনই জলজ সম্পদের ওপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। বিশাল জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিমূলক এ খাতে অপেক্ষা করছে অপার সম্ভাবনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মৎস্য খাতে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত, দূষণ বাড়ছে, জমির পরিমাণও কমছে। এখন কেবলই চাষের ওপর নির্ভরতা তৈরি হচ্ছে। ফলে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পুষ্টিগুণসম্পন্ন মাছ উৎপাদন ও জলবায়ুসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করার বিকল্প নেই। তাই দরকার দক্ষ মাৎস্যবিজ্ঞানী।’
সরকারি প্রতিষ্ঠান মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ল্ড ফিশ সেন্টার, এফএও, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বা ইউএনডিপি এবং এশিয়ান ওয়াটারল্যান্ড ব্যুরোর মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি দেশীয় এনজিওগুলোতেও যোগ দিতে পারেন মাৎস্যবিজ্ঞানে ডিগ্রিধারীরা।
বেসরকারি খাতে মাছের খামার, হ্যাচারি, ফিড মিল, প্রক্রিয়াজাত কারখানায়ও রয়েছে কর্মসংস্থানের অফুরন্ত সুযোগ। এগুলোয় ফিশ প্রসেসিং টেকনোলজিস্ট ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতে পারেন মাৎস্যবিজ্ঞানের স্নাতকরা। এছাড়া বিভিন্ন বিশেষায়িত ব্যাংকের মৎস্য ঋণ বিভাগে ক্যারিয়ার গড়া যায়। সুযোগ রয়েছে উদ্যোক্তা হওয়ারও। পুঁজির জোগান পেতে নেয়া যাবে ব্যাংকঋণ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল মনসুর বলেন, ‘মৎস্য খাতে সরকারি কর্মসংস্থানের উল্লেখযোগ্য অংশই হয় মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে। দেশের সব উপজেলায় মৎস্য কর্মকর্তা রয়েছেন। মাৎস্যবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেই বিসিএসের মাধ্যমে এ পদে নিয়োগ পাওয়া যায়। এছাড়া দেশী-বিদেশী এনজিওগুলোয় ভালো বেতনে কাজের সুযোগ রয়েছে।’
সূত্রঃ https://bonikbarta.net