শুরু হয়েছিল তার অল্প পুঁজি দিয়ে। ২০০৮ সালে দুই/এক জায়গায় মাছ চাষ শুরু করেন তিনি।
এরপর ধীরে ধীরে প্রকল্প বেড়ে এখন ১৫০ একর প্রকল্পে মাছ চাষ করছেন সফল এই চাষি।
মিরসরাই উপজেলার মধ্যে অন্যতম সফল মৎস্যচাষি মো. আনোয়ার হোসেন। মৎস্য উৎপাদনে সেরা হয়েছেন উপজেলা জেলা পর্যায়ে। তাঁর দেখাদেখি এখন অনেকে মাছ চাষে ঝুঁকছেন।
কঠোর পরিশ্রমী আনোয়ার আজ একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তাঁর প্রকল্পে গেলে দুই চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রকল্পের পাড়ে ফুল, ফলের বাগান ও সবজি চাষ সবার নজর কাড়ে। ১০ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করে এখন তিনি কোটিপতি!
সরেজমিনে মুহুরী প্রকল্প এলাকায় গিয়ে কথা হয়, চট্টগ্রাম জেলার পুরস্কারপ্রাপ্ত সেরা মৎস্য উৎপানকারী ও এগ্রো কমপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী মো. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, পড়াশোনা শেষ করে আমার এলাকায় দুই/একটি পুকুরে মাছ চাষ করতাম। এরপর ২০০৮ সালে করেরহাট এলাকার মোহাম্মদ মোস্তফা ভাইয়ের পরামর্শ ও সহযোগিতায় মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় দুই/একর আয়তনের প্রকল্পে ১০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ শুরু করেছি। কিছু দিন পর পরিচয় হয় মৎস্য চাষি কামরুল ভাইয়ের সঙ্গে।
তিনি আমাকে সব সময় পরামর্শ দিতেন এবং সহযোগিতা করতেন। আস্তে আস্তে প্রকল্পের পরিধি বাড়াতে থাকি। এখন আমি ১৫০ একর প্রকল্পে মাছ চাষ করছি। তার মধ্যে ৫৫ একর প্রকল্প আমার খরিদ করা এবং অন্যগুলো বাৎসরিক হিসেবে বন্ধক নিয়ে চাষ করি। আমি বেশি সাদা মাছ চাষ করি।
তার মধ্যে রুই, কাতাল, মৃগেল, গ্রাস কার্প, তেলাপিয়া, শিং মাগুর, পাবদা, গুলসা। এবার প্রায় ৬০ লাখ গুলসা চাষ করেছি। পাশাপাশি বারইয়ারহাটে আনোয়ার এগ্রো কমপ্লেক্স নামে আমার একটি ফিডের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমার ভাইয়েরাও এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। আমার প্রকল্পের উৎপাদিত মাছ বারইয়ারহাট, ফেনী, সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলী, ফিশারিঘাট, চকবাজার ও কক্সবাজারের চকরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।
মাছ চাষ করতে গিয়ে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে আনোয়ার বলেন, মাছ চাষ যখন শুরু করেছি তখন সীমানা বিরোধ নিয়ে সোনাগাজীর সন্ত্রাসীরা আমার প্রকল্প থেকে মাছ লুট কয়ে নিয়ে যায়। তখন প্রায় আমার দুই লাখ টাকা ক্ষতি হয়। আল্লাহর রহমতে এরপর বড় কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে করোনার প্রভাবে মাছরে দাম কমে যাওয়ার পর এখনো পর্যন্ত ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। আগে এক মণ পাবদা মাছ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১৩/১৫ হাজার টাকায়। প্রতি মণ মাছে ৬/৭হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
আমি প্রায় দেড়শ একর প্রকল্পে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। তার মধ্যে কিছু সমন্বিত প্রকল্প রয়েছে। যথা সময়ে মাছ বিক্রি করতে না পারায় বড় ধরনের লোকসান হয়েছে আমার। সরকার মৎস্য উৎপাদনকারীদের প্রণোদনা দেওয়ার কথা বললেও কোনো প্রণোদনা আমরা পায়নি। এছাড়া মাঝেমধ্যে মাছের গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় পথে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়।
জানা গেছে, আনোয়ার হোসেনের বাড়ি মিরসরাই উপজেলার ২ নম্বর হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর গ্রামে। তিনি ২০১৮ সালে মিরসরাই উপজেলা সেরা মৎস্য উৎপাদনকারীর পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৯ সালে পাবদা, গুলসা জাতের মাছ চাষের জন্য চট্টগ্রামের সেরা মৎস্য উৎপাদনকারীর পুরস্কার পেয়েছেন।
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, আনোয়ার হোসেন একজন সফল মৎস্যচাষি। ইতোমধ্যে তিনি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর দেখাদেখি অনেক বেকার যুবক এই পেশায় আসছে। আমরা উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সাধ্যমত সহযোগিতা করে আসছি।
সূত্র: বাংলা নিউজ২৪.কম