শখের বশে পৈত্রিক জমিতে মাছ ও মুরগির খামার দিয়ে শুরু। বর্তমানে তিনি কোটিপতি খামারি। বলছি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের খায়রুল ইসলামের কথা। তিনি মাছ, মুরগি ও গরু পালন করে একজন সফল খামারি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। খামার করে সফল হওয়ায় মৎস্যচাষির পুরস্কারও পেয়েছেন।
জানা যায়, খামারি খায়রুল ইসলাম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ঠাণ্ডাছড়ি এলাকার বাসিন্দা। শখের বশে প্রায় ২ দশক আগে গড়ে তোলা খামার এখন বিশাল আকার ধারন করেছে। বর্তমানে তিনি ৪০ বিঘা জমিতে খামার গড়ে তুলেছেন। তার খামারের পুকুরে তিনি পাঙাশ, শিং, কই, বাটা ও কার্পজাতীয় মাছ চাষ করছেন। তার পাশাপাশি তিনি মুরগি ও গরু পালন করছেন। ২০০৭ সালে পাহাড় ধসের কারণে তিনি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হন। সেখান থেকে তিনি আবার নতুন করে শুরু করে ঘুরে দাড়িয়েছেন। বর্তমানে তিনি বছরে দেড় কোটি টাকার মাছ, মুরগি ও গরু বিক্রি করে থাকেন। এতে তার লাভ থাকে প্রায় ৩০-৩৫ লাখ টাকা।
খামারি খায়রুল বলেন, আমি ২০০০ সালে এলাকায় চায়ের দোকান দিয়েছিলাম। তারপর শখের বসে বাবার দেওয়া জমিতে মাছ চাষ ও মুরগি পালন শুরু করি। শুরুর সময় এলাকার লোকজন নানা কটূক্তি করলেও আমি তাতে কান না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়েছি। প্রথম বছর প্রায় ৬৬ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি। তারপর পুকুরের সংখ্যা বাড়িয়ে চাষ বৃদ্ধি করি। পাশাপাশি মুরগি ও গরুর খামারেরও পরিধি বাড়াই।
তিনি আরো বলেন, আমার গরু গুলো পাহাড়ে চরাই। তাই খাবার খাওয়াতে আমার বেশি টাকা খরচ হয় না। গরুগুলো প্রকৃতিক ভাবেই বড় হয়। প্রতি বছর ঈদে প্রায় ৩০ লাখ টাকার গরু বিক্রি করতে পারি।
খায়রুল আরো বলেন, আমার সুন্দর ভাবে গড়ে তোলা খামারে ২০০৭ সালে বিপদ নেমে আসে। তখন পাহাড় ধসের কারণে ও ঢলে আমার ২২ লাখ টাকার মুরগি মারা যায়, পুকুরির সব মাছ ভেসে যায় আর প্রায় ৫০টি গরু মারা যায়। এই বিপদে ভেঙে না পড়ে আমার স্ত্রী পাশে দাঁড়ান। তার গহনা ও পরিচিতদের কাছ থেকে টাকা ঋণ করে আবার শুরু করি। বর্তমানে আমার খামারে ২০ জন শ্রমিক কাজ করে। তাদের মাসিক বেতন ৮-২০ হাজার টাকা। বর্তমানে বছরে দেড় কোটি টাকার মাছ, মুরগি ও গরু বিক্রি করি। এতে তার লাভ থাকে প্রায় ৩০-৩৫ লাখ টাকা।
স্থানীয় কলেজশিক্ষক ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, খায়রুল নিজের পাশাপাশি যুবকদেরও অনুপ্রাণীত করেছেন। তার কাছ থেকে অনেকেই পরামর্শ নিয়ে খামার করেছেন। তারা স্বাবলম্বীও হয়েছেন। আশা করছি খায়রুল আরো বড় খামারি হবে এবং সমাজের যুবকদের আরো অনুপ্রানীত করবে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, খায়রুল ইসলাম খামার করে যুবকদের জন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজে আর্থিকভাবে লাভবানের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন। আশা করছি খায়রুল আরো বড় খামারি হবেন এবং তার মধ্যেমে আরো অনেক যুবক চাকরির পেছনে না ছুটে খামার করে স্বাবলম্বী হবেন।
সূত্র:আধুনিক কৃষি খামার।