পশুর জন্য ছোঁয়াচে প্রকৃতির ভাইরাসজনিত রোগের মধ্যে ক্ষুরা রোগ অন্যতম। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হরিণ ও হাতিসহ বিভক্ত ক্ষুরা বিশিষ্ট প্রাণির এ রোগ হতে পারে। ৬ মাস বয়সের নিচে রোগটি মড়ক আকারে দেখা যায়। বাংলাদেশের সব ঋতুতে ক্ষুরা রোগ দেখা গেলেও বর্ষার শেষে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।
ক্ষুরা রোগ কি ?
ক্ষুরা রোগ অতি তীব্র প্রকৃতির সংক্রামক ভাইরাস জনিত রোগ| এ রোগে আক্রান্ত পশুর মুখ ও পায়ে ঘা হবার ফলে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না এবং খুঁড়িয়ে হাটে। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই এ রোগ দেখা যায়। তবে আমাদের দেশের গরুতে ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।
রোগের কারণ : ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ নামক এক প্রকার ভাইরাস এ রোগ সৃষ্টি করে। সে কারণে ইংরেজিতে ক্ষুরা রোগকে এফ,এম,ডি বলে। এ ভাইরাসের মোট ৭টি টাইপ রয়েছে। এগুলোর নাম এ, ও, সি, স্যাট-১, স্যাট-২, স্যাট-৩ ও এশিয়া-১। বাংলাদেশে এবং এশিয়া-১ টাইপের ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।
রোগ বিস্তার : ক্ষুরা রোগ অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ায় কোনো এলাকায় এ রোগ দেখা দিলে একশত ভাগ পশুই তাতে আক্রান্ত হয়। এ রোগের জীবাণু রোগাক্রান্ত প্রাণীর ফোসকা ফেটে অন্য প্রাণীর দেহে বিস্তার লাভ করে। রোগাক্রান্ত পশুর লালা, শেষ্মা, প্রস্রাব, মল ও দুধের মাধ্যমে দেহ হতে বের হয়ে আসে। এসব পশুর খাদ্য, পানি, আবাসস্থলের দেয়াল, বাতাস ইত্যাদি কলুষিত করে। বাতাসের সাহায্যে এ ভাইরাস ৬০/৭০ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। গ্রামাঞ্চলে অনেকে সময় আক্রান্ত পশুকে দূর-দূরান্তের হাটবাজারে বিক্রির জন্য নেয়া হয়। তখন ভাইরাস ব্যাপক এলাকায় ছড়িয়ে ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়। আক্রান্ত পশুর পরিচর্যাকারীর চলাচল এবং তার জামাকাপড়, জুতা ইত্যাদির সাহায্যে ও ভাইরাস বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ভাইরাস বহনকারী ষাঁড় কৃত্রিম প্রজননের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক কারণ এ সব ষাঁড় থেকে সংগৃহীত সিমেন কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহার করলে এ রোগ মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে।
লক্ষণ: শরীরের তাপমত্রা বেড়ে যায়। জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি, সম্পূর্ণ মুখ গহ্বর, পায়ের ক্ষুরের মাঝে ঘা বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ক্ষত সৃষ্টির ফলে মুখ থেকে ফেনাযুক্ত লালা বের হয়। কখনো বা ওলানে ফোসকা পড়ে। পশু খোঁড়াতে থাকে এবং মুখে ঘা বা ক্ষতের কারণে খেতে কষ্ট হয়। অল্প সময়ে পশু দুর্বল হয়ে পড়ে। এ রোগে গর্ভবতী গাভির প্রায়ই গর্ভপাত ঘটে। দুধালো গাভির দুধ উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। বয়স্ক গরুর মৃত্যুহার কম হলেও আক্রান্ত বাছুরকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই কঠিন। অর্থাৎ ৬ মাস বয়সের নিচে আক্রান্ত বাছুরের ৯৫ শতাংশই মারা যায়।
চিকিৎসা:
এটা ভাইরাসজনিত রোগ তাই এর বিশেষ কোনো চিকিৎসা নেই । তবে ভালোভাবে পরিচর্যাসহ কিছু ব্যবস্থা নিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় । প্রথমে আক্রান্ত পশুকে আলাদা করে পরিষ্কার ও শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে । মুখে ঘা হলে ২ এলাম বা ১ পটাসিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট দিয়ে মুখ ধুয়ে দিতে হবে দিনে ২-৩ বার । মশা-মাছির উপদ্রব কমানোর জন্য এবং পায়ের ক্ষুরে ক্ষত হলে ০০১ পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্বারা পরিষ্কার রাখতে হবে দিনে ২-৩ বার ।
এক্ষেত্রে এফএমডি কিউরসহ (FMD CURE) অন্যান্য নামের তরল পদার্থ বেশ উপকারি। এতে ভাইরাস নিস্ক্রিয় হয়ে থাকে । প্রচুর লালা ঝরলে পশু দুর্বল হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ৫ ডেসিএটোজ স্যালাইন (০৯) শিরায় পুশ করতে হবে ।আর ২-৩ দিন ১০০০ সিসি/৫০-১০০ কেজি ওজনের স্যালাইন পুশ করতে হবে।
সূত্র – ফার্ম এন্ড ফার্মার