বলা হয়, বর্তমানে দেশে প্রাণিজ আমিষের চাহিদার একটা বড় অংশই পূরণ করে ব্রয়লার মুরগি। কিন্তু মুরগি সুস্থ রাখা ও ওজন বাড়ানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই এই অ্যান্টিবায়োটিক মানবদেহেও পৌঁছে যাচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আমাদের শরীরে তৈরি হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (প্রতিরোধী)। এভাবে চলতে থাকলে একসময় অনেক অ্যান্টিবায়োটিকই শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হবে। স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে ধীরে ধীরে।
যেভাবে পাওয়া গেল সমাধান
২০০০ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার পর উচ্চশিক্ষার জন্য একটা দীর্ঘ সময় জাপানে ছিলেন অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম। দেশে ফিরে যখন দেখলেন, ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে ব্যাপক হারে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হচ্ছে, নিজের সন্তানদের এই মুরগি খেতে নিরুৎসাহিত করতেন তিনি। কিন্তু ভেবে দেখলেন, এটা তো আদতে সমাধান নয়।
শুরু করলেন গবেষণা। বাজারে যেসব ব্রয়লার মুরগি পাওয়া যায়, সেগুলোর দেহে অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রা পরীক্ষা করলেন। দেখা গেল, কোনো কোনো মুরগির মাংসে, বিশেষ করে কলিজায় অ্যান্টিবায়োটিকের হার আশঙ্কাজনক। অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের দুই সপ্তাহ পর মুরগি বিক্রি করলে সাধারণত মুরগির দেহে ক্ষতিকর মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক থাকে না। কিন্তু অনেক খামারি অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের দিনেও মুরগি বিক্রির জন্য বাজারে তোলেন। এ কারণর এসব অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের দেহেও পৌঁছে যায়।
এ সমস্যার সমাধানে প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প খোঁজা শুরু করেন শফিকুল ইসলাম ও আবু রায়হান। শফিকুল বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প উপায়ে নিরাপদ ও দ্রুত বর্ধনশীল ব্রয়লার উৎপাদনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের প্ল্যান্টের নির্যাস, হারবাল নির্যাস ব্যবহার করে পরীক্ষা চালিয়েছি। তবে সলটেক্স পদ্ধতিতে নিমের নির্যাস ব্যবহারের ফলে সবচেয়ে ভালো ফল পেয়েছি। এতে দেখা যায়, অ্যান্টিবায়োটিকের চেয়েও এই নির্যাস ভালো কাজ করে। ব্রয়লারের ওজন তুলনামূলক বেশি পাওয়া গেছে। রোগবালাই ও মৃত্যুর হারও অনেক কম।’
সহযোগী গবেষক আবু রায়হান যোগ করলেন, ‘নির্যাসটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা সম্ভব হলে বাজারে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে যা খরচ হয়, তার চেয়ে কম খরচে মুরগি উৎপাদন করা যাবে। আবার অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার ফলে এই মুরগি যেকোনো সময় বাজারজাত করার উপযোগী থাকে। এর কোনো প্রত্যাহার সময়সীমা নেই।’
সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
এ গবেষণা বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্পে নতুন বিপ্লব আনতে পারে বলে মনে করেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে আশার কথা হলো, বাজারে প্রচলিত গ্রোথ প্রোমোটার ও অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে উৎপাদিত মুরগির চেয়েও আমাদের উৎপাদিত মুরগিগুলো বেশি বর্ধনশীল। ফলে প্রান্তিক খামারিরা এই মুরগি উৎপাদনে বেশি আগ্রহী হবেন।’
সম্ভাবনার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জের কথাও বললেন শফিকুল, ‘এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এটির বাণিজ্যিক উৎপাদন ও বিস্তারের জন্য বড় পরিসরে গবেষণা। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি সহায়তা প্রয়োজন। যদিও ইতিমধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছি; কিন্তু সেটি এত বড় পরিসরে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত নয়।’
সূত্র: প্রথম আলো।