পড়াশোনার পাশাপাশি মুরগি পালন ও মাছ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কলেজছাত্র সাদমান হাসান অভি। মুরগি পালনে তার প্রতি মাসে লাখ টাকার বেশি আয় হচ্ছে। অভির সফলতা দেখে এলাকার বেকার যুবকরা মুরগি পালন ও মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বড় উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে এই কলেজছাত্রের।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পুমদি ইউনিয়নের নান্দানিয়ার জহিরুল ইসলাম মানিকের ছেলে সাদমান হাসান অভি। তিনি হোসেনপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। অভির বাবা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। তবে এখন বয়োঃবৃদ্ধ হওয়ায় কাজকর্ম করতে পারেন না।
ছোট বেলা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা জাগে অভির। বাবা একজন সফল রাজনীতিবিদ। কিন্তু বাবার স্বপ্ন ছেলে লেখাপড়ার পাশাপাশি রাজনীতি করুক। কিন্তু ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি আত্মকর্মশীল হতে বিভোর। সেই ইচ্ছে থেকেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় শুরু করেন মুরগি খামার। বর্তমানে তিনি মাঝারি আকারের একটি খামার গড়ে তুলেছেন। সেখানে প্রায় তিন হাজার মুরগি রয়েছে। পাশাপাশি ৬০ শতক করে ২টি জায়গায় মাছের খামার রয়েছে। সেই পুকুরে দেশীয় মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল, পুঁটি) চাষ করেছেন অভি। মাছ বিক্রি করে ভালো লাভবান হচ্ছেন। এভাবে তিনি ছাত্র অবস্থায় সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন।
খামার শুরু করার গল্প জানতে চাইলে অভি বলেন, করোনাকালীন সময়ে বাসা থেকে বের হতে পারছিলাম না। স্কুল-কলেজও বন্ধ ছিল। সারাদিন বাসাতেই সময় কাটতো। বাবা আফতাব পোল্ট্রি খামার চালাতেন। কিন্তু বাবা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় খামার বন্ধ হয়ে যায়। আমি তখন নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করি। সেই সময় নিজের উদ্যোগে স্বল্প মুরগি নিয়ে পোল্ট্রি শুরু করি। বর্তমানে মুরগি পালনের জন্য আলাদা জায়গায় খামার তৈরি করেছি। সেখানে প্রায় ৩ হাজার মুরগির বাচ্চা রয়েছে। দুই মাস পালন করার পরেই সেই বাচ্চা মুরগিতে পরিণত হবে। এরপরে বিক্রয় করা যাবে। বর্তমানে মাসে খরচ বাদে লাখ টাকার বেশি আয় হয়।
তিনি বলেন, তার খামারে দৈনিক তিনজন লোক কাজ করেন। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন এলাকার বেকার যুবকরা। তার প্রতিবেশী মিনু মিয়ার রয়েছে মুরগি ও মাছের সমন্বিত চাষ।
মুরগির স্বাভাবিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতে কি ধরনের খাদ্য খাওয়ানো হয় জানতে চাইলে তিনি জানান, মুরগির যত্নে রাসায়নিকমুক্ত সম্পূর্ণ দেশি ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি খাবার ব্যবহার করেন। স্টেরয়েডমুক্ত মুরগি পালন করেন বিধায় এলাকাবাসী অনেক সময় বেশি দাম দিয়েও নিয়ে যায়।
এই কলেজছাত্র বলেন, সরকারিভাবে যদি কোনো সহযোগিতা পাই অথবা কোনো এনজিও থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পাই, তাহলে সব কিছু পুষিয়ে আরও লাভবান হতে পারবো। খামারও বড় করতে পারবো।
অভির শিক্ষক আরিফুল হক বলেন, অভি অত্যন্ত মেধাবী ও কর্মঠ। পড়াশোনার পাশাপাশি সফল উদ্যোক্তা হতে চলছে। এদেশের জন্য উদ্যোক্তা বড় প্রয়োজন। তাই দার এই কর্মকাণ্ডকে সাদুবাদ জানাই।
অভির বাবা জহিরুল ইসলাম মানিক বলেন, ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করতে চেয়েছে, আমি না করিনি। আমি তাকে সমর্থন দিয়েছি। বিশ্বাস করি যদি সে এভাবে ধরে রাখতে পারে তাহলে একদিন বড় উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। তখন সবাই তাকে নিয়ে গর্ব করবে।
হোসেনপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উজ্জ্বল হোসাইন বলেন, এটা খুবই ভালো একটা দিক। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করছে। সে নিজেকে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছে। আমি তাকে স্বাগত জানাই। তাকে দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে।
সূত্র: নয়া শতাব্দী।