বর্তমান বিশ্বে স্বচ্ছল মানুষের ঘরে অ্যাকুরিয়াম অন্যতম শোভাবর্ধক অংশে পরিণত হয়েছে। ২০০৭ সালে বিশ্বে অন্তত এক মিলিয়ন অ্যাকুরিয়াম ফিশ বিক্রি হয়েছে যার মূল্য কয়েক বিলিয়ন টাকা। চমকপ্রদ তথ্য হলো এই বিপুল পরিমাণ মাছের ৬৫ ভাগ সরবরাহ করে এশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, চীন ও থাইল্যান্ড এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। অ্যাকুরিয়াম ফিশে মিঠাপানির ৪০০০ এবং লোনাপানির ১৪০০ প্রজাতির মধ্যে গোল্ড ফিশ অন্যতম। বর্ণিল কার্প জাতীয় এই মাছ আমাদের আবহাওয়ার সাথেও বেশ চাষোপযোগী। তাই স্বল্প পুঁজিতে এর চাষ করে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনা সম্ভব।
হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা: মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গোল্ড ফিশের প্রজনন মৌসুম। এর আগেই উন্নত খাদ্র ও ব্যবস্থপনার মাধ্যমে এই মাছ সংগ্রহ কিংবা উৎপাদন করা প্রয়োজন। এরা ৮ সে.মি. লম্বা হলেই প্রজননক্ষম হয়ে ওঠে। পুরুষ গোল্ডফিশের প্রজননক্ষম হলে মুখ, শরীর ও পায়খানায় সাদা ফুস্কুরি এবং স্ত্রী গোল্ড ফিশের পেট ফুলে যায় এবং নরম হয়ে যায়, পায়ুপথ ও বড় দেখায়। প্রজননের আগে পুরুষ ও স্ত্রী গোল্ড ফিস আলাদা করে রাখলে ভাল ফল পাওয়া যায়। ৪×১.৫×২ ঘনফুটের এ্যাকুরিয়াম তৈরি করে ভালভাবে জীবাণুমুক্ত করে পরিস্কার পানি দিয়ে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত ভর্তি করতে হবে। বেশি পানি ভরলে পানির চাপে ডিম ফোটা ব্যাহত হতে পারে। তিনটি পুরুষ ও দুইট স্ত্রী গোল্ড ফিশ একত্রে সেই অ্যাকুরিয়ামে ছাড়তে হবে। এ সময় তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রাখা ভাল। একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী গোল্ড ফিস ২০০০ পর্যন্ত ডিম ছাড়ে। স্ত্রী গোল্ডফিস ডিম ছাড়ার পর পুরুষগুলি দ্রুত ডিমের উপর বীর্য ছড়াতে থাকে। ডিম নিষিক্ত হলে মাছগুলো আলাদা করতে ডিমগুলোকে তাড়াতাড়ি অন্য ট্যাংকে স্থানান্তর করা দরকার। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখ্যতে হবে যে পানির তাপমাত্রা যেন অবশ্যই সমান থাকে। ডিমে ফাংগাস সংক্রমণ রোধ করার জন্য কয়েক ফোটা মেথিলিন ব্লু পানির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া যায়। যে ডিমগুলো স্বচ্ছ ও হালকা বাদামী বর্ণের সেগুলো নিষিক্ত ডিম। অন্য ডিম নষ্ট ডিম হিসেবে সরিয়ে ফেলা দরকার। ৩-৪ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবে। ২-৩ মাস বয়সে পোনা বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। ৩ মাস পর আবারও সেই একই পুরুষ ও স্ত্রী মাছগুলোর প্রজনন করানো যায়।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা: ডিম ফোটার প্রথম ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রেনুকে কোন খাদ্য সরবরাহ করার দরকার হয় না। এরপর সেদ্ধ ডিমের কুসুম এবং আটা পেস্ট করে খুব ছোট পিলেট আকারে দেয়া যেতে পারে। অনেক সময় বাজারে রেনুর তরল খাবার পাওয়া যায়। ২ সপ্তাহ পর হতে ব্রাইন শ্রিম্প খাওয়ানো ভাল। ডিম থেকে রেনু বের হওয়ার প্রথম ৪ সপ্তাহ প্রতিদিন ৩ বার এবং ৪ মাস প্রতিদিন ২ বার করে খাবার প্রয়োগ করা যায়। ৪ মাস পর প্রতিদিন একবার খাবার দিলেই চলে। খাবার ব্যাপারে গোল্ড ফিশ বৈচিত্র পছন্দ করে। ভাসমান অথবা ডুবন্ত পিলেট আকারে খাদ্য দেয়া যায়। সব সময় একই খাবার ব্যবহার না করে ভিন্নতা আনা আবশ্যক। গোল্ড ফিশের খাবার নির্বাচনে উচ্চ শর্করা ও নিম্ন ফ্যাট সন্নিবেশ করা জরুরি। বেশি পরিমাণে খাবার দেয়া ঠিক না। ১-২ মিনিটে যতটুকু খাবার শেষ করে ততটুকুই খাবার সরবাহ করা দরকার। দিনে কোনভাবেই তিনবারের বেশি খাবার দেয়া ঠিক না।
অন্যান্য ব্যবস্থাপনা: অব্যহৃত খাদ্য ও অন্যান্য বর্জ্য যত দ্রুত সম্ভব অপসারণ করতে হবে। প্রতিমাসে একবার পানিতে এক চা চামচ পরিমাণ খাবার লবণ মিশিয়ে দিতে হবে। পোনার বয়স একমাস হলেই কৃত্রিম অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। পানির পিএইচ ৬.০-৮.০ খরত্ব ৫.১৯ এবং তাপমাত্রা ৪-১’ সে. পর্যন- থাকতে হবে। তবে ২০-২০’ সে. তাপমাত্রা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী।
তথ্য সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক