আমি হারুন আর রশিদ, পিতাঃ- সিরাজ ফকির, মাতাঃ- তাসলিমা বেগম, গ্রামঃ- বাজার কান্দি, ইউনিয়নঃ- দঃ চরকুমারিয়া, উপজেলাঃ- ভেদরগঞ্জ, জেলাঃ- শরীয়তপুর। আমার খামারের নাম মেসার্স জাহিদ মৎস্য খামার। আমি ১৯৮১ সালে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করি। ২ ভাই ১ বোনের পরিবারে আমি বড়। একদিকে দারিদ্র্য, অন্যদিকে ছোটবেলা থেকে আমার লেখাপড়ার প্রতি অনীহা থাকায় ৮ম শ্রেণি পাসের পর ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়াই। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরিবারের দারিদ্র্য বিমোচনের তাগিদ অনুভব করি। বেশ কিছুদিন বিভিন্ন কাজের সন্ধানে নিষ্ফল প্রচেষ্টার পর পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি।
প্রথমে ২ বছরে কাক্সিক্ষত ফলাফল না পেয়ে, ঠিক তখনি একদিন উপজেলা মৎস্য অফিস ভেদরগঞ্জ, শরীয়তপুরে এ আসি। সেখানে মৎস্য কর্মকর্তা স্যারের সাথে আমার হতাশার কথা ব্যক্ত করি। তিনি আমাকে উদ্ভুদ্ধ করেন এবং মৎস্যচাষ বিষয়ক একটি প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে দেন। তার কাছ থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আমি ৩৩ শতাংশের একটি পুকুরে নতুন উদ্যমে মাছ চাষ শুরু করি। প্রকল্প লাভ হতে থাকলে রেনু পোনা কার্প জাতীয় মাছ চাষ শুরু করি। আমি সময়ের সাথে প্রকল্প সম্প্রসারণ করি। মৎস্য অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী চাষ করার ফলে আমি লাভবান হই এবং পরবর্তী বছর আরও ২ টি পুকুর লীজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। এভাবে মাছ চাষ করে আমি স্বাবলম্বী হই।
২০১৬ সালের মৎস্য অধিদপ্তর এর আওতায় এনএটিপি-২ নামে একটি উন্নয়ন প্রকল্প চালু হয়। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি ইউনিয়ন থেকে ২টি করে সিআইজি সমিতি গঠন করা হয়। উক্ত প্রকল্পের চরকুমারিয়া ইউনিয়নের “ চরকুমারিয়া মৎস্য সিআইজি সমিতি লিঃ” এর একজন সদস্য নির্বাচিত হই। এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন প্রশিক্ষন গ্রহন করি। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে উক্ত প্রকল্পের আওতায় এআইএফ-২ এর মাধ্যমে ১০ টি অটো ব্যাটারী চালিত ভ্যান গাড়ি দেয়, আমি তখন একটি ভ্যান গাড়ি পাই। উক্ত ভ্যান গাড়ি দিয়ে খামারের জীবিত মাছ দুরের বাজারে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করে অনেক লাভবান হই। এখন আমি একজন সফল মৎস্য চাষি।
হারুন আর রশিদ শুরুতে মিশ্র মাছ চাষ শুরু করেন এবং এলাকার চাহিদা অনুযায়ী ধীরে ধীরে কার্প মিশ্র চাষ, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস ও গলদা চিংড়ি চাষ করেন।
বর্তমানে তার অধীনে এখন ১০টি পুকুরে মাছ চাষ ও রেনু উৎপাদন কার্যক্রম চলছে, যার আয়তন আনুমানিক ২৫ একর। এখন সে আধুনিক প্রযুক্তির পুকুরে এয়ারেটর স্থাপন এর মাধ্যমে মাছ চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন। হারুন আর রশিদ বলেন, আমার প্রকল্পে মজুরিভিত্তিকসহ ০৪ জন জনবল কর্মরত। প্রকল্পের বর্তমান মূলধন ৯০ লক্ষ টাকা ও বার্ষিক নীট আয় ২৫ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। দারিদ্র্যকে জয় করে আমি সংসারে হাসি ফুটিয়েছি। আমি হারুন আর রশিদ মনে করি, একজন যুবক যদি সৎ, কর্মঠ ও পরিশ্রমী হন আর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তাহলে সে সফলতা পাবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
প্রতিবেদনকারী : মোঃ মেহেদী হাসান, এআইসিও।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর।