প্রথমে শখের বশে শুরু করলেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বাহারি রঙের বিদেশি রঙিন মাছ চাষ করে সফল হয়েছে তারেক। চাকরির ফাঁকে ফাঁকে সময় দিয়ে রঙিন মাছের খামারটি গড়েন তিনি। বর্তমানে তার খামারটি প্রায় দেড় একর জায়গা জুড়ে রয়েছে। এই বিভিন্ন প্রজাতির রঙিন মাছ চাষ করে মাসে তিনি ৩০-৪০ হাজার টাকার আয় করছেন। রঙিন মাছ চাষে তার সফলতা দেখে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন।
জানা যায়, তারেক হোসেন চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চরবাকিলা গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। অনলাইনে রঙিন মাছ চাষ দেখে ভালো লাগলে চাষের পরিকল্পনা করেন। চাকরির পাশাপাশি ২০১৯ সালে ৪টি চৌবাচ্চা দিয়ে রঙিন মাছ শুরু করেন। বর্তমানে তিনটি বড় পুকুর ও বাড়ির পাশের পতিত জমিতে ৩০টি চৌবাচ্চাসহ প্রায় দেড় একর জমিতে রঙিন মাছ চাষ করছেন। বর্তমানে খামারে গোল্ড ফিশ, কমেট, কই কার্ভ, ওরেন্টা গোল্ড, সিল্কি কই, মলি, গাপটি, প্লাটিসহ ১১ প্রজাতির মা মাছ আছে।
তরুণ উদ্যোক্তা তরেক বলেন, শুরুতে শখের বশে ১ লাখ টাকা খরচ করে বাড়ির আঙিনায় ও পাশের পতিত জমিতে মাছের ৪টি চৌবাচ্চা বসিয়ে চাষ শুরু করি। তারপর ধীরে ধীরে মাছের সংখ্যার সাথে সাথে খামারের পরিধিও বৃদ্ধি করি। বর্তমানে ৩টি বড় পুকুরসহ ৩০টি চৌবাচ্চায় রঙিন মাছ চাষ করছি।
তিনি আরো বলেন, খামারের শুরু থেকেই আমার পরিবারের সবার সহযোগিতা পাই। আমার বাবা, ছোট দুইভাইও খামারের দেখাশোনা করেছেন। প্রায় ১১ প্রজাতির মা মাছ রয়েছে আমার খামারে। একটি মা মাছের রেনু থেকে বছরে প্রায় ৩ হাজার পোনা উৎপাদন করা যায়। খামারে উৎপাদিত পোনা বিক্রি করে বছরে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় করতে পারি। আগামীতে লিজে জমি নিয়ে খামার আরো বড় করার পরিকল্পনা করছি।
উদ্যোক্তা তারেকের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমার ছেলে চাকরির পাশাপাশি রঙিন মাছ চাষের বিষয়টি জানালে আমরা এতে সমর্থন দেই এবং এই খামার গড়ে তুলতে সাহায্য করি। আমার ছোট একটি দোকান ছিল। বর্তমানে সেই দোকান ছেড়ে পুরোটা সময় খামারে দেই।
উদ্যোক্তা তারেক হোসেনের ছোট ভাই মো. হোসেন ও রাকিব হোসেন বলেন, ভাইয়ের রঙিন মাছে প্রজেক্ট চালু হওয়ার পর আমরা আর বাইরে সময় নষ্ট না করে খামারে সময় দেই। ভাইয়ের এই প্রজেক্ট থেকে আমাদেরও অনেক কিছু শেখার আছে। আমরাও ভাইয়ের মতো উদ্যোক্তা হতে চাই।
স্থানীয়রা জানান, তারেক রঙিন মাছ চাষে সফলতা পেয়েছেন। স্থানীয় অনেক মানুষ তারেকের খামারটি দেখতে যান। অনেক বেকার যুবক ও শিক্ষার্থীরাও তারেক থেকে পরামর্শ নিয়ে খামার গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়েছেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তানজিমুল ইসলাম বলেন, শৌখিন মানুষরা তাদের বাড়ি, দোকান ও বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য রঙিন মাছ কিনে নিয়ে যান। তাছাড়া এই রঙিন মাছ চাষ খুব সহজ। সময় মতো খাবার ও একটু যত্ন নিলেই ব্যাপক লাভবান হতে পারেন উদ্যোক্তারা। আশা করছি রঙিন মাছ চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব হবে।