শামীম মাতব্বর দীর্ঘদিন ধরে পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করেন। পুরোনো পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে আগে তাঁর তেমন লাভ হচ্ছিল না। পরে তিনি কার্প ফ্যাটেনিং (কম সময়ে বড় আকারের মাছ) প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করেন। এতে অল্প সময়ে মাছ বড় হওয়ায় তিনি এখন লাভবান হচ্ছেন।
এক বছর আগে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের পরামর্শে কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তিতে মাছ চাষ শুরু করেন মৎস্যচাষি শামীম মাতব্বর। তাঁর সফলতা দেখে অন্য মৎস্যচাষিরাও উৎসাহী হয়েছেন। এলাকায় অন্তত ২০টি পুকুরে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু হয়েছে।
শামীম মাতব্বরের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নীলগঞ্জ গ্রামে। তিনি বলেন, আগে দু-চার ইঞ্চির পোনা পুকুরে ছাড়তেন। একসময় দেখা যেত, পোনার সংখ্যা কমে যেত, বড় হতে বছরের পর বছর লেগে যেত। গত বছর পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের কাছ থেকে পরামর্শ পেয়ে ‘কার্প ফ্যাটেনিং’ পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন। এখন পাঁচ-ছয় মাসেই দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের মাছ উৎপাদন হচ্ছে।
আরিফুল আলম জানান, কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তির প্রধান বাধা স্থানীয়ভাবে বড় আকারের কার্পজাতীয় মাছের অপ্রতুলতা। স্থানীয় নার্সারিগুলোতে বড় আকারের পোনা উৎপাদনসহ মৎস্যচাষিরা পোনা কিছু সময় লালন করে পুকুরে চাষ করলে কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন বহুলাংশে বাড়বে।
মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, এই অঞ্চলের মাছচাষিরা সাধারণত ছোট আকারের পোনা পুকুরে ছাড়েন। ছোট আকারের মাছ বাজারজাতের উপযোগী হতে সাধারণত দু-তিন বছর সময় লাগে। এ ছাড়া ছোট আকারের মাছের মৃত্যুহারও বেশি। কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তিতে সাধারণত বড় আকারের, যেমন ৪০০-৬০০ গ্রাম ওজনের কার্পজাতীয় মাছ পুকুরে মজুত করা হয়। প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য দেওয়া হয়। এতে সাত-আট মাসেই মাছ বাজারজাত করা যায়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের একটি প্রকল্পের আওতায় কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ও চাকামইয়া ইউনিয়নের আনিপাড়া, কাঁঠালপাড়া গ্রামে নতুন প্রযুক্তিতে মাছ চাষ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পে কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তির মাধ্যমে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প প্রভৃতি কার্পজাতীয় মাছ চাষের নতুন প্রযুক্তি সফলতা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের মৎস্য চাষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক এবং মৎস্য জীববিদ্যা কৌলিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুল আলম ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে কলাপাড়ায় এই নতুন প্রযুক্তিতে মৎস্যচাষিদের উদ্বুদ্ধ করছেন।
সূত্রঃ প্রথম আলো।