জেলেদের ভাষ্য, মৌসুমের এই সময়টাতে উপকূলের নদ-নদীতে ইলিশ ধরা পড়ার কথা। কিন্তু নদ-নদীতে জাল ফেললেও তেমন ইলিশ উঠছে না। এমনটা হওয়ার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে?
আনিসুর রহমান: এটা স্বাভাবিকভাবেই নিতে হবে। কারণ, ইলিশের প্রজনন, উৎপাদন—সবকিছুই বৃষ্টিপাত, পানি ও স্রোতের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই বৃষ্টি বাড়লেই নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যাবে। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এ জন্য প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
আনিসুর রহমান: এর পেছনে নানা বিষয় কাজ করছে। যেমন চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়া, নদ-নদীতে ডুবোচর, নানা ধরনের দূষণ প্রধানত দায়ী। আরও একটি বিষয়, সাগরমোহনা থেকে শুরু করে নদ–নদী অসংখ্য ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে ঘিরে রাখায় মাছ নদীতে আসতে বাধা পাচ্ছে।
আনিসুর রহমান: এখন আর ইলিশের আলাদা কোনো মৌসুম নেই। সারা বছরই ইলিশ ধরা পড়ে দেশের নদ-নদী ও সাগরে। এখন কেন মৌসুম হারিয়ে গেল, এমন প্রশ্ন আসতে পারে। আগে বর্ষা মৌসুম ছিল আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে। নব্বইয়ের দশকেও এই মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টি হতো। কিন্তু ২০০৭ সালের পর দেশের ঋতুগুলোতে বেশ পরিবর্তন আসায় এখন বর্ষা মৌসুম সরে গিয়ে আগস্ট-সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবরে চলে গেছে। যেহেতু ইলিশের উৎপাদন-প্রজনন সবকিছুই আবর্তিত হয় বর্ষা ঘিরে, তাই ইলিশের মৌসুমও সরে গেছে। আর ভালো ব্যবস্থাপনার কারণে এখন শীতেও ব্যাপক হারে ইলিশ মিলছে নদ-নদী ও সাগরে। এখন মূলত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসকে ইলিশের মূল মৌসুম ধরা হয়। এখন জুন-জুলাইকে ইলিশের ‘ডাল সিজন’ মনে করা হয়।
পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশের বিচরণক্ষেত্রে পানির গুণগত মানের অবনতি হচ্ছে, আপনাদের গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। এর ফলে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে ইলিশ প্রজনন ও উৎপাদনে?
আনিসুর রহমান: পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশের বিচরণক্ষেত্রে পানির গুণগত মানের অবনতি হচ্ছে। সেই সঙ্গে কমছে ইলিশের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের প্রাপ্যতা। ফলে ইলিশ উৎপাদনের ওপর একসময় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
গত এক দশকে ইলিশের উৎপাদনে ইতিবাচক অগ্রগতি বিশ্বকে তাক লাগিয়েছে। এই উৎপাদনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে কী করণীয়?
আনিসুর রহমান: নানামুখী উদ্যোগের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন ইতিবাচকভাবে বাড়লেও এখন ধারাবাহিকতা বজায় রাখার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। দেশে ইলিশের উৎপাদন সাত লাখ টনে উত্তীর্ণ করতে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ১০টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দেশের নদ-নদী ও সাগর থেকে আগামী দুই-তিন বছর পর্যন্ত প্রতিবার সাত লাখ টনের বেশি ইলিশ আহরণ না করা, প্রতিটি ইলিশকে জীবনচক্রে কমপক্ষে একবার হলেও ডিম ছাড়ার সুযোগ দেওয়া।