সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ শুরু করেছেন মৌয়ালরা। মৌসুমের প্রথম দিনেই সোমবার দুপুরে পশ্চিম সুন্দরবন বন বিভাগের আয়োজনে মুন্সিগঞ্জ প্রাইমারি স্কুল চত্বরে অনুষ্ঠিত মধু আহরণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মৌয়ালদের হাতে অনুমতিপত্র তুলে দেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এসএম আতাউল হক দোলন। এ সময় একে একে মৌয়ালরা বন বিভাগের পাশ নিয়ে বনে প্রবেশ করেন।
মধু আহরণ মৌসুমের উদ্বোধন ও মৌয়ালদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন।
পশ্চিম বন বিভাগের বুড়িগোয়ালিনী বন অফিস সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে মৌয়ালদের প্রশিক্ষণের পর মধু আহরণের অনুমতিপত্র (পাস) দেওয়া শুরু করে বনবিভাগ। অনুমতিপত্র নিয়ে গভীর সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের খোঁজে যেতে শুরু করেছেন মৌয়ালরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি’র বক্তব্য রাখেন শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিসেস খালেদা আইয়ুব ডলি, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম প্রমূখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন, কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম, রমজাননগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আল মামুন, শ্যামনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। এ সময় অনুষ্ঠানে ১০ জন হরিণ শিকারী ও বিষ দিয়ে মাছ শিকারী আত্মসমর্পণ করেন।
এর আগে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া এলাকায় মধু আহরণের মধ্য দিয়ে মধু মৌসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চলতি মৌসুমে পশ্চিম সুন্দরবন থেকে ১ হাজার ৫০০ কুইন্টাল বা ১ লাখ ৫০০ কেজি মধু ও ৪৫০ কুইন্টাল বা ৪৫ হাজার কেজি মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জের লক্ষ্যমাত্রা ৯৫০ কুইন্টাল বা ৯৫ হাজার কেজি মধু ও ২৮৬ কুইন্টাল বা ২৮ হাজার ৬০০ মোম।
বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের তথ্য মতে, ২০২২ সালে ৪১১টি পাস নিয়ে ২ হাজার ৮৯৮ জন মৌয়াল ১ হাজার ৪৪৯ কুইন্টাল মধু এবং ৩৩৪ দশমিক ৭০ কুইন্টাল মোম আহরণ করেন। এ থেকে রাজস্ব আয় হয় ৩২ লাখ ৭৪ হাজার ৭০০ টাকা।
২০২৩ সালে ৩৬৫টি পাস নিয়ে ২ হাজার ৪৫০ জন মৌয়াল সুন্দরবনের মধু আহরণে যান। তারা সুন্দরবন থেকে ১ হাজার ২২৫ কুইন্টাল মধু ও ৩৬৭ দশমিক পাঁচ কুইন্টাল মোম আহরণ করেন। এ থেকে রাজস্ব আয় হয় ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা।
জানা গেছে, ১৮৬০ সাল থেকে সুন্দরবনের মধু আহরণ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৮৮৬ সাল থেকে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে অনুষ্ঠান করে প্রতিবছর ১ এপ্রিল মধু আহরণ মৌসুম উদ্বোধন করা হয়। বন সংলগ্ন একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী বংশ পরম্পরায় মধু সংগ্রহ করে আসছে। এদের মৌয়াল বলা হয়।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।