টার্কি মুরগি ব্যাবসা করে সংসারের অভাব পুরন করে নিজের ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে চকরিয়ার উপজেলার খুটাখালী চড়িবিল এলাকার নুরুল আলম(৫৫) নামের এক কাঠ ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন কাঠ ব্যবসা করলেও স্বচ্ছলতা আসেনি তার পরিবারে। কাঠ ব্যবসার মাধ্যমে পরিবারের মাঝে স্বচ্ছলতা ফিরে না আসায় উদ্যোগ নেয় টার্কি মুরগী পালন। টার্কি মুরগী পালনের পর থেকে দিন দিন বেড়ে চলেছে তারখামারে অতিথিদের সংখ্যা। একজন সফল খামারী হিসাবে তিনি রাত দিন পরিশ্রম করে চলেছেন। তার খামারে সাদা-কালো এবং ব্রোঞ্জ রং এর শতাধিক টার্কি রয়েছে। টার্কি মুরগীর পাশাপাশি দেশীয় মুরগীও পালন করছেন। বর্তমানে টার্কি মুরগী পালন করে নিজেকে স্বাভলম্বী হিসেবে দাবী করেন খামারী নুরুল আলম। যার কারনে পরিবারের মাঝে ফিরে আসছে স্বচ্ছলতা এবং কেটে গেছে আর্থিক সংকট। মুরগী খামারী নুরুল আলম বলেন, নিজের পরিবারের অভাব গোছাতে বিগত দশ মাস পূর্বে চট্রগ্রাম শহর থেকে চারটি টার্কি মুরগি কিনে আনেন। কিনে আনা টার্কি মুরগীর মধ্যে তিনটি মা ও একটি পুরুষ ছিল। এ টার্কি যতœসহকারে লালন-পালন করে টার্কির বয়স ছয় সাত মাস যেতে না যেতেই ডিম দেয়া শুরু হয়। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই দুই জোড়া টার্কি মুরগি থেকে এখন তিনি কয়েকশ টার্কির মালিক ও একজন সফল টার্কি খামারী। শুধুমাত্র ২১ হাজার টাকার (টার্কি ক্রয়) বিনিয়োগ করে তিনি এখন লক্ষ টাকার মালিক। প্রথম পর্যায়ে টার্কি মুরগী বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকা আয় করে খামারী আলম।
তিনি টার্কি খামারীর নাম দেন আলম টার্কি খামার । প্রতি মাসে ডিম ও টার্কি মুরগি বিক্রয় করে ভালোই আয় হয় তার। এখন বাণিজ্যিক ভাবে খামার করছেন তিনি। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি আরো বড় পরিসরে খামার গড়ে তুলার পরিকল্পনাও করছেন তিনি। এ মুরগির সাধারণ মুরগির মতো রোগ বালাই হলেও বড় ধরণের কোনো অসুখ এখন পর্যন্ত হয়নি। টার্কি মুরগীর পাশাপাশি দেশীয় জাতি মুরগী রয়েছে বেশ কয়েক জোড়া। তিনি আরো জানান, টার্কির রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশী। ছয় মাসের একটি পুরুষ টার্কির ওজন হয় পাঁচ থেকে ছয় কেজি এবং স্ত্রী টার্কির ওজন হয় তিন থেকে চার কেজি। বর্তমানে দেশীয় জাতি মুরগীর মাধ্যমে ২৮ দিনেই টার্কির এ ডিম ফুটানো যায়। তিনি এক মাসের টার্কির বাচ্চা জোড়া হিসেবে বিক্রি করেন তিন হাজার টাকায়। এক থেকে পনের দিনের বাচ্চা জোড়া হিসেবে বিক্রি করে ১হাজার-১২শত টাকায়। এছাড়াও প্রতিটি টার্কি মুরগীর ডিম বিক্রি করেন ২০০ টাকায়। টার্কি মুরগী পালনে যে সব সুবিধা রয়েছে তা হলো, টার্কি মুরগী দেশী মুরগীর মতো লালন-পালন করা যায়। ব্রয়লারের মুরগীর চেয়ে দ্রুত বাড়ে এবং টার্কির ওজন দশ থেকে বার কেজি পর্যন্ত হয়। টার্কি মুরগীর প্রধান খাদ্য হচ্ছে ঘাস, লতাপাতা ও সবজি জাতীয় খাবার। টার্কি মুরগীর মাংসের প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। এ মুরগীর মধ্যে কোন ধরণের চর্বি নেই। প্রতিটি স্ত্রী (মা মাদার) টার্কি মুরগী বছরে ১২০ থেকে ১৬০টির মতো ডিম দিয়ে থাকে। চকরিয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: ফেরদৌসী আকতার দ্বীপ্তি বলেন, টার্কি আমাদের প্রাণিসম্পদ, এটি একটি নতুন প্রজাতি। ঢাকা, চট্রগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় টার্কি পালন করা হচ্ছে অনেক দিন ধরে। টার্কি পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। এ কারণে খামারিরা এ ব্যবসার প্রতি ঝুঁকছেন। প্রাণীসম্পদ বিভাগ থেকে টার্কি খামারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয় নিয়মিত।