প্রথমে তাকে কটূকথা শোনালেও এখন তাকে দেখেই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন প্রতিবেশী বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনরা। পড়ালেখার পাশাপাশি মুরগি পালন করে তিনি ধীরে ধীরে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। তাকে দেখে প্রতিবেশী বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনরাও পরামর্শ নিয়ে মুরগি পালন কিংবা অন্য কোনো ব্যবসা করে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করছেন।
গল্পটি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের পাঁচরুখী বেগম আনোয়ারা ডিগ্রী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র জিহাদ পাঠানের। তার বাড়ি আড়াইহাজারের দুপ্তারা ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া এলাকায়। তার বাবা জাহাঙ্গীর পাঠান।
জিহাদ পাঠান প্রথমে বাসার ছাদে স্বল্প পরিসরে মুরগি পালন শুরু করলেও বর্তমানে তিনি মাঝারি আকারের একটি খামার গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে সেখানে প্রায় তিন হাজার মুরগি রয়েছে। পাশাপাশি ছাগলেরও খামার গড়ে তোলার চিন্তা করছেন। এরইমধ্যে সেখানে ৬টি ছাগল এনেছেন। এভাবে তিনি ছাত্র অবস্থায় সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন।
শুরু করার গল্প বলতে গিয়ে জিহাদ বলেন, করোনাকালীন সময়ে বাসা থেকে বের হতে পারছিলাম না। স্কুল-কলেজও বন্ধ ছিল। সারাদিন বাসাতেই সময় কাটতো। একদিন মোবাইলে মুরগি পালনের একটি ভিডিও দেখি। সেটা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও কয়েকটি ভিডিও দেখি। তখন থেকেই পরিকল্পনা করি মুরগি পালন করার। বাসার ছাদে ছোট করে মুরগি পালন শুরু করি।
বর্তমানে মুরগি পালনের জন্য আলাদা জায়গায় খামার তৈরি করেছি। সেখানে প্রায় ৩ হাজার মুরগির বাচ্চা রয়েছে। দুই মাস পালন করার পরই সে বাচ্চা মুরগিতে পরিণত হবে এবং বিক্রয়যোগ্য হবে। মুরগির পাশাপাশি কয়েকটি ছাগলও পালন করছি। এভাবে ধীরে ধীরে ব্যবসাটা বড় করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অন্যদের কাছে কিভাবে অনুপ্রেরণা হচ্ছেন সে বিষয়ে বলতে গিয়ে জিহাদ বলেন, আমাদের একজন স্যার আছেন যার কাছে আমি প্রাইভেট পড়তাম। তিনি এখন আমাকে দেখে আফসোস করে বলেন, তোমার মতো আগে থেকে কিছু করতে পারলেই ভালো হলো। এখন চাকরির জন্য সিভি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হতো না।
জিহাদকে সহযোগিতাকারী ছোট চাচা ফাহিম বলেন, আমি পড়ালেখা করতে পারিনি। দু’বছর আগে আমি একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম। তখন জিহাদ আমাকে বলে মুরগির ফার্ম করবে; আমাকে সহযোগিতা করতে হবে। তখন আমিও আর না বলিনি। তাকে সহযোগিতা করছি। পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যদের মতো সময় নষ্ট না করে ফার্মে এসে কাজ করে। তাকে দেখে আমিও অনুপ্রাণিত হই। আমি মাঝে মধ্যে তাকে সময় দিয়ে সহযোগিতা করছি।
জিহাদের বাবা জাহাঙ্গীর পাঠান জাগো নিউজকে বলেন, আমার ছেলে পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করতে চেয়েছে, আমি না করিনি। আমি তাকে সমর্থন দিয়েছি। যদিও অনেক আত্মীয় স্বজন বিষয়টি প্রথমে ভালোভাবে নেয়নি। আবার কোনো কোনো আত্মীয় তাকে আশ্বাস দিয়ে সাহসও যুগিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যদি সে এভাবে ধরে রাখতে পারে তাহলে একদিন বড় উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। তখন সবাই তাকে নিয়ে গর্ব করবে।
জেলা প্রাণিসম্পদক কর্মকর্তা বাসনা আখতার জাগো নিউজকে বলেন, এটা খুবই ভালো একটা দিক। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করছে। সেইসঙ্গে বড় বিষয় হলো সে দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ করছে। সে নিজেকে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছে। আমি তাকে স্বাগত জানাই। তাকে দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে।
সোর্স ঃ জাগো নিউজ।