বরিশালের ভোলা সদরে দক্ষিণ দিঘলদী গ্রামের উদ্যোক্তা কামরুল হাসান খোকন খামারের পশুর বর্জ্য দ্বারা বায়োগ্যাস উৎপাদন করে করে লাভবান হয়েছেন। তার খামারে ২৫টি ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল ও দেশি গরুর পাশাপাশি ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের শতাধিক ছাগল রয়েছে।
জানা যায়, কামরুল হাসান খোকন পেশায় একজন কলেজ শিক্ষক। ২০১৬ সালে খামার শুরু করেন। বর্তমানে তার খামারে ২৫টি ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল ও দেশি গরুর পাশাপাশি ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের শতাধিক ছাগল রয়েছে। ২০২০ সালে এসব পশুর বর্জ্য দ্বারা বায়োগ্যাস উৎপাদন করে নিজের এবং আরো ১০টি পরিবারে গ্যাস সরবরাহ করছেন। এসব পরিবারে রান্নায় কাঠের ব্যবহার ও ব্যয়বহুল এলপি গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ হওয়ায় কমে গেছে খরচও। তার এই সফলতা দেখে অন্যান্য খামারিরাও বায়োগ্যাস উৎপাদনে উৎসাহিত হচ্ছেন।
উদ্যোক্তা কামরুল হাসান খোকন বলেন, দেশে যে পরিমাণ ডেইরি ও পোলট্রি ফার্ম আছে, প্রতি ফার্মে যদি বায়োগ্যাস তৈরি করা হয় তাহলে রান্নার জ্বালানি খরচ কমে যাবে। আমি ২০২০ সালে খামারের পশুর বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন করছি। পাশাপাশি ১০টি পরিবারে গ্যাস সরবরাহ করছি। গ্যাস নিজে ব্যবহার করে খরচ কমিয়েছি পাশাপাশি বিক্রি করে বাড়তি টাকাও আয় করতে পারছি। সব খামারিরা যদি বায়োগ্যাস উৎপাদন করতেন তাহলে কাঠের ও এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার কমে খরচও কমে যেত।
তিনি আরো বলেন, আমি বায়োগ্যাসের সেলারি পিটের বর্জ্য থেকে উন্নতমানের ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন করছি। এই সার ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অর্গানিক উপায়ে ফলমূল, শাক-সবজি ও গবাদি পশুর জন্য উন্নত জাতের ঘাস চাষও করছি এবং অবশিষ্ট সার বাজারে বিক্রি করেও বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করতে পারছি।
কামরুল আরো বলেন, বায়োগ্যাস প্লান্টে ব্যবহার করা না হলে গরুর গোবর বা হাঁস-মুরগির বিষ্ঠাগুলো এদিক-ওদিক পড়ে থেকে দুর্গন্ধ ছড়াবে। প্লান্টের আরেকটি সুবিধা হলো, গ্যাস তৈরির পর যে অবশিষ্ট অংশ থাকে তা উন্নতমানের জৈব সার হিসেবে জমিতে এবং পুকুরে মাছের খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
বায়োগ্যাস ব্যবহারকারী স্থানীয় লোকজন বলছেন, আমরা বায়োগ্যাস ব্যবহারে খুব উপকার পাচ্ছি। বাজারের এলপিজি গ্যাস ১২৫০ টাকা শুরু করে ২৫০০ টাকায় কিনতে হয়। এখন মাত্র ১ হাজার টাকায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে বায়োগ্যাস ব্যবহার করছি।
ভোলা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, আমরা কামরুল হাসানের বায়োগ্যাস প্ল্যান্টটি পরিদর্শন করেছি। কামরুল হাসান একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি আমাদের থেকে নিয়মিত পরামর্শ নিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিয়াজ মাহমুদ বলেন, কামরুল হাসান তার খামারের বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাসের পাশাপাশি তা থেকে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করছেন। এই সারের ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমেছে।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে সারা দেশে ছয় লাখ ৮১ হাজার ৫৩২টি গবাদি পশুর খামার রয়েছে। খামারিরা যদি বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করেন তাহলে রান্নায় ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস, কাঠের ব্যবহার কমানো যেত।