মোঃ মহিরুল ইসলাম যশোরের মণিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে ১৯৭৫ খ্রিঃ জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নিজস্ব জমি না থাকার কারণে আর্থিক অস্বচ্ছলতার মধ্যে দিয়ে তিনি বড় হয়ে ওঠেন। পেশাগতভাবে তিনি প্রথমে একজন দর্জি ছিলেন এবং পাশাপাশি তিনি ২০০৮ সাল থেকে ৪০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। কিন্তু অর্থের স্বল্পতা ও মাছ চাষ বিষয়ক কোন প্রশিক্ষণ না থাকায় তিনি মাছ চাষে প্রথমে সফলতার মুখ দেখতে পারেননি। তিনি ২০০৯ সালে মৎস্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এগিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগাম (ফেজ-১) প্রকল্পের অধীনে ২০ জন সদস্য নিয়ে তেঁতুলিয়া কার্প মিশ্র চাষ সিআইজি (মৎস্য) সমবায় সমিতি লিঃ এর একজন সদস্য হিসেবে যুক্ত হন এবং তিনি উক্ত প্রকল্পের অধীনে মাছ চাষ সম্পর্কিত নানা ধরনের প্রশিক্ষণ পান এবং সমিতির অন্যান্য সদস্যের ন্যায় তিনিও ২০০/- টাকা করে প্রতি মাসে সঞ্চয় শুরু করেন । সমিতির সাথে যুক্ত হওয়ায় তিনি মাছ চাষে ঋণ নেওয়ার জন্য সমিতি থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারেন। বর্তামানে তিনি মাছ চাষে সফলতার মুখ দেখেছেন এবং এখন তার নিজের ৩টি পুকুর যার মোট আয়তন ০.৯০ হেক্টর। মোঃ মহিরুল ইসলাম মণিরামপুর উপজেলা মৎস্য প্রডিউসার অর্গানাইজেশনে একজন সক্রিয় সদস্য। কিন্তু মাছ চাষের পাশাপাশি উক্ত সমিতির সদস্যরা মাছ বিপনের জন্য ভাড়াকৃত পিকআপ ভ্যানের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই তারা ২০১৯ সালে এনএটিপি-২ প্রকল্পের এআইএফ-২ উপপ্রকল্পের অনুদানের মাধ্যমে একটি পিকআপ ভ্যান ক্রয় করেন যার মাধ্যমে সমিতির সকল সদস্যরা মাছ চাষের বিভিন্ন উপকরণ একসাথে ক্রয় করে পরিবহন করেন এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পিকআপ ভ্যানের মাধ্যমে মাছ বিপননের জন্য পরিবহন করেন। প্রতি ৩ (তিন) মাস পর পর পিকআপ-ভ্যানের মুনাফা সকল সদস্যের মাঝে বন্টন করা হয় ফলে সবাই আর্থিকভাবে সাবলম্বি হচ্ছেন। বর্তমানে মোঃ মহিরুল ইসলাম পাবদা, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া এবং কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ করছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে হেক্টরপ্রতি তিনি ১৪.৮০ মে. টন করে তেলাপিয়া, ২২.৫০ মে.টন করে পাঙ্গাস, ৫.০০ মে.টন করে পাবদা এবং ৫.৯০ মে.টন করে কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। মাছ চাষে তাঁকে আর কখনও পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তাঁর নিজের একটি ডুবন্ত খাদ্য তৈরীর মেশিন রয়েছে, এর সাহায্যে তিনি কম খরচে খাদ্য তৈরী করে মাছ চাষে ব্যবহার করছেন; এছাড়া মাছ চাষে তিনি সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে এরিয়েটর এবং অটোফিডার মেশিন ব্যবহার করে সুফল পেয়েছেন। গত বছর মোট ১৪.৫০ মে.টন মাছ উৎপাদন করার মাধ্যমে তিনি ৮.৫০ লক্ষ টাকা মুনাফা করেছেন। মোঃ মহিরুল ইসলাম উক্ত সমিতির সকল সদস্যের কাছে একজন অনুকরণীয় চাষী হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন এবং অনেকচাষী তাঁর মতো মাছ চাষে যান্ত্রীকীকরনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য ২০১৯ সালের নভেম্বরে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধী দল ও মৎস্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এগিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগাম ফেজ-২ প্রকল্পের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উক্ত সমিতি এবং মোঃ মহিরুল ইসলামের মাছ চাষের সাফল্য দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলা এবং খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন সিআইজি সমিতি ইতোমধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরে উক্ত সমিতিটি পরিদর্শন করেছেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের স্নাতক ৩য় বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা মাঠ পরিদর্শনের অংশ হিসাবে তাঁর খামারটি পরিদর্শন করে হাতে কলমে মৎস্যচাষের জ্ঞান অর্জন করেন। ২০১৮ সালে মোঃ মহিরুল ইসলাম জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে মণিরামপুর উপজেলা উদীয়মান মাছ চাষী হিসাবে সেরা পুরস্কার অর্জন করেন।
সূত্রঃ জেলা মৎস্য অফিস,যশোর
মৎস্যচাষী মোঃ মহিরুল ইসলামের সফলতার গল্প
১৩