খুলনার সুন্দরবন উপকূলীয় উপজেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় চিংড়ি মাছে জেলি পুশের প্রবণতা বেড়েছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
আমিনুল হক: সুন্দরবন উপকূলে চিংড়িতে জেলি পুশ বাড়ছে, এটা অশনিসংকেত। ওজন বাড়ানোর জন্য খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় জনপদসহ দক্ষিণাঞ্চলের অসাধু ব্যবসায়ীরা সিরিঞ্জ দিয়ে চিংড়িতে জেলিসহ বিভিন্ন অপদ্রব্য পুশ করেন। জেলিযুক্ত চিংড়ি মাছে ক্রেতারা তিনভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। প্রথমত, ওজন প্রতারণা; দ্বিতীয়ত, দাম বেশি ও তৃতীয়ত, মাছের গুণগত মান নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া ভেজাল চিংড়ি রপ্তানি হলে দেশের সুনাম নষ্ট হওয়ার সঙ্গে ঝুঁকিতে পড়বে প্রতিযোগিতাপূর্ণ আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার সুযোগ।
চিংড়ির শরীরে জেলিসহ বিভিন্ন অপদ্রব্য ঢোকানোর কারণে কী কী প্রভাব পড়ে মানবদেহের ওপর?
আমিনুল হক: খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা নিবন্ধ থেকে জানা যায়, চিংড়ি মাছের ভেতরে জেলিসহ অন্যান্য অপদ্রব্য মিশ্রিত চিংড়ি খেলে কিডনি, লিভার ও পাকস্থলীর নানাবিধ জটিলতা তৈরি হতে পারে। জেলির যে রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, সেটা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তা ছাড়া খাবারের সঙ্গে যেকোনো অপ্রত্যাশিত বস্তু, যা খাবার নয়, সেটা থাকাটাই ক্ষতিকর।
আমিনুল হক: খালি চোখে দূর থেকে দেখলে বোঝা যাবে না যে চিংড়িতে জেলি আছে কিনা। এর জন্য কাছে গিয়ে দেখতে হবে, তবে নিশ্চিত হতে হলে চিংড়ি মাছ ভেঙে দেখতে হবে সেখানে কোনো তরল পদার্থ আছে কিনা। ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আলগা একটি বস্তু দেখা যাবে, নিচু করে ধরলে সেটা সবটা বেরিয়ে আসতে চাইবে। দেখেই বোঝা যাবে, আলাদা বস্তু সেখানে প্রবেশ করানো হয়েছে।
চিংড়িতে জেলি ও রাসায়নিকের পুশ প্রবণতা বন্ধের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন?
আমিনুল হক: এটা অনেক বড় ব্যাপার। তবু এককথায় বলা যায়, সবাইকে যার যার জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। গ্রামগঞ্জে সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। চাষি ও ভোক্তাপর্যায়ে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চালাতে হবে। ভোক্তা সচেতন না হলে কোনো কাজ হবে না। এ–সংক্রান্ত আইন প্রয়োগ করতে হবে। প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। সর্বোপরি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এটি বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।
মাঝেমধ্যে আমরা দেখি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জরিমানা করছেন। আবার জেলিযুক্ত চিংড়ি ধ্বংস করছেন। এই দণ্ড পর্যাপ্ত মনে করেন?
আমিনুল হক: আমরা খাওয়ার জন্য বেঁচে থাকি না, বাঁচার জন্য খাই। খাবারের নিরাপত্তাটুকুও যদি না পাই তাহলে কীভাবে বাঁচি! বিদ্যমান মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ আইন-২০২০ অনুযায়ী চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করার প্রমাণ পাওয়া গেলে দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ আট লাখ টাকা জরিমানার বিধান আছে।
আমিনুল হক: পুশ করা চিংড়ি রপ্তানির কারণে বিদেশের বাজারে দেশের চিংড়ির বাজার হারাচ্ছে। প্রতিবছর আমাদের দক্ষিণাঞ্চল থেকে গড়ে আড়াই হাজার কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি হয়। তবে জেলি পুশ করার কারণে রপ্তানির পর একাধিকবার বিদেশ থেকে এসব চিংড়ি ফেরত এসেছে। এর আগে আমরা দেখেছি রপ্তানির জন্য পাঠানো চিংড়িতে বিভিন্ন অপদ্রব্য থাকায় রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছিল। এই প্রবণতা বন্ধ না হলে বিদেশের বাজারে আমাদের দেশের সুনাম নষ্ট হবে। সে রকম কিছু যাতে আর না ঘটে, এটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কী করছে বা কী করা উচিত?
আমিনুল হক: আগেও বলেছি আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে। বাজার তদারক ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বাড়াতে হবে।